আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়ে নেয়ার পরে পাকিস্তানের সাথে সর্ম্পকের উন্নতি চায় যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তানের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিড় ধরা সম্পর্ককে নতুন মোড় দিয়ে সুসম্পর্কে তৈরী করতে চাচ্ছে দেশটি। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়াকে ফোন করে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নতি অব্যাহত রাখতে ওয়াশিংটনের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার দেয়া এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন।
বিবৃতিতে বলা হয়, সেক্রেটারি অস্টিন যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক উন্নত করতে এবং এই অঞ্চলে দুই দেশের একাধিক অভিন্ন স্বার্থ ভাগ করে নেয়ার বিষয়ে তার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি জন কিরবি বলেন, সচিব অস্টিন এবং জেনারেল বাজওয়া আফগানিস্তানের চলমান পরিস্থিতি, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা এবং দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সম্পর্ক নিয়ে আরও বিস্তৃতভাবে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, অস্টিন এই অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার পারস্পরিক লক্ষ্য নিয়েও আলোচনা করেছেন।
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে কিরবি বলেন, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তে যে নিরাপদ আশ্রয়স্থল রয়েছে সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানি নেতৃত্বের সঙ্গে কথোপকথন চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা মনে করছি যে সেই নিরাপদ আশ্রয়গুলো কেবল আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে আরও নিরাপত্তাহীনতা এবং আরও অস্থিতিশীলতার উৎস সরবরাহ করছে। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানি নেতাদের সঙ্গে সেই বিষয়ে আলোচনা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত নই।
কিরবি বলেন, ‘আমরা এটাও মনে রাখি যে পাকিস্তান এবং পাকিস্তানি জনগণও সেই অঞ্চল থেকে উদ্ভূত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শিকার হয়। সুতরাং, আমাদের সকলেরই সেই নিরাপদ আশ্রয়স্থল বন্ধ করার গুরুত্ব এবং তালেবান বা অন্যান্য সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক দ্বারা বিভেদ বপনের জন্য ব্যবহার না করার গুরুত্ব সম্পর্কে তাদের একটি সম্যক ধারণা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এবং আবার, আমরা পাকিস্তানিদের সাথে সব সময় সেই বিষয়ে আলোচনা করছি।’
আফগানিস্তানে ভারত ও পাকিস্তানের কী ভূমিকা থাকা উচিত, জানতে চাইলে পেন্টাগনের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা চাই প্রতিবেশী দেশগুলো যাতে এমন পদক্ষেপ না নেয়, যা আফগানিস্তানের পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরও বিপজ্জনক করে তোলে এবং আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে চায়। আমরা এই যুদ্ধের একটি আলোচিত শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক নিষ্পত্তি চাই।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান- উভয় দেশের মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, বাইডেন প্রশাসন আফগানিস্তানে কাজ করার লক্ষ্য নিয়ে বিশেষ করে যদি তালিবান কাবুল দখল করে ফেলে, তাহলে পাকিস্তানে সামরিক ঘাঁটি বসাতে চাইবে যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র সেনা সরিয়ে নিলেও পাকিস্তানে ঘাঁটি স্থাপন করে সেখানে নজর রাখতে চাইছে তারা।
তবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, পাকিস্তানের কোনো এলাকা যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে না। ডনের খবরে জানা যায়, মার্কিন সংবাদমাধ্যম এইচবিও অ্যাক্সিওসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইমরান খান বলেন, আফগানিস্তানে অভিযান চালানোর জন্য পাকিস্তানের কোনো এলাকা কখনোই যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।
এদিকে, মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছিল, মার্কিন সেনাদের পাকিস্তানের ঘাঁটি ব্যবহার করতে দিতে চায় ইসলামাবাদ। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র পরিচালক উইলিয়াম জে. বার্নস সম্প্রতি গোপনে পাকিস্তান সফর করেছেন। সেখানে তিনি এ বিষয়ে পাক সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তবে মার্কিন সেনা মোতায়েন করতে দেওয়ার বিষয়টি পাকিস্তানের জনগণ কখনও মেনে নেবে না বলে এ ব্যাপারে ইসলামাবাদকে বুঝেশুনে কথা বলতে হচ্ছে।
এসডব্লিউ/ডব্লিউজেএ/২৩৫১
আপনার মতামত জানানঃ