আফগানিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণা করেছে তালিবান। এতে মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দকে প্রধান করা হয়েছে। এরপরই সেখানে ইসলামি আইন ও শরিয়া বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দিয়েছেন তালিবানের শীর্ষ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুনদজাদা। গতকাল মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) ইংরেজিতে লেখা এক বিবৃতিতে দায়িত্বশীলদের দেশের সর্বোচ্চ স্বার্থ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নতি নিশ্চিত করতে আহ্বান জানিয়েছেন।
তালিবান দেশটির ক্ষমতায় আসার পর গোষ্ঠীটির শীর্ষ নেতার কাছ থেকে এই প্রথম কোনো বিবৃতি এসেছে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষা ব্যবস্থার পর্যবেক্ষণ করে সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে শারিয়ার কাঠামোর মধ্যে থেকে দেশের সব মানুষের আধুনিক বিজ্ঞান ও ধর্মের ওপর ভিত্তি করে একটি স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা।’
যদিও তালিবানের নিয়ন্ত্রণে নারী ও শিশুদের শিক্ষা এবং স্বাধীনতা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তালিবানের গত শাসনামলে লেখাপড়ার জন্য পুরুষ অভিভাবক ছাড়া নারীদের বাইরে বের হতে দেওয়া হতো না। এছাড়া নারী শিক্ষাও দেশটিতে নিষিদ্ধ ছিল।
আফগানিস্তানে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করেছে তালিবান। এছাড়া দেশটিকে ইসলামি আমিরাতও ঘোষণা করেছে তারা। সরকারপ্রধান করা হয়েছে জাতিসংঘের কালোতালিকাভুক্ত ও তালিবানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুনদকে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছে মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের হন্যে হয়ে খোঁজা হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান সিরাজউদ্দিন হাক্কানি। গত দুই দশকে তালিবানের সবচেয়ে প্রাণঘাতি হামলাগুলোর জন্য দায়ী করা হচ্ছে হাক্কানি নেটওয়ার্ককে।
যার মধ্যে ২০১৭ সালে একটি ট্রাক বোমা বিস্ফোরণও রয়েছে। ওই হামলায় ১৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। হাক্কানি নেটওয়ার্ককে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। আল-কায়েদার সঙ্গেও এই নেটওয়ার্কের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রিসভা গঠনের এই ঘোষণা তালিবানের সরকার গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সরকারকে শরিয়া আইন বাস্তবায়ন করতে বলেছে তালিবানের শীর্ষ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুনদজাদা।
এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পারস্পরিক মর্যাদা ও সংলাপের মাধ্যমে প্রতিবেশীসহ অন্যান্য সব দেশের সঙ্গে জোরালো ও উন্নত সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় তালিবান। এতে কেবল শর্ত থাকবে যে ইসলামিক আইন ও জাতীয় মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না; এমন আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তির প্রতি সম্মান দেখাবে তারা।
এর আগে তালিবান বলেছে, তারা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন করতে চায়। কিন্তু মঙ্গলবার (৭ আগস্ট) যে সরকার গঠন করা হয়েছে, তাদের সবাই তালিবান নেতা।
আফগানিস্তানে তালিবানী শাসনের শরীয়া আইন নিয়ে ইন্ডিয়া টুডে’র একটি ভিডিও রিপোর্ট
উল্লেখ্য, মোল্লা হাসান আখুনদ এর আগের ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালিবান সরকারের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এফবিআইয়ের পরিচিতি অনুসারে, ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে কাবুলের একটি হামলার জন্য জেরা করতে তাকে খোঁজা হচ্ছে। ওই হামলায় এক মার্কিন নাগরিকসহ ছয় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছিলেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শরিয়া আইনে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি আগের মত হবার সম্ভবনা আছে। এতে করে নারী স্বাধীনতা আবারও হুমকির মুখে পড়ার তীব্র আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে বলে মনে করছেন তারা। এদিকে জাতিসংঘের কালো তালিকা ভুক্ত তালিবানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুনদকে সরকার প্রধান এবং মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের হন্যে হয়ে খোঁজা হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান সিরাজউদ্দিন হাক্কানিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করার পর আফগানের সামাজিক অবস্থার উন্নতি আশা করা প্রায় দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৩৩৯
আপনার মতামত জানানঃ