দীর্ঘদিনের যুদ্ধ-সংঘাত আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থাকে সঙ্কটময় করে তুলেছে। এর মধ্যে আবার আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাড়ে ৯০০ কোটি ডলার জব্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে উঠেছে।
গত ১৫ আগস্ট তালিবান দেশটির ক্ষমতা নেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র এমন পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে নিজ দেশের হাজার কোটি ডলার নিজেদের কাজে ব্যবহার করতে পারছে না তালিবানরা।
তালিবান শাসনের হাত থেকে পালাতে কিংবা শুধুমাত্র খেয়েপরে বেঁচে থাকার সম্বল যোগাড় করতে নিজেদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র বিক্রি করে দিচ্ছেন আফগানরা। ফলে, কাবুলের রাস্তা এখন খোলাবাজারে পরিণত হয়েছে।
শত শত মানুষ ফ্রিজ, কুশন, পাখা, বালিশ, কম্বল, রুপার জিনিস, পর্দা, বিছানা, ম্যাট্রেস, রান্নাঘরের জিনিসপত্র, শেলফ বিক্রি করার জন্য নিয়ে এসেছেন।
রাজধানী কাবুলের চামান-ই-হোযোরি এলাকায় চারটি কার্পেট নিয়ে বিক্রির অপেক্ষায় শুকরুল্লাহ নামের এক আফগান নাগরিক। ওই এলাকায় তার মতো অনেকেই টাকার জন্য নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অন্যের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন।
কার্পেট, রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন সেট থেকে শুরু করে হরেক রকমের পণ্য কাবুলের চামান-ই-হোযোরি উদ্যানে যাওয়ার পথে মিলবে। অর্থাভাবে মরিয়া শত শত আফগান এসে ভিড় করেছেন সেখানে।
আফগানদের ভাষ্যে, বহু দামি জিনিস এখন তারা পানির দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন। লাল গুল নামক একজন দোকানদার তোলো নিউজকে জানান, এক লাখ আফগানি (আফগানিস্তানের মুদ্রা) মূল্যের গৃহস্থালি পণ্য এখন ২০,০০০ আফগানিতে বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন “আমি আমার কিছু জিনিস বাজারমূল্যের অর্ধেকের কমে বিক্রি করেছি। আমি ২৫,০০০ আফগানি দিয়ে একটি ফ্রিজ কিনেছিলাম, কিন্তু সেটি বিক্রি করেছি মাত্র ৫০০০ আফগানির বিনিময়ে। আমাদের আর কোনো উপায় নেই। কি করবো আমি? আমার সন্তানদের রাতে খাবার দরকার।”
সাবেক পুলিশ অফিসার, মোহাম্মদ আগা আফগানিস্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে কথা বলেন। গত দশদিন ধরে তিনি কাবুলের এই খোলাবাজারে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, “তারা আমার বেতন দেয়নি। এখন আমার কোনো চাকরি নেই। আমি এখন কি করবো?”
মোহাম্মদ আগার মতো করুণ পরিস্থিতি আরও অনেকের। কাবুলের বাসিন্দা, মেরাজুদ্দিন বলেন, “আমি একজন ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনিয়ার। আমার ছেলে ভূতত্ত্ব অনুষদ থেকে পাশ করেছে। এখন আমরা দুজনেই বেকার। আমরা এখানে এসেছি নিজেদের জিনিসপত্র বিক্রি করে সেই টাকায় খাবার কিনতে। কারণ আমাদের একটা পরিবার আছে।”
গত সপ্তাহে জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, ২০২২ সালের মাঝামাঝি নাগাদ দারিদ্র্য সীমার নিচে অবস্থান করতে পারে দেশটির ৯৭ ভাগ মানুষ। আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতা দখলের পর থেকে খাদ্য সংকটের কারণে মানবিক বিপর্যয় শুরু হয়েছে।
যদিও এর আগে থেকেই মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই সাহায্যের উপর নির্ভরশীল ছিল। খরা, নগদ অর্থ এবং খাদ্য সংকটের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে জাতিসংঘের কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার প্রতিনিধিরা সতর্ক করেছেন।
দেশটিতে মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলায় ৬০ কোটি মার্কিন ডলারের তহবিল সংগ্রহ করতে চায় জাতিসংঘ। পশ্চিমা সমর্থিত সরকারের হঠাৎ পতনের কারণে দেশটিতে বিলিয়ন ডলারের সহায়তা বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে জাতিসংঘ পরিচালিত কর্মসূচর উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেন, আফগানিস্তানে জাতিসংঘ অর্থ সঙ্কটে পড়েছে। এমনকি তারা নিজেদের কর্মীদের বেতনও দিতে পারছেন না।
জেনেভার সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব, আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের প্রধান এবং জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস ছাড়াও বেশ কিছু দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করছেন। জাতিসংঘ যে তহবিল সংগ্রহ করতে চায় তার তিন ভাগের একভাগ ব্যয় করা হবে জাতিসংঘ পরিচালিত বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির অধীনে।
এদিকে, জাতিসংঘের আহ্বানে পর বিভিন্ন দাতা দেশগুলো সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে সাড়া দিয়েছে। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ ১০০ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সম্প্রতি জেনেভায় দাতা দেশগুলোর সঙ্গে এক বৈঠকে অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেন, জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন দেশ কী পরিমাণ অর্থ সহায়তা দেবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৫৫৬
আপনার মতামত জানানঃ