দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে মা ও ছেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এএসপিসহ তিন জনকে আটক করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) বিকালে দিনাজপুর সদর উপজেলার বাশেরহাট থেকে তাদের আটক করা হয়।
আজ বুধবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে চিরিরবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত কুমার সরকার গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আটককৃতরা হলেন—রংপুর সিআইডির এএসপি সারোয়ার কবির, এএসআই হাসিনুর রহমান ও কনস্টেবল আহসানুল হক। যাদের অপহরণ করা হয়েছিল তারা হলেন-দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার লুৎফর রহমানের স্ত্রী জহুরা খাতুন (৪২) ও তার ছেলে জাহাঙ্গীর (২৫)।
এ বিষয়ে রংপুর সিআইডির এসপি আতাউর রহমান এক জাতীয় দৈনিককে বলেন, ‘তারা আমার অনুমতি না দিয়ে সেখানে (চিরিরবন্দর) অভিযানে গেছেন। একটু আগে তাদের আটকের বিষয়টি শুনেছি। তারা কেন সেখানে গেলেন, কাকে অপহরণ করলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ভুক্তভোগীর স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর সিআইডির কাছে পলাশ নামের এক ব্যক্তি চিরিরবন্দর থানার লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকার প্রতারণার অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় লুৎফরের বাড়িতে যান এএসপি সারোয়ার কবিরসহ তিন জন। লুৎফরকে না পেয়ে তার স্ত্রী ও ছেলেকে একটি কালো মাইক্রোবাসে উঠিয়ে সৈয়দপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে মুক্তিপণ দাবি করেন। তারা পরিবারের লোকজনকে ফোন করে ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে এ ঘটনায় থানা পুলিশের কাছে যান ভুক্তভোগীর স্বজনরা।
এক পর্যায়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ভুক্তভোগীর স্বজনরা সাড়ে আট লাখ টাকা নিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করতে চান। তারা প্রথমে রানীরবন্দর আসতে বলেন। সেখানে আসলে তাদেরকে টাকিা নিয়ে দশমাইল আসতে বলা হয়। আবার দশমাইল আসলে বাশেরহাট আসতে বলে। পরে দিনাজপুর জেলা পুলিশ ও সিআইডি মিলে বাশেরহাট থেকে তাদেরকে আটক করে। আটকের পর প্রথমে চিরিরবন্দর পরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। এএসপি সারোয়ার কবিরসহ তিন জন এখনও দিনাজপুর পুলিশের হেফাজতে আছে বলে জানা গেছে।
আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে চিরিরবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত কুমার সরকার বলেন, তদন্ত চলছে। তবে বিস্তারিত বলা যাবে না। এছাড়া বিস্তারিত জানতে পুলিশ সুপারের সাঙ্গে কথা বলার অনুরোধ জানান তিনি। পরে পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেনকে ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
রংপুর সিআইডির ভারপ্রাপ্ত এসপি আতাউর রহমান জানান, আটকদের মধ্যে একজন এএসপি, একজন এএসআই ও একজন কনস্টেবল রয়েছেন। তাদের মধ্যে এএসআই ও কনস্টেবল ২১ আগস্ট থেকে দশদিনের ছুটিতে ছিলেন। তারা একটি অভিযোগের ভিত্তিতে সেখানে যান। সরকারি গাড়ি ব্যবহার না করে এবং অনুমতি ছাড়া ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে অপারেশনে যান। আটকের পর আমাকে জানানো হয়েছে। তারা যে আমাদের স্টাফ তা জানিয়েছি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পুলিশ অপরাধ প্রবণ হয়ে উঠছে সুষ্ঠু বিচার না হবার কারণে। এতে পুলিশের কাছে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে মানুষ। সরকারের জবাবদিহিহীনতা এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীতে ক্ষমতার কেন্দ্রীয়করণের মাধ্যমে দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী এই অরাজকতা করার সুযোগ পেয়েছে। আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা মানুষেরা অন্যায় করে খুব সহজেই পার পেয়ে যাওয়ার কারণেই অপরাধপ্রবণতা এভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং খু্ব দ্রুতই এর থেকে বেড়িয়ে আসতে না পারলে সাধারণ মানুষ পুলিশের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলবে। এতে করে অপরাধ পরিসংখ্যান আকাশচুম্বি হয়ে দাঁড়াবে।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৯২১
আপনার মতামত জানানঃ