গর্ভপাতের অধিকার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বিক্ষোভ করছে মানুষ। গর্ভপাতে বিরোধী আইনের প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ দেশটির মানুষের অবস্থানকে আরও সুস্পষ্ট করে তুলেছে।
সূত্র মতে, ওয়াশিংটন ডিসিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের বিক্ষোভটি ছিল সবচেয়ে বড়। তাদের নানা স্লোগানের অন্যতম ছিল, ‘আমার শরীর, আমার পছন্দ।’ আরও স্লোগান লেখা ছিল ব্যানারগুলোতে: ‘নিজের জরায়ুর প্রতি মনোযোগ দিন’, ‘আমি এমন কাউকে ভালোবাসি, যার গর্ভপাত হয়েছিল’, ‘গর্ভপাত ব্যক্তিগত পছন্দ, আইনি বিতর্ক নয়’।
গর্ভপাতের ওপর বিধিনিষেধ বৃদ্ধির প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার নারী। সূত্র মতে, স্থানীয় সময় শনিবার যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গর্ভপাতের অধিকারের দাবিতে ৬৬০টি বিক্ষোভ হয়। এর মধ্যে ওয়াশিংটন ডিসিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের বিক্ষোভটি ছিল অন্যতম।
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে গর্ভপাতের বৈধতা দেওয়া ১৯৭৩ সালের একটি আইনের ওপর আগামী কয়েক মাসে শুনানি হবে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বিতর্কিত ওই আইনে পরিবর্তন আসতে পারে। তবে চূড়ান্ত রায় আসার অনেক আগেই দেশটির হাজার হাজার মানুষ গর্ভপাতের বৈধতার দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন।
নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে গভর্নর ক্যাথি হোচুল বলেন, ‘গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে লড়াই করতে করতে আমি অসুস্থ ও ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। গর্ভপাতের বৈধতার আইন দেশে প্রচলিত একটি আইন। কেউ তা আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারে না, আজ নয়, কোনোদিন নয়।’
নারীদের এই বিক্ষোভ শুরু সম্প্রতি টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে গর্ভপাতবিষয়ক পাস হওয়া একটি আইন ঘিরে। ওই আইনে কারও গর্ভধারণের সময় ছয় সপ্তাহের মতো হয়ে গেলে তাদের গর্ভপাত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গত মাস থেকে কার্যকর হয় ওই আইন। এটি যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতবিষয়ক সবচেয়ে কঠিন আইন।
সূত্র মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট টেক্সাসের ওই আইন, যা ঐ রাজ্যের বেশিরভাগ গর্ভপাত নিষিদ্ধ করে, তা বহাল রাখে। গর্ভপাত অধিকার গোষ্টীগুলো ঐ আইনটি কার্যকর না করার জন্য জরুরী ভিত্তিতে যে অনুরোধ করেছিল, সুপ্রিম কোর্ট তা ৫-৪ ভোটে প্রত্যাখান করে।
তথাকথিত এই ‘হার্টবিট অ্যাক্ট’ ছয় মাসের পর গর্ভপাত করানোর কারণে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য যেকোনো ব্যক্তিকে অধিকার দেয়।
দেশটির চিকিৎসক ও নারীদের অধিকার সুরক্ষায় কাজ করা গোষ্ঠীগুলো এই আইনের তীব্র সমালোচনা করেছে। যা দেশটির সবচেয়ে নিয়ন্ত্রণমূলক আইন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। গর্ভপাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এই আইনের বিরুদ্ধে আবেদন করলেও সুপ্রিম কোর্ট তা খারিজ করে দেন।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া অস্টিন নামের এক নারী বলেন, ‘আমার শরীরে কী করব বা কী করব না, এ বিষয়ে বয়স্কদের, রাজনীতিবিদদের সিদ্ধান্ত নেয়ার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। আমি মনে করি, কখন বাচ্চা নেবেন, কয়টা বাচ্চা নেবেন, কীভাবে নেবেন- এই অধিকার প্রত্যেক নারীর থাকা উচিত।’
বিচারপতি সোনিয়া সোটোমায়োর ভিন্নমত প্রকাশ করে লেখেন, ঐ আইনটি টেক্সাসের অন্তত ৮৫ শতাংশ গর্ভপাত রোগীর চিকিৎসা অবিলম্বে নিষিদ্ধ করেছে এবং এটা বিদ্যমান আইনের আওতায় সম্পূর্নভাবে অসাংবিধানিক।
নিজেদের অধিকার ফিরে পেতে এদিন ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভটি ছিল তাই বিশাল। সুপ্রিম কোর্টের আশপাশের সড়কগুলো ছিল পূর্ণ। গর্ভপাতবিরোধী আইনের সমালোচনামূলক বিভিন্ন ব্যানার ছিল নারীদের হাতে।
অনেককে পরতে দেখা যায় ‘১৯৭৩’ লেখা টি-শার্ট, যা মনে করিয়ে দেয় ১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের ‘রো বনাম ওয়েড’ নামের ঐতিহাসিক রায়ের বিষয়টি। যাতে আমেরিকান নারীদের গর্ভপাতে বৈধতা দেয়া হয়েছিল।
‘র্যালি ফর অ্যাবরশন জাস্টিস’ নামে এই বিক্ষোভে ‘প্ল্যানড প্যারেন্টহুড’-এর প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্সিস ম্যাকগিল জনসন বলেন, ‘আপনি কোথায় থাকেন, কোথায় আছেন, এটা কোনো ব্যাপার নয়। এটা অন্ধকার যুগ। আর এই কারণেই আমরা এখানে।’
বিক্ষোভে অংশ নেয়া অস্টিন নামের এক নারী বলেন, ‘আমার শরীরে কী করব বা কী করব না, এ বিষয়ে বয়স্কদের, রাজনীতিবিদদের সিদ্ধান্ত নেয়ার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, কখন বাচ্চা নেবেন, কয়টা বাচ্চা নেবেন, কীভাবে নেবেন- এই অধিকার প্রত্যেক নারীর থাকা উচিত।’
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১২৫১
আপনার মতামত জানানঃ