তালিবান যোদ্ধারা চতুর্দিক থেকে রাজধানী শহর ঘিরে ফেলায় বর্তমান আফগান সরকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। এদিকে, তালিবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে প্রবেশের পর ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণা করেছে।
তালিবানের রাজনৈতিক মুখপাত্র সুহাইল শাহিন এক ঘোষণায় পুরো আফগানিস্তানে ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণা করেন। সুহাইল শাহিন বলেন, কাবুলের দুর্নীতিগ্রস্থ সরকারের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের জন্যও ইসলামী ইমারত আফগানিস্তানের সব দরজা খোলা থাকবে।
তালিবান আর এক মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, ‘ইসলামিক আমিরাত তাদের সকল সৈন্যদেরকে নির্দেশ দিয়েছে যেন তারা কাবুলের প্রবেশদ্বারগুলোতে অবস্থান করে, এবং শহরে ঢোকার চেষ্টা না করে।’
তিনি বলেন, ইসলামী ইমারত আফগানিস্তানের দরজা ওই ব্যক্তিদের জন্যও উন্মুক্ত থাকবে যারা আমাদের বিরুদ্ধে হামলায় সহযোগিতা করেছে।
এ অবস্থায় রাজধানী কাবুলসহ দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের নারীদের মধ্যে হিড়িক পড়েছে বোরকা কেনার। দামও বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ।
কাবুলের একটি মার্কেটে বোরকা বিক্রি করেন আরেফ। দূর থেকে আরেফের দোকান দেখলে মনে হতে পারে সেখানে নীল রঙের পর্দা টাঙানো আছে। কিন্তু কাছে গেলে বোঝা যায় দোকানের হুকে ঝোলানো আছে অসংখ্য নীল বোরকা।
আরেফ জানান, আগে বিভিন্ন প্রদেশের নারীরাই তাদের প্রধান ক্রেতা ছিলেন। এখন শহরাঞ্চলের নারীরাও তাদের কাছে থেকে বোরকা কিনছেন।
আয়ালিয়া তেমনই একজন ক্রেতা। তিনি বোরকার দাম কমানোর জন্য আরেকজন দোকানদারের সাথে দরদাম করছিলেন। তিনি জানান, গত বছরও বোরকার দাম ছিল দুইশ আফগানি মুদ্রা। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে, দুই হাজার থেকে তিন হাজার আফগানি মুদ্রায়।
আফগানি বোরকায় পরিধানকারীর পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢাকা থাকে। বোরকার চোখের কাছে থাকে পাতলা জালের মতো কাপড়, যা দিয়ে পরিধানকারীরা বাইরের দৃশ্য দেখতে পান, কিন্তু বাইরের কেউ পরিধানকারীকে দেখতে পাবেন না।
১৯৯০-এর দশকে তালিবান সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন কড়াকড়ি ভাবে এ ধরনের বোরকা পরে মেয়েদের বাইরে বের হওয়ার নির্দেশনা জারি করা হয়। কেউ এই নির্দেশ না মানলে তালিবানের নৈতিক পুলিশের হাতে জনসম্মুখে বেত্রাঘাতের মতো নির্মম শাস্তি পেতে হতো।
২০০১ সালে তালিবানের পতনের পর ধর্মীয় ও ঐতিহ্যগত কারণে অনেকেই বোরকা পরা অব্যাহত রাখলেও লাখ লাখ আফগান নারী দেশটির নবযুগের সূচনার প্রতীক হিসেবে বোরকাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।
তবে চলতি বছরে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের পর দেশটির একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ শহর তালিবান দখলে নিলে পরিস্থিতি বদলে যায়। তালিবান দখলকৃত এলাকায় কঠোর শরিয়া আইন জারির হুঁশিয়ারি দিলে দেশটির তরুণী থেকে বৃদ্ধা সবাই নিজেদের বোরকার মজুদ বাড়ানো শুরু করেছে বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৯২০
আপনার মতামত জানানঃ