জুলাই মাসের পর এবার এই সেপ্টেম্বরে আবারও সৌর ঝড়ের মুখোমুখি পৃথিবী। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষক সঙ্গীতা আবদু জ্যোতি, আরভিন এবং ভিএমওয়্যার রিসার্চের প্রকাশিত একটি নতুন রিপোর্ট অনুসারে, যদি এই বৃহৎ সৌর ঝড় হয় তবে এটি গোটা পৃথিবীতে ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের কারণ হতে পারে।
সূত্র মতে, এই সৌর ঝড়ের প্রভাবে তছনছ হয়ে যেতে পারে গোটা পৃথিবীর ইন্টারনেট পরিষেবা। স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে যাবতীয় কাজকর্ম। বিশেষজ্ঞদের ভাষায় যা ‘ইন্টারনেট এপোক্যালিপস’ হিসেবে পরিচিত।
সঙ্গীতা আবদু জ্যোতি তার গবেষণায় জানিয়েছেন যে স্থানীয় এবং আঞ্চলিক ইন্টারনেট পরিষেবা এই সৌর ঝড়ের সময় চরম ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। পরিষেবায় স্থায়ী কোনও ক্ষতিও হতে পারে এর ফলে।
তিনি বলেন, বিশ্ব এখনও এতো বড় সৌর ঝড় মোকাবিলা করতে প্রস্তুত নয়। এই ঝড়ের কারণে সমুদ্রের তলা দিয়ে যেই অপটিক ফাইবার বিছানো রয়েছে তা অফলাইন হয়ে ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
উল্লেখ্য, ইন্টারনেট পরিষেবার ক্ষেত্রে সাধারণত ফাইবার অপটিক ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও ক্ষতি হতে পারে মহাদেশগুলিকে সংযুক্ত করে এমন আন্ডারসি ক্যাবলগুলিরও। কারণ সেগুলিও ফাইবার অপটিক তারের মাধ্যমে যুক্ত।
গবেষণায় বলা হয়, যদি নেটওয়ার্কের রিপিটারগুলি অফলাইনে চলে যায়, তাহলে সেই ঘটনা ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট তৈরি করার জন্য যথেষ্ট। সমস্যায় পড়তে পারে সেই সব দেশ, যারা শুধু আন্ডারসি ক্যাবল থেকে আসা ইন্টারনেটের উপর নির্ভর করে।
এই সৌর ঝড় মূলত সূর্যের বায়ুমন্ডল থেকে সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবীর চৌম্বকীয় শক্তির ক্ষেত্রের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শক্তি বৃদ্ধি করছে ক্রমশ। ফলে পৃথিবীর ওপর এর প্রভাব মারাত্মক ভাবে পড়বে।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল অ্যারোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা নাসার মতে, সৌর বাতাস হল চার্জযুক্ত কণা বা প্লাজমার ঘন স্রোত, যা সূর্য থেকে বেরিয়ে এসে মহাকাশে ভেসে বেড়াতে থাকে।
নাসা জানিয়েছে, এই সৌর ঝড়ের ফলে উপগ্রহ সংকেত বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সৌর ঝড়ের কারণে পৃথিবীর বাইরের বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হতে পারে যা উপগ্রহের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।
এছাড়াও এই সৌর ঝড় জিপিএস নেভিগেশন, মোবাইল ফোন সিগন্যাল এবং স্যাটেলাইট টিভিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। ব্যহত হতে পারে পরিষেবা। প্রভাব পড়তে পারে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পাওয়ার লাইন বা ট্রান্সফর্মারগুলিতে।
পৃথিবীতে বিশাল সৌর ঝড় সর্বশেষ রেকর্ড করা হয়েছিল ১৮৫৯ সালে। এরপর ১৯২১ ও ১৯৮৯ সালেও সৌর ঝড় হয়। এতে হাইড্রো-কিউবেক পাওয়ার গ্রিড পুরোপুরি বসে যায়। যার ফলে ৯ ঘন্টা ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল কানাডা।
উল্লেখ্য, গত বেশ কয়েক মাস ধরেই সূর্যের মধ্যে অস্থিরতা নজর করা গিয়েছে। ২০২০ সালে সূর্য এর ১১ বছরের নতুন সাইকেল শুরু করে। এই সাইকেল ২০২৫ সালে চরম পর্যায়ে পৌঁছবে। এই অবস্থায় সৌর ঝড়ের চোখ রাঙানি বিশ্বের উপর। বিশ্বের উপর শেষবার বড় আকারের সৌর ঝড় আছড়ে পড়েছিল ১৭ বছর আগে।
যদি সৌর ঝড় যথেষ্ট বড় হয় তবে এটি পুরো গ্রহের বিদ্যুৎ ব্যাহত করতে পারে। এর ফলে আবার বিদ্যুৎ পেতে সক্ষম হবার জন্য সমস্ত তারের পরিবর্তন করা প্রয়োজন। এটি যোগাযোগ ও উপগ্রহকেও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। আজ আমরা সব কিছুর জন্য উপগ্রহ ব্যবহার করি। তাই উপগ্রহ ক্ষতিগ্রস্ত হলে থমকে যাবে জীবন।
এছাড়া এটি বিভিন্ন গবেষণা নিয়ে মহাকাশে থাকা নভোচারীদেরও প্রভাব ফেলতে পারে। রেডিয়েশনের জন্য এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। অনেক প্রাণী পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের পরিবর্তনের সাথে সংবেদনশীল। সুতরাং একটি সৌর ঝড় তাদের দিশেহারা করতে পারে। পাখির মতো প্রাণী যা পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্র দ্বারা তাদের অভিবাসনের জন্য দিক নির্ধারণ করে, তারা দিশেহারা হয়ে মারা যেতে পারে এবং গোটা প্রজাতির অস্তিত্ব হুমকির মুখে অড়তে পারে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৭৪৫
আপনার মতামত জানানঃ