গতকাল বুধবার হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ছয় ফিলিস্তিনিকে খুঁজে বের করতে না পেরে তাদের ছয় আত্মীয়কে তুলে নিয়ে গেছে বর্বর ইসরায়েলি সেনারা। প্রসঙ্গত, ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় গিলবোয়া কারাগার থেকে সোমবার সুড়ঙ্গ বানিয়ে পালিয়ে যান ছয় ফিলিস্তিনি বন্দি।
সূত্র মতে, বন্দিরা পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের খুঁজে বের করতে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ড্রোন মোতায়েন করেছে, বসিয়েছে চেক পয়েন্ট। এমনকি জেনিন শহরে সেনা অভিযানও চালানো হয়েছে। কিন্তু পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের খুঁজে বের করতে পারেনি তারা।
তাই বুধবার ইসরায়েলি সেনারা পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের পরিবারের ৬ সদস্যকে মাফিয়া কায়দায় তুলে আনে। এদের মধ্যে ছিলেন মাহমুদ আরদাহর দুই ভাই ও আত্মীয় ড. নিদাল আরদাহ, পালিয়ে যাওয়া অন্য এক বন্দির দুই ভাই এবং বন্দি মুনাদেল ইনফিয়াতের বাবা।
এদিকে ইসরায়েলের এমন কর্মকাণ্ডে পশ্চিমতীরে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের পরিচালক ওমর শাকির বলেন, কাউকে কিছু করতে বাধ্য করার ক্ষেত্রে তার আত্মীয়কে জিম্মি করে রাখা মাফিয়াদের কৌশল।
অর্থডক্স বিশপ আতাল্লাহ হান্না বলেন, পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের আত্মীয়দের ধরে নিয়ে যাওয়া বর্বরতা ছাড়া আর কিছু নয়।
এদিকে ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ শতায়েহ বলেন, প্রত্যেক ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি পাওয়ার অধিকার রয়েছে। যারা ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি তাদের সবাইকে মুক্তি দেওয়া হোক।
হাইফার ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর কনসালটেশনের পরিচালক ওয়াদি আবু নাসের বলেন, এমন ঘটনা ঘটতে পারে এটা আগে থেকেই অনুমান করা হচ্ছিল। ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী চাইছে যেভাবেই হোক পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের আবার ধরতে। সে জন্য তারা ভেবেছে, তাদের আত্মীয়দের ধরলে তাদের কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, ইসরায়েলের অন্যতম নিরাপদ জেলখানা থেকে ছয় ফিলিস্তিনি বন্দি পালিয়ে যাওয়ার পর ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক মাস ধরে তারা সেল থেকে একটি সুড়ঙ্গ খুঁড়ে আসছিল। যা গিলবোয়া কারাগারের দেয়ালের বাইরে একটি রাস্তায় গিয়ে মিলেছে।
গত সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি। বন্দিদের মধ্যে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন আল-আকসা মার্টার্স ব্রিগেডের একজন সাবেক নেতা জাকারিয়া জুবেইদি এবং ইসলামিক জিহাদের পাঁচ জন সদস্য রয়েছেন। তাদের পাঁচজনই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ভোগ করছিলেন। হত্যাপ্রচেষ্টাসহ প্রায় দুই ডজন মামলায় জুবেইদির বিচার চলছিল।
স্থানীয় কৃষকরা গিলবোয়া কারাগারের নিকটবর্তী ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে “কিছু সন্দেহজনক লোককে” দৌড়াতে দেখে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করার পর এ ঘটনার কথা জানা যায়। এরপর কারা কর্মকর্তারা মঙ্গলবার ভোর চারটায় বন্দিদের গুণে দেখতে পান যে ছয় ব্যক্তিকে পাওয়া যাচ্ছে না।
পুলিশের মুখপাত্র এলি লেভি বলেন, “ওইদিন রাতে আমরা কৃষি ক্ষেত্র এবং কারাগারের পরিষেবা থেকে সন্দেহজনক বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন পাই। পরবর্তীতে আমরা দ্রুতই জানতে পারি যে, কারাগার থেকে ছয় জন পালিয়েছে। আমাদের লক্ষ্য তাদের ধরা এবং গ্রেপ্তার করা। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের ইসরায়েলে থাকার সম্ভাবনা আছে, এই তৎপরতা চালিয়ে যাওয়া হবে।”
ইসরায়েলি সংবাদ সংস্থা জেরুজালেম পোস্ট জানিয়েছে, ইসরায়েল পুলিশ, শিন বেট (ইসরায়েলের নিরাপত্তা সংস্থা), সীমান্ত পুলিশ এবং ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সৈন্য এবং বিশেষ বাহিনী এই অভিযানে অংশ নিচ্ছে। পশ্চিম তীরে ও গাজা উপত্যকায় রাস্তা অবরোধ করে রাখা হয়েছে। ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে, তাদেরকে খুঁজে বের করতে ড্রোন ও হেলিকপ্টারও ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী কুকুর ও বিমান সহায়তার মতো বিশেষ ইউনিটগুলিও অনুসন্ধানে ব্যবহার করছে। ইসরায়েল কারাগারের একজন কর্মকর্তা এই ঘটনাকে “একটি বড় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা ব্যর্থতা” বলে বর্ণনা করেছেন।
ইসরায়েলের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে একটি সুড়ঙ্গের প্রবেশপথের ফটো এবং ভিডিও দেখা যাচ্ছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, কারাগারের কর্মকর্তারা সিঙ্কের নীচে একটি ছোট গর্ত পরীক্ষা করছেন। জেরুজালেম পোস্ট জানিয়েছে, বন্দিরা গর্ত করতে একটি চামচ ব্যবহার করেছিল। চামচটি তারা একটি পোস্টারের পিছনে লুকিয়ে রেখেছিল।
ইসরায়েলের এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পালিয়ে যাওয়া ছয় জন কয়েদি উচ্চ নিরাপত্তা বেষ্টিত কারাগারে ছিলেন এবং তাদের সবাই ইসরায়েলে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছিলেন।
ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠী এ ঘটনাকে বীরোচিত বলে আখ্যায়িত করে বলেছে, এটা ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে হতবাক করে দেবে। আর হামাসের একজন মুখপাত্র ফাওজি বারহুম বলেছেন, এ এক মহান বিজয় যা প্রমাণ করে যে “ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি আমাদের সাহসী সৈনিকদের ইচ্ছা ও সংকল্পকে পরাভূত করা যাবে না।”
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৯০১
আপনার মতামত জানানঃ