নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা সংগঠন সার্ক সদস্য দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি বৈঠক বাতিল হয়েছে। আগামী শনিবার এই বৈঠকের কথা ছিলো। বিশ্বাসযোগ্য সূত্রের বরাতে ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, পাকিস্তান চেয়েছিলো সার্ক বৈঠকে আফগানিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করুক তালিবান। তবে ভারতসহ কয়েকটি সদস্য দেশ ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। ফলে ঐক্যমত বা সম্মতির অভাবে বৈঠকটি বাতিল হয়ে গেছে।
নিউ ইয়র্কে সার্ক গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল ২৫ সেপ্টেম্বর। পাকিস্তান দাবি তোলে এই বৈঠকে তালিবানকে অংশ নিতে দিতে হবে। আশরাফ গনির সময়কার আফগান প্রতিনিধি যেন অংশ না নেন। তা নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছতে পারেনি সদস্য দেশগুলো। তাই সার্ক বৈঠক বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদসংস্থা এএনআই। তবে এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়নি।
বৈঠকটির আয়োজক ছিলো নেপাল। প্রতিবছর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের পার্শ্ববৈঠক হিসেবে সার্ক সদস্যদের বৈঠক হয়ে থাকে।
তালিবানকে এখনও স্বীকৃতি দেয়নি ভারত। কাবুলের নতুন শাসকদের এখনও বিশ্ব স্বীকৃতি মেলেনি। আর তালিবান মন্ত্রিসভার কয়েক সদস্য এখনও জাতিসংঘের নিষিদ্ধ তালিকায় রয়েছেন।
হিন্দুস্তান টাইমসের রিপোর্ট বলছে, এখন সার্কের চেয়ারম্যান নেপালের তরফ থেকে বাকি সদস্য দেশের সাথে আফগানিস্তান ও তালিবানের প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু সার্ক দেশগুলো এই বিষয়ে একমত হতে পারেনি। তাই বৈঠক বাতিল করা হবে। সচিবালয়ের তরফ থেকে সদস্য দেশগুলোকে চিঠিও দেয়া হচ্ছে।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিয়াটুডে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের পরপরই সার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এ বছর নেপাল ছিল এই বৈঠকের আয়োজক দেশ। সার্কের বেশিরভাগ সদস্য দেশ চেয়েছিল এবারের বৈঠকে আফগানিস্তানের আসনটি খালি রাখতে। কিন্তু এতে আপত্তি জানায় পাকিস্তান। পাকিস্তান চাইছে সার্ক এর বৈঠকে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী তালিবানরা আফগানিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করুক। তবে ভারতসহ কয়েকটি সদস্য দেশ পাকিস্তানের এমন প্রস্তাবে আপত্তি জানায়। ফলে শেষ পর্যন্ত বৈঠকটি বাতিল হয়ে যায়।
সংবাদ সংস্থা এএনআই তাদের প্রতিবেদনে বলছে, বাকি সদস্য দেশের সঙ্গে আফগানিস্তান ও তালিবানের প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে সার্কের চেয়ারম্যান নেপাল। কিন্তু সার্ক দেশগুলো এই বিষয়ে একমত হতে পারেনি। তাই বৈঠক বাতিল করা হয়েছে। পাকিস্তানের দাবি ছিল, তালিবানের প্রতিনিধিকে সার্ক বৈঠকে অংশ নিতে দিতে হবে। আর তাদের প্রতিনিধি যে বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন নেপালকে সেটির নিশ্চয়তা দিতে হবে। ভারতসহ কয়েকটি দেশ তালিবানের প্রতিনিধির অংশগ্রহণের বিপক্ষে ছিল। তখন আফগানিস্তানের চেয়ার ফাঁকা রাখার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পাকিস্তান সে প্রস্তাবে রাজি হয়নি।
পাকিস্তান চেয়েছিলো সার্ক বৈঠকে আফগানিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করুক তালিবান। তবে ভারতসহ কয়েকটি সদস্য দেশ ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। ফলে ঐক্যমত বা সম্মতির অভাবে বৈঠকটি বাতিল হয়ে গেছে।
এমনিতেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের উত্তেজনার কারণে আগে সার্ক বৈঠক বাতিল হয়েছে। সেই উত্তেজনা এখনো আছে। কিন্তু এবার প্রশ্ন দেখা দিয়েছে আফগানিস্তান নিয়ে। তালিবান এখন আফগানিস্তান দখলে নিয়েছে। কিন্তু তারা বিশ্বের অধিকাংশ দেশের স্বীকৃতি পায়নি। ভারত আবার তালিবানের শাসন বৈধ কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
পাকিস্তানের দাবি ছিল, তালিবানের প্রতিনিধিকে সার্ক বৈঠকে অংশ নিতে দিতে হবে। আর তাদের প্রতিনিধি যে বৈঠকে থাকবেন নেপালকে তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। কিন্তু নেপাল সেই নিশ্চয়তা দিতে রাজি হয়নি। ভারতসহ কয়েকটি দেশ তালিবানের প্রতিনিধির অংশগ্রহণের বিপক্ষে ছিল। তখন একটি প্রস্তাব আসে, আফগানিস্তানের চেয়ার ফাঁকা রাখা হবে। কিন্তু পাকিস্তান সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। তাই বৈঠক বাতিল করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকছে না।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশসহ সাতটি সদস্য দেশ নিয়ে যাত্রা শুরু করা সার্কের বর্তমান সদস্য সংখ্যা আটটি। ২০০৭ সালে আফগানিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে সার্কে যোগ দেয়। সার্কের কার্যক্রম পরিচালিত হয় নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুতে অবস্থিত সার্ক সচিবালয়ের মাধ্যমে। সার্কের আটটি সদস্য দেশ হলো— বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তান।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি পুরো আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া তালিবান গোষ্ঠী সরকার গঠন করলেও এখনও কোনো দেশই সেই সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। এ মাসের শুরুর দিকে তালিবান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার ঘোষণা দেয়।
জাতিসংঘে কথা বলতে চায় তালিবান
গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শুরু হয়েছে। যা চলবে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এতে যোগ দিয়ে কথা বলতে চায় আফগানিস্তানের তালিবান সরকার। সে লক্ষ্যে জাতিসংঘকে একটি চিঠি দিয়েছে সংগঠনটি।
জানা যায়, মঙ্গলবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফানে ডুজারিখ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করে তালিবান। এরপর তারা দেশটিতে নতুন সরকার গঠন করেছে। তালিবানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন আমির খান মুত্তাকি। তিনি চিঠি পাঠিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের এ সম্মেলনে অংশ নিতে চায় তালিবান।
জাতিসংঘের মুখপাত্র মঙ্গলবার জানিয়েছেন, তালিবান সাধারণ পরিষদের বৈঠকে বলতে চেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তালিবান যে এই অনুরোধ করেছে তা তারা জানে।
তবে জাতিসংঘের ক্রেডেনশিয়াল কমিটি এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। আর আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে কমিটির কিছুটা সময় লাগবে।
ডয়েচ ভেলে এক প্রতিবেদনে জানায়, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইঙ্গিত স্পষ্ট। তালিবান চাইলেও এই বৈঠকে তাদের বলার সম্ভাবনা কম। কমিটিতে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীনসহ নয়টি দেশ আছে। সোমবার সাধারণ পরিষদের বৈঠক শেষ হচ্ছে। তার আগে কমিটির বসার সম্ভাবনা কম।
তালিবান ইতিমধ্যেই তাদের দোহা ভিত্তিক মুখপাত্র সুহেইল শাহিনকে জাতিসংঘের দূত হিসেবে মনোনীত করেছে। কিন্তু জাতিসংঘের নিয়ম হলো, কমিটি যত দিন সিদ্ধান্ত না নিচ্ছে, তত দিন পুরোনো দূতই বহাল থাকবেন। তাই আশরাফ গনির আমলে নিযুক্ত আফগানিস্তানের দূতই আগামী সোমবার বলবেন। যদিও তালিবান জানিয়ে দিয়েছে, আশরাফ গনির আমলে নিযুক্ত দূত আর আফগানিস্তানের প্রতিনিধি নন।
এ দিকে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি সাধারণ পরিষদের বৈঠকে বলেছেন, বিশ্বের অন্য দেশগুলো যেন তালিবানের সঙ্গে আলোচনা করে। তার মতে, ‘বয়কট করে কোনো লাভ হবে না। তাতে মেরুকরণ হবে। তার প্রতিক্রিয়া হবে। কিন্তু কোনো ইতিবাচক ফল হবে না।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৩৮
আপনার মতামত জানানঃ