সবার ক্ষেত্রে কোভিডের উপসর্গ এবং তীব্রতা একরকম নয়। বয়স ও নারী-পুরুষভেদে কোভিডের প্রাথমিক উপসর্গগুলো ভিন্ন হয়। যুক্তরাজ্যের প্রখ্যাত চিকিৎসা সাময়িকী ‘দ্য ল্যানচেট ডিজিটাল হেলথ’ জার্নালে বৃহস্পতিবার গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে।
লন্ডনের বিখ্যাত কিংস কলেজের গবেষকরা এই গবেষণাটি করেছেন। করোনার উপসর্গ শনাক্তের জন্য তাদের তৈরি ‘জেডওই কোভিড সিম্পটম স্টাডি’ অ্যাপের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পর তা বিশ্লেষণ করে এই গবেষণাটি চালিয়েছেন।
এই গবেষণায় লিঙ্গভেদে করোনার উপসর্গের ভিন্নতা দেখা গেছে। পুরুষদের শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি, ঠাণ্ডা ও জ্বর হওয়ার মতো উপসর্গগুলো ছিল বেশি। নারীদের ঘ্রাণশক্তি হারানো, বুকে ব্যথা ও ক্রমাগত কাশি হওয়ার মতো কোভিডের উপসর্গগুলো বেশি দেখা গেছে।
মূলত করোনা বা যে কোনও ভাইরাস আক্রমণের ক্ষেত্রে মহিলাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরুষদের চেয়ে বেশি। যা করোনার ক্ষেত্রেও প্রমাণিত হয়েছে বলে জানাচ্ছেন একদল বিশেষজ্ঞ।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার এই পার্থক্যের জন্য অনেকাংশে দায়ী মহিলা ও পুরুষের হরমোনের পার্থক্য। ২০০২-০৩ সালে সার্স প্রাদুর্ভাবের সময় গবেষণায় ইঁদুরের ওভারি বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা, যা থেকে ইস্ট্রোজেনের মতো স্ত্রী হরমোন ক্ষরণ হয়। গবেষণায় দেখা যায়, ওভারি বাদ দেওয়ার পর সার্স সহজে আক্রমণ করছে এবং মৃত্যুহারও বেড়ে যাচ্ছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, সার্স ভাইরাস ও কোভিড-১৯ এর ৭৯ শতাংশ ‘জেনেটিক সিকোয়েন্সিং’ এক। স্ত্রী হরমোনের জন্য মহিলাদের কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষমতা বেশি বলে মনে করছেন তারা।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের প্রথম থেকেই পুরুষের ক্ষেত্রে এর তীব্রতা নিয়ে অনেক প্রতিবেদন সামনে আসে। তবে ‘নেচার কমিউনিকেশন’ জার্নালে গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত এক গবেষণায় এই ধারণাকে স্বীকার করে নেয়া হয়।
প্রায় ২০ টি দেশ থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে ওই গবেষণায় বলা হয়, নারী-পুরুষ উভয়েরই করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি এক; তবে পুরুষের কোভিড-১৯ এর তীব্রতা নারীদের থেকে বেশি। পাশাপাশি মৃত্যুহারও বেশি।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যাদের বয়স ৬০ বছর বা এর বেশি তাদের মধ্যে ঘ্রাণশক্তি হারানোর বিষয়টি বিশেষ একটা দেখা যায়নি। আর ৮০ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে মোটেও দেখা যায়নি। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ এসব মানুষের ডায়রিয়ার প্রবণতা ছিল বেশি।
এছাড়া ৪০ থেকে ৫৯ বছর বয়সীরা দীর্ঘস্থায়ী কাঁশিতে ভুগেছেন। তবে ৮০ বা তার চেয়ে বেশি বয়সীদের তুলনায় তাদের মধ্যে সর্দি বা কাঁপুনি তেমন ছিল না। এদিকে ৬০ থেকে ৭০ বয়সীদের শ্বাসকষ্ট, বুক ও মাংসপেশী ব্যথা, ঘ্রাণশক্তি হারানোর মতো উপসর্গ বেশি ছিল।
গবেষকদের একজন কিংস কলেজ লন্ডনের ক্লেয়ার স্টিভস বলছেন, ‘মানুষের জন্য এটা জানা গুরুত্বপূর্ণ কোভিডের প্রাথমিক লক্ষণগুলো বিস্তৃত। অনেক ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে বয়স-লিঙ্গভেদে এগুলো হয় ভিন্ন। এমনকি একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও।
এই গবেষণায় কোভিডের মোট ১৯টি উপসর্গ নিয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষা ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ক্রমাগত কাশি, স্বাদ ও ঘ্রাণশত্তি হারিয়ে ফেলার সঙ্গে পেটে ব্যথা এবং পায়ে ফোসকা পড়ার মতো উপসর্গগুলো নিয়েও কাজ করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের গবেষকরা বলছেন, সময়মতো সেলফ আইসোলেশন ও জরুরি পরীক্ষা নিশ্চিতের জন্য প্রাথমিকভাবে নিজে বলা লক্ষণগুলোর ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তির করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা অনুমান করাই ছিল আমাদের এই গবেষণার লক্ষ্য।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৭১৯
আপনার মতামত জানানঃ