তালিবানের আগ্রাসী আচরণের কারণে আফগানিস্তানে মানবিক বিপর্যয় ঘনিয়ে আসছে বলে সাবধান বার্তা দিল জাতিসংঘ। দেশটিতে হাজার হাজার মানুষ ঘর ছেড়ে পালিয়েছে। তাদেরকে খোলা রাস্তায় থাকতে হচ্ছে। সঙ্গে আছে অনাহারে থাকা মানুষরাও। সব মিলিয়ে আফগানিস্তানের সামনে কঠিন দিন ঘনিয়ে আসছে। জরুরিভিত্তিতে মানবিক সহায়তার প্রচেষ্টা শুরু করার ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত না হলে সে দেশের অর্থনীতিও ভেঙে পড়তে পারে। গতকাল রবিবার এ সতর্ক বার্তা দিয়েছে জাতিসংঘ। দ্য গার্ডিয়ান–এর খবর।
আফগানিস্তান ছাড়তে ইচ্ছুক সে দেশের নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া নিয়ে যুক্তরাজ্যের বিশৃঙ্খল প্রচেষ্টায় ক্ষোভ বাড়ছে। এরই মধ্যে গত শনিবার কাবুল বিমানবন্দরে হুড়োহুড়িতে মারা গেছেন সাতজন। এই অবস্থায় তড়িঘড়ি করে চলতি সপ্তাহে বৈঠক ডেকেছেন জি-৭ নেতারা।
এমনই প্রেক্ষাপটে কাবুলে অবস্থানরত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, আফগানিস্তানে দেখা দেওয়া সাম্প্রতিকতম এই বিশৃঙ্খলার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে খরা, গণহারে লোকজনের বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ও অর্থনৈতিক অচলাবস্থা। সব মিলিয়ে সম্ভাব্য মানবিক বিপর্যয় প্রতিরোধে দেশটিতে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তৎপরতা প্রয়োজন।
আফগানিস্তানে নিযুক্ত জাতিসংঘ খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) কান্ট্রি ডিরেক্টর মেরি–এলেন ম্যাকগ্রোয়ার্থি পর্যবেক্ষকদের বলেন, দ্রুত সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অন্যথায় এরই মধ্যে দেখা দেওয়া ভয়ানক পরিস্থিতি রূপ নেবে চরম বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে। আর তা হবে চূড়ান্ত রকমের এক মানবিক বিপর্যয়।
ম্যাকগ্রোয়ার্থি বলেন, ‘আফগানিস্তানে আমাদের শুধু খাদ্য নয়, চিকিৎসাসামগ্রী ও আশ্রয়–সংশ্লিষ্ট সরঞ্জামাদির সরবরাহ দরকার। আরও দরকার অর্থ, যার প্রয়োজন এখনই।’
জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেন, এসব সামগ্রী সরবরাহে ৬–৭ সপ্তাহ লেগে গেলে (দেরি হলে) তাতে অনেক বিলম্ব ঘটে যাবে। মানুষের কাছে কিছুই নেই। এখনই খাবার দরকার। রাস্তাঘাট তুষারে ঢাকা পড়ার আগেই আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে তা পৌঁছাতে হবে।
আফগানিস্তান তালিবানের হাতে যাওয়ার পর দেশ ছাড়তে মরিয়া বহু মানুষ ভিড় করছে কাবুল বিমানবন্দরে। চরম বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ তাদের দূতাবাস কর্মী, নাগরিক ও আফগান দোভাষীদের সরিয়ে নিচ্ছে সেখান থেকে। এর মাঝেই গত ৭ দিনে অন্তত ২০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে বিমানবন্দর এলাকায়। ন্যাটো কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ন্যাটোর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিমানবন্দর এলাকায় যে সংকট তৈরি হয়েছে তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে বিদেশিদের যত দ্রুত সম্ভব সরিয়ে নেওয়া।
গত সপ্তাহ থেকে শুরু করে প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে কাবুল বিমানবন্দরে। ন্যাটোর ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, তালিবানের সঙ্গে কোন ধরনের বিবাদে না জড়িয়ে তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে বিবিসি জানায়, গত সপ্তাহে তালিবানের হাতে কাবুলের পতনের পর দেশ ছেড়ে চলে যান ‘আফগানিস্তান মাইগ্র্যান্টস অ্যাডভাইস অ্যান্ড সাপোর্ট অর্গানাইজেশন’ নামের একটি সংগঠনের পরিচালক আবদুল গফুর। জার্মানি থেকে তিনি এই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, যেসব আফগান দেশ ত্যাগ করতে পারবে না, তাদের বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বের চিন্তাভাবনা করা দরকার।
আবদুল গফুর বলেন, ‘কত মানুষ আফগানিস্তান ছাড়তে পারবে, হাজার হাজার? কয়েক হাজার? যে লাখো মানুষ থেকে যাবে, তাদের কী হবে? ’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের দেশগুলোর দায়দায়িত্ব রয়েছে। কেননা, তারা তাদের একা ফেলে গেছে। এখন দেশগুলোর পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা দরকার। যাতে এসব মানুষ কিঞ্চিৎ হলেও স্বাধীনতা পায় এবং তারা বেঁচে থাকতে পারে।’
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনার পর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঠেকানোর অভিযোগ তুলে আফগানিস্তানে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র রাষ্ট্রগুলো। উৎখাত হয় তালিবান সরকারের।
২০ বছর ধরে চলা তালিবান এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সেই যুদ্ধে নিহত হয়েছেন বহু মানুষ। হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ভেঙে পড়েছে আফগানিস্তানের অর্থনীতি। কয়েক বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কাতারের দোহায় তালিবানের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করেন। গত এপ্রিলে বর্তমান প্রেসিডেন্ট তারই ধারাবাহিকতায় আফগানিস্তানে চলা ২০ বছরের যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে ঘোষণা দেন মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের। এরপর থেকেই তালিবান কাবুল দখলের জন্য আফগান বাহিনীর সঙ্গে তীব্র লড়াই শুরু করে। সাড়ে তিন মাসের লড়াই শেষে কাবুল দখলে নেয় তালেবান। এরপর ২০ বছর আফগান যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করে তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৪৩
আপনার মতামত জানানঃ