ভারতের রাজধানী দিল্লির চাঁদনী চকে অবস্থিত লাল কেল্লা থেকে রাজ্য বিধানসভা পর্যন্ত গভীর সুড়ঙ্গের সন্ধান পাওয়া গেছে। বিধানসভার মতো এত নিরাপত্তাবেষ্টিত জায়গায় সুড়ঙ্গ পাওয়া যেতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। অবশ্য এটির কথা বহু দিন থেকে শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু এতদিন হদিস মিলছিল না। তন্ন তন্ন করে সন্ধানের পর বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) খোঁজ মিলল সেই রহস্যময় সুড়ঙ্গের।
এনডিটিভি ও আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুড়ঙ্গটির দৈর্ঘ্য পাঁচ কিলোমিটার বলে অনুমান করা হচ্ছে। কারণ, দিল্লি বিধানসভা থেকে লাল কেল্লার দূরত্ব এটাই। দিল্লি বিধানসভার একটি ঘরে প্রথম সুড়ঙ্গটির মুখের খোঁজ মেলে।কৃত্রিম সবুজ ঘাসের কার্পেট কেটে উদ্ধার সুড়ঙ্গের লোহার দরজা সরাতেই দেখা মেলে গভীর সুড়ঙ্গের!
ইতিহাসবিদরা বলছেন, প্রায় ১০০ বছর আগে সুড়ঙ্গটি তৈরি করা হয়েছিল বলে ধারণা। দীর্ঘদিন কোনো ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াই এটি পড়ে ছিল। ফলে এটি কী অবস্থায় রয়েছে কিংবা আদৌ যাতায়াতের উপযুক্ত কি-না, তা বলা যাচ্ছে না। তবে এর সঙ্গে ব্রিটিশ-যোগসূত্র থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
১৯১২ সালে কলকাতা থেকে দিল্লিতে রাজধানী স্থানান্তরিত করা হয়। বর্তমানের বিধানসভা ভবনটি ১৯২৬ সালে আদালত হিসেবে ব্যবহার করতো সরকার। তখনই সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়েছিল বলে অনুমান করছেন ইতিহাসবিদরা। বন্দি বিপ্লবীদের আদালতে নিয়ে আসার জন্য এই পথ ব্যবহার করতেন ব্রিটিশ সেনারা। ফলে কেউ পালানোর সুযোগ পেতেন না। সুড়ঙ্গপথে আবার বন্দিদের থাকার ঘরও রয়েছে বলে অনুমান ইতিহাসবিদদের। যদিও সেই ঘর পর্যন্ত এখনো পৌঁছনো যায়নি। সবেমাত্র সুড়ঙ্গের মুখের সন্ধান মিলেছে।
দিল্লি বিধানসভার স্পিকার রামনিবাস গোয়েল জানিয়েছেন, সুড়ঙ্গের ভেতরে কিছুটা যাওয়ার পর আর রাস্তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, বিভিন্ন উন্নয়ণমূলক কাজের জন্য এটির পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এটির পুরোটা পথ দেখতে হলে অনেক খোঁড়াখুড়ি করতে হবে।
১৯১২ সালে কলকাতা থেকে দিল্লিতে রাজধানী স্থানান্তরিত করা হয়। বর্তমানের বিধানসভা ভবনটি ১৯২৬ সালে আদালত হিসেবে ব্যবহার করতো সরকার। তখনই সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়েছিল বলে অনুমান করছেন ইতিহাসবিদরা। বন্দি বিপ্লবীদের আদালতে নিয়ে আসার জন্য এই পথ ব্যবহার করতেন ব্রিটিশ সেনারা। ফলে কেউ পালানোর সুযোগ পেতেন না।
রামনিবাস গোয়েল আরও জানান, বিধায়ক হিসাবে ১৯৯৩ সালে তিনি প্রথমবার দিল্লি বিধানসভায় পা রেখেছিলেন। সেই সময় থেকেই তিনি একটি সুড়ঙ্গ নিয়ে গুজব শুনেছিলেন। শুনেছিলেন, বিধানসভার নিচে একটি সুড়ঙ্গ রয়েছে, যেটি লালকেল্লা পর্যন্ত যায়। তিনি সেই গুজব মিলিয়ে দেখার জন্য সুড়ঙ্গটির ইতিহাস জানার চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু এই সম্পর্কে কোনও স্পষ্ট তথ্য পাননি। শেষ পর্যন্ত সেই সুড়ঙ্গ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে বৃহস্পতিবার। তবে টানেলটির মুখটা খুঁজে পাওয়া গেলেও, সেটিকে আর খনন করা হবে না। কারণ, দিল্লি মেট্রো প্রকল্প এবং নর্দমা নির্মাণের কারণে, অধিকাংশ সুড়ঙ্গপথটিই আর নেই, ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
রামনিবাস গোয়েল আরও জানান যে, ১৯১২ সালে ব্রিটিশদের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরের পর দিল্লি বিধানসভাকে ১৯২৬ সালে আদালতে পরিণত করা হয়েছিল, যা আগে কেন্দ্রীয় আইনসভা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ব্রিটিশরা এই সুড়ঙ্গ ব্যবহার করেই মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ওই আদালতে নিয়ে আসতো।
তিনি বলেন, আমরা সবাই এখানে একটি ফাঁসির কক্ষের উপস্থিতি সম্পর্কে জানতাম কিন্তু তা কখনোই খুলিনি। এখন স্বাধীনতার ৭৫তম বছরে আমি সেই কক্ষটি পরিদর্শন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা সেই কক্ষটিকে ভারতীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মাজারে পরিণত করতে চাই।
সুড়ঙ্গটি চলাচলের যোগ্য করা যাবে কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এটি এখনো নিশ্চিত নয়। তবে ইতিহাসের সাক্ষী হওয়ার সুযোগ সাধারণ মানুষকে দেওয়া হবে। শিগগিরই এটির কিছু অংশ মেরামত করে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের ১৫ আগস্ট থেকে দর্শণার্থীরা সুড়ঙ্গে প্রবেশের অনুমতি পাবে।
শুধু এই সুড়ঙ্গটিই নয়, বিধানসভা চত্ত্বরে একটি ফাঁসি দেওয়ার কক্ষও রয়েছে। যার অস্তিত্ব সম্পর্কে সকলেই জানলেও, এতদিন সেটি বন্ধই ছিল। স্বাধীনতার ৭৫তম বছরে সেই কক্ষটি খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, বিধানসভার পক্ষ থেকে সেই কক্ষটিকে সম্মানিত করা হবে।
স্পিকার রামনিবাস গোয়েল বলেছেন, তিনি চান ওই কক্ষটি স্বাধীনতা যোদ্ধাদের মন্দিরে পরিণত হোক। আগামী স্বাধীনতা দিবসের মধ্যেই সেটি পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এর জন্য ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে এই স্থানটির একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। পর্যটক এবং দর্শনার্থীরা যাতে আমাদের ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি দেখতে পারে সেভাবেই আমরা এটিকে সংস্কার করতে চাই।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮১৫
আপনার মতামত জানানঃ