পাহাড় কাটা বা বনাঞ্চল ধ্বংস করা নিত্যদিনের ঘটনা। দিনের পর দিন সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে পাহাড় কাটলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় এখনো বন্ধ হয়নি অবৈধভাবে পাহাড় কাটা। পরিবেশকর্মীরা বারবার বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এনে পাহাড় কাটা বন্ধের আহ্বান জানালেও এ বিষয়ে নিয়মিত অভিযান ও নজরদারি নেই প্রশাসনের। কেননা এসব পাহাড় কাটার পেছনে রয়েছেন জনপ্রতিনিধি, ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে, থানচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইহ্লা মং মারমা বান্দরবানের থানচিতে বাড়ি নির্মাণের জন্য অবৈধভাবে এস্কেভেটর দিয়ে মাসখানেক ধরে পাহাড় কাটছেন। প্রায় পাঁচ একর পাহাড়টির অনেকটাই বর্তমানে সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
বাংলা ট্রিবিউনের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, থানচি বাসস্টেশন থেকে আমতলী যাবার রাস্তা সংলগ্ন ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় দুটি এস্কেভেটর দিয়ে সমান তালে পাহাড় কাটা হচ্ছে। পাহাড়টি থানচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইহ্লা মং মারমার নিজস্ব সম্পত্তি। বাড়ি নির্মাণের নামে তিনি ইতোমধ্যে পাহাড়টির অনেকটাই কেটে সমান করে ফেলেছেন।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি পাহাড় কেটে ধ্বংস করছেন। এ বিষয়ে আইনের কোনও তোয়াক্কা করছেন না তিনি। প্রকাশ্যে এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে সমানে কাটছেন পাহাড়। কেটে ফেলা পাহাড়ের মাটি চড়া দামেও বিক্রি করেও মোটা অঙ্কের টাকা আয় করছেন তিনি।
পাহাড় কাটার বিষয়ে জানতে থানচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইহ্লা মং মারমার মোবাইলফোনে কয়েকবার কল দিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
থানচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইহ্লা মং মারমা বান্দরবানের থানচিতে বাড়ি নির্মাণের জন্য অবৈধভাবে এস্কেভেটর দিয়ে মাসখানেক ধরে পাহাড় কাটছেন। প্রায় পাঁচ একর পাহাড়টির অনেকটাই বর্তমানে সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
তবে বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক আবদুস সালাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি পাহাড় কাটার বিষয়ে শুনেছি। দুই-একদিনের মধ্যে থানচি গিয়ে বিষয়টি সরেজমিন দেখে ব্যবস্থা নেবো। পাহাড় কাটার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনও ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার হবে বলে জানিয়েছেন থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আতাউল গণি ওসমানী।
পরিবেশকর্মীরা বারবার বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এনে পাহাড় কাটা বন্ধের আহ্বান জানালেও এ বিষয়ে নিয়মিত অভিযান ও নজরদারি নেই প্রশাসনের। মাঝে মাঝে দু’একবার অভিযান চালিয়ে, দু’চারজনকে জেল-জরিমানা করেই নিজেদের কাজ শেষ করছে প্রশাসন। তবে পরিবেশকর্মীদের আশঙ্কা, এভাবে পাহাড় কাটা চলমান থাকলে পার্বত্য এলাকা হিসেবে হারিয়ে যাবে বান্দরবানের সুনাম, আরও হুমকির মুখে পড়বে পরিবেশ।
পরিবেশকর্মীরা বলছেন, পাহাড় ও বন কাটার সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের মাঝেমধ্যে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কিন্তু মূল হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বা পরিবেশ আদালতে মামলা করেই যেন পরিবেশ অধিদপ্তর দায়িত্ব শেষ। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং পাহাড় ধ্বংসকারীদের আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত করার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। জরিমানা ছাড়াও পাহাড় বেষ্টনী দিয়ে বনায়ন করতে হবে।
তারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে যেসব আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে, সেগুলোতে একই অপরাধ বারবার হলে শাস্তির মাত্রা কয়েক গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। পরিবেশ আইনে যদি এমন দুর্বলতা থাকে, তাহলে তা দূর করা এবং আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে পরিবেশ ধ্বংসকারী দুর্বৃত্তদের নিবৃত্ত করতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ দ্রুতই পাহাড়শূন্য হয়ে যাবে, প্রাকৃতিক বনাঞ্চল বলে কিছু থাকবে না।
আরও বলেন, প্রভাবশালী লোকজন ও বিভিন্ন সংস্থা নিজেদের মালিকানাধীন পাহাড় কাটছে। পাহাড় তো শুধু মাটি না। পাহাড়ে থাকা গাছপালা কাটা হচ্ছে। ফলে জীবজন্তু, পোকামাকড়সহ সবই ধ্বংস হচ্ছে। এভাবে একসময় চট্টগ্রাম পাহাড়শূন্য হবে, সঙ্গে প্রাকৃতির ভারসাম্যও নষ্ট হবে।
তারা জানান, অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্ষায় পার্বত্য জেলায় বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসে। প্রশাসনিকভাবে পাহাড় কাটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় দেদার পাহাড় কাটা চলছে। অবিলম্বে তাদের অপতৎপরতা বন্ধ করা না গেলে ভয়াবহ পরিবেশ ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে।
পরিবেশকর্মীরা মনে করেন, বান্দরবানে ক্রমাগত পাহাড় কাটার কারণে বর্ষাকালে অনেক পাহাড় ধসে খাল বিল ভরে যাচ্ছে, পাহাড় ধসে ঘরবাড়িতে পড়ে জীবন ও সম্পদ নষ্ট হচ্ছে, পরিবেশ ও প্রাণিকুল নষ্ট হচ্ছে। এক কথায় জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে পাহাড় রক্ষা করতেই হবে। এজন্য দরকার প্রশাসনের শক্ত হস্তক্ষেপ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫১২
আপনার মতামত জানানঃ