বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রের উষ্ণতা বাড়ার ফলে ক্রমেই ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। বিগত ২০ বছরে প্রতি স্কোয়ার মিটারে এক ওয়াটেরও কম সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়েছে। জিওফিজিক্যাল গবেষণাপত্র নামক এক জার্নালে এমনই তথ্য প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। খবর ইন্ডিয়া টুডে
সূর্যের আলো পৃথিবীতে প্রতিফলন হয়ে আলোকিত হয় চাঁদ। দেখা গেছে ২০ বছরে পৃথিবী থেকে সূর্যরশ্মির প্রত্যাবর্তনের পরিমাণ বা অ্যালবেডো তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমেছে। গত তিন বছরে যা সর্বোচ্চ।
মূলত পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে উজ্জ্বলতা বেশি কমেছে বলে জানিয়েছে নাসা।
বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর প্রতিফলন প্রায় ০.৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে সূর্যকিরণের মোট যত পরিমাণ তাপ পৃথিবীতে আসে তার মাত্র ৩০ শতাংশ রশ্মি পূথিবী প্রতিফলন করে।
গবেষকদের মতে, সূর্য থেকে আসা রশ্মির পরিমাণ নির্ভর করে মূলত দুটি বিষয়ের ওপর। সূর্যের উজ্জ্বলতা ও গ্রহের প্রতিফলন ক্ষমতা। কিন্তু পূথিবীর অ্যালবেডো কমায় উদ্বেগ দেখা দিচ্ছে। সূর্য থেকে আসা তাপের পরিমাণে হেরফের না হলেও কমেছে অ্যালবেডোর পরিমাণ। পৃথিবীতে জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন ও সমুদ্রের উষ্ণতাবৃদ্ধিই এর কারণ বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।
নিউ জার্সি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির গবেষক এবং গবেষণার প্রধান লেখক ফিলিপ গুড বলেন, “আলবেডো ড্রপ আমাদের কাছে একটি বিস্ময়কর বিষয় ছিল, কারণ আমরা গত ১৭ বছর পৃথিবী থেকে সূর্যরশ্মির প্রত্যাবর্তনের পরিমানে খুব বেশি হেরফের দেখিনি, কিন্তু গত ৩ বছরে তা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।”
নিজের বক্তব্যের স্বপক্ষে গুড দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বিগ বিয়ার সোলার অবজারভেটরি দ্বারা সংগৃহীত ১৯৯৮ থেকে ২০১৭ সালের আর্থশাইন ডেটার কথা উল্লেখ করেছিলেন।
গবেষকরা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, পৃথিবীর উজ্জ্বলতা হারানোর প্রবণতা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। গবেষকদের মতে, সূর্য থেকে আসা রশ্মির পরিমাণ নির্ভর করে মূলত দুটি বিষয়ের উপর। সূর্যের উজ্জ্বলতা ও গ্রহের প্রতিফলন ক্ষমতা। গবেষকরা পর্যবেক্ষণ করেছেন পৃথিবীর আলবেডোতে পরিবর্তনগুলি সূর্যের উজ্জ্বলতার পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়, অর্থাৎ পৃথিবীর প্রতিফলনশীলতার ক্ষমতা কমে যাওয়াতেই এই গ্রহ ক্রমেই ফিকে হতে শুরু করেছে।
নাসার ক্লাউডস এবং পৃথিবীর রেডিয়েন্ট এনার্জি সিস্টেম (সিইআরইএস) প্রকল্পের অংশ হিসেবে তৈরি স্যাটেলাইট পরিমাপ অনুযায়ী সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে উজ্জ্বল, প্রতিফলনকারী মেঘরাশির পরিমান হ্রাস পেয়েছে। পৃথিবীতে জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন ও সমুদ্রের উষ্ণতাবৃদ্ধিই এর কারণ বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহ বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড শুইটম্যান বলেন, “এটি আসলে যথেষ্ট উদ্বেগজনক একটি ঘটনা, পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি এই গ্রহকে সমূহ বিপদের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, উন্নত দেশগুলো অর্থনৈতিক উন্নয়নের নামে যেভাবে প্রকৃতির সঙ্গে যথেচ্ছাচার করেছে, তাতে প্রকৃতি রুষ্ট হয়ে উঠেছে। কারণ, প্রকৃতি একটি জীবন্ত সত্তা, তাকে শুধু সম্পদ লাভের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। অথচ এ বিষয়টিকে আমলে না নিয়ে উন্নত দেশগুলো নিজেদের তথাকথিত উন্নয়নের স্বার্থে জলবায়ু তহবিল, কার্বন ট্রেড প্রভৃতি তৈরি করে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে টোপ দিয়ে যাচ্ছে।
তারা বলেন, জলবায়ু সম্মেলনগুলোর মূল সুরে সমস্যা সমাধানের কোনো ব্যাপার থাকে না। কারণ, এর মধ্য দিয়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। কিন্তু এমন একটা ভাব করা হয় যে সমস্যাটি আমলে নেওয়া হয়েছে। কথা হচ্ছে, দুনিয়ার উন্নয়নের মডেল যেন প্রকৃতির ওপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা না করে প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন থামানো বা এর গতিকে ধীর করে দেওয়ার জন্য অনেক কথাবার্তা হয়েছে। কিন্তু তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কথাবার্তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আসছে নভেম্বরে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত হবে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (কপ–২৬)। এই সম্মেলনেও আগের ধারাবাহিকতা চালু থাকবে। আলাদাভাবে প্রতিটি দেশ এমন একটা পথ বের করার ওপর জোর দেবে, যাতে করে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে একটি স্বেচ্ছাসেবামূলক প্রতিশ্রুতি তারা দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই প্রতিবেদন মানবজাতির জন্য সর্বোচ্চ সতর্কবার্তা। মানবগ্রহকে রক্ষায় বৈশ্বিক তাপমাত্রা এখনই কমাতে হবে, হাতে একদিনও সময় নেই। না হলে বিপন্নতার মুখে পড়বে সভ্যতা ও পৃথিবী।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১৫৩
আপনার মতামত জানানঃ