আফগানিস্তানকে নিজেদের মত পরিচালনার জন্য কয়েক ডজন স্থানীয় রেডিও স্টেশন, সংবাদপত্র এবং সম্প্রচারের মাধ্যমকে জোরপূর্বক বন্ধ করে দিয়েছে তালিবান। ২০০১ সালে তালিবান শাসনের অবসান হওয়ার পর আফগানিস্তানের বড় অর্জনগুলোর মধ্যে একটি ছিলো গণমাধ্যমের সমৃদ্ধি।
আফগান সরকারের গণমাধ্যম তথ্য কেন্দ্রের প্রধানকে গুলি করে হত্যা করেছে তালিবানরা। রাজধানী কাবুলের একটি মসজিদে তাকে হত্যা করা হয় বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়। এরকম পরিস্থিতিতে তালিবানদের প্রতিশোধের ভয়েও অনেক সংবাদমাধ্যম বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের অনেক সাংবাদিক তাদের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে অথবা মাটির নিচে চলে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কয়েক ডজন সাংবাদিক এবং গণমাধ্যম কর্মীদের হত্যার জন্য তালিবানকে দায়ী করা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ভীত হয়ে আফগানিস্তান থেকে সাংবাদিকদের ফেরানোর জন্য ম্যার্কেলকে অনুরোধ করল ডিডাব্লিউ সহ অনেক সংবাদমাধ্যম। আফগানিস্তানের সাংবাদিকরা এখন কাবুলের একটি হোটেলে আশ্রয় নিয়েছেন।
জার্মানির সংবাদমাধ্যমগুলি খুবই উদ্বিগ্ন আফগানিস্তানে কর্মরত সাংবাদিকদের নিয়ে। তারা গতকাল রোববার জার্মানির প্রেসিডেন্ট ম্যার্কেলকে অনুরোধ করেছে, স্থানীয় আফগানরা যারা ওই সব সংবাদমাধ্যমের হয়ে কাজ করেছেন, তাদের কাবুল থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে।
কারণ যে কয়েকটি গণমাধ্যমকে পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে তারা তালিবানদের প্রোপাগান্ডা প্রচার করতে বাধ্য হয়েছে। তাদের সঙ্গীত বা নারীদের কণ্ঠ প্রচার করতে নিষেধ করা হয়েছে। আগের প্রতিবেদনের স্থানে তালিবান-অনুমোদিত বুলেটিন, কোরান থেকে তিলাওয়াত, এবং ইসলামী খুতবা প্রচারিত হচ্ছে।
তালিবান একই সঙ্গে তাদের জারি করা কঠোর শরিয়া শাসনের অধীনে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মতো শাস্তি চালু করে। অপরাধী কিংবা ব্যাভিচারীদের প্রকাশ্যে হত্যা করা হতো, চুরির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের হাত কেটে নেয়া হতো। আর পুরুষদের দাড়ি রাখা এবং মেয়েদের পুরো শরীর ঢাকা বোরকা পরা বাধ্যতামূলক করা হয়।
ডিডাব্লিউ, ডিপিএ সহ চারটি প্রধান সংবাদপত্র ও ব্রডকাস্টার খোলা চিঠি লিখে জানিয়েছে, তাদের সাংবাদিকদের জার্মানিতে আনার জন্য যেন জরুরি ভিত্তিতে ভিসা দেয়া হয়।
২০০১ সালে আফগানিস্তানে অ্যামেরিকা যাওয়ার পর থেকে সাংবাদিক, অনুবাদক ও অন্য সহায্যকারীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। চিঠিতে বলা হয়েছে, ”তারাও আমাদের মতো স্বাধীন সংবাদমাধ্যম, গণতন্ত্র, শান্তিতে বিশ্বাস করে। গত ২০ বছর ধরে জার্মানিও আফগানিস্তানে একই মূল্যবোধ নিয়ে চলেছে। আফগানরা সহযোগিতা না করলে কখনোই আফগানিস্তানে ঠিকভাবে কাজ করা সম্ভব হতো না। এরা আমাদের সাহায্য করেছে।”
জীবনের ঝুঁকি
চিঠিতে বলা হয়েছে, ফ্রিল্যান্স কর্মীদের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। সম্প্রতি আফগানিস্তানে সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ হয়েছে। সেই প্রসঙ্গ তুলে চিঠিতে বলা হয়েছে, ”মনে হচ্ছে, এই ধরনের আক্রমণ ও সাংবাদিকদের হত্যার ঘটনা বাড়তে থাকবে। আমাদের অনেক কর্মীই বিপদের মধ্যে আছেন। তালিবানও বেছে বেছে মিডিয়া কর্মীদের খুঁজে প্রতিশোধ নিতে পারে। যারা আফগানিস্তানে থাকবে, তারাই নির্যাতনের মুখে পড়বে। তাদের মৃত্যুও হতে পারে।”
সাংবাদিকরা প্রাণের ভয়ে এখন কাবুলের হোটেলে অবস্থান করছেন। এমন সময় তাদের সরিয়ে না নিলে খুন, গুমসহ যেকোনো খারাপ কিছু ঘটার আশঙ্কা এড়ানো সম্ভব হবে না।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/২৩২৫
আপনার মতামত জানানঃ