আজ থেকে প্রায় ১০০ কোটি বছর আগের প্রাচীন প্রাণীর এক জীবাশ্মের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিষয়টি নিশ্চিত হলে এটিই হতে পারে বিশ্বের প্রাচীনতম প্রাণীর জীবাশ্ম। একইসঙ্গে পৃথিবীর বুকে প্রাণের স্পন্দনের শুরুটা কিভাবে, সে ধারণাও মিলতে পারে এই জীবাশ্ম থেকে।
বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচারে বুধবার(২৮ জুলাই) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৮৯ কোটি বছরের পুরোনো পাথরের ভেতরে মিলেছে ফ্যাকাশে রঙের, কৃমির মতো এক ধরনের টিউব। বিশদ গবেষণার পর এগুলো সামুদ্রিক স্পঞ্জ বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
ভূতাত্ত্বিক এলিজাবেথ টার্নার জানান, পৃথিবীর জন্মলগ্নের পর থেকে অনেকটা সময় ধরে যে ধরনের পরিবেশ ছিল, তাতে প্রাণের অস্তিত্ব অসম্ভব বলে এতোদিন মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু নতুন গবেষণার তথ্য সঠিক হলে বুঝতে হবে যে সে পরিবেশেও আসলে প্রাণীদের বিচরণ ছিল।
কানাডার লরেন্টিয়ান ইউনিভার্সিটির ভূতাত্ত্বিক টার্নার বলেন, ‘অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে স্পঞ্জ বেশ আলাদা। আধুনিক পৃথিবীতে বিদ্যমান কিছু স্পঞ্জ এবং প্রাচীনকালের অনেক স্পঞ্জ সমুদ্রে বিদ্যমান বর্তমান অক্সিজেনভাণ্ডারের তুলনায় অনেক কম অক্সিজেনেও বেঁচে থাকতে পারত।’
সায়েন্স নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু বিজ্ঞানী সদস্য আবিষ্কৃত টিউবগুলোকে স্পঞ্জের জীবাশ্ম বলে মানতে নারাজ।
সুইজারল্যান্ডের ল্যুজানে ইউনিভার্সিটির প্যালেওবায়োলজিস্ট জোনাথন অ্যান্টক্লিফ বলেন, ‘প্রাণীর জীবনচক্রের যে কোনো ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এমন অনেক জীবাণুধর্মী প্রাণীর দেখা মিলতে পারে। নতুন যে জীবাশ্মের কথা বলা হচ্ছে, সেটিতে স্পাইকালস বা খনিজযুক্ত কঙ্কালের অংশটি নেই। অথচ স্পঞ্জের মতো জীব শনাক্ত করা হয় স্পাইকালসের মাধ্যমে।’
অ্যান্টক্লিফ আরও জানান, ক্যামব্রিয়ান কালের আগে সমুদ্রের পূর্ণাঙ্গ বাস্তুতন্ত্রে পুষ্টি উপাদান, জৈবখনিজ ও অক্সিজেনের সহজলভ্যতা নিয়ে এ পর্যন্ত যা কিছু জানা গেছে, নতুন গবেষণার সঙ্গে সে সব পূর্ব জ্ঞানের অনেক কিছুই মেলে না।
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে ওই সময়ের সমুদ্র সম্পর্কে আমরা যা কিছুই জানি, তাতে কেবল ৫৪ থেকে ৫৫ কোটি বছর আগে জন্ম নেয়া প্রাণীর বিষয়ে জানা যায়। এটাই ৮৯ কোটি বছর আগের স্পঞ্জের ধারণার বিরুদ্ধে বড় প্রমাণ।’
অ্যান্টক্লিফ মনে করেন, পৃথিবীর প্রাচীনতম প্রাণ হিসেবে ৫৪ কোটি বছরের পুরোনো স্পঞ্জের জীবাশ্মের বিপরীতে নতুন কিছু দাঁড় করাতে হলে কেবল ধারণা করলে চলবে না।
স্পঞ্জের জীবাশ্ম বলে ধারণাকৃত ৮৯ কোটি বছরের পুরোনো টিউবসদৃশ বস্তুটির সন্ধান মেলে ১৯৯২ সালে, কানাডার ম্যাকেঞ্জি পর্বতশৃঙ্গে সায়ানোব্যাকটেরিয়ার প্রাচীন ‘লিটল ডাল’ প্রবালপ্রাচীরে।
ভূতাত্ত্বিক এলিজাবেথ টার্নার এটি প্রথম আবিষ্কার করেন। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে জিনিসটা খুব অস্বাভাবিক বলে মনে হয়েছিল। সায়ানোব্যাকটেরিয়ায় তৈরি কাঠামোর চেয়ে অনেক জটিল ছিল এটি।’
সে সময় বস্তুটির অস্তিত্ব প্রকাশ করতে চাইলেও স্পঞ্জের সঙ্গে এর মিল উদ্ধারে আরও গবেষণার ওপর গুরুত্ব দেন টার্নার। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় যখন জানা গেল যে আসলে লিটল ডালের মতো এলাকার পাথরে স্পঞ্জের জীবাশ্ম থাকা অসম্ভব কিছু নয়, তখনই নিজের আবিষ্কারের বিষয়টি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন টার্নার।
অ্যান্টক্লিফের যুক্তির বিপরীতে টার্নার বলেন, বর্তমানে বিদ্যমান অনেক সামুদ্রিক স্পঞ্জেরই স্পাইকাল নেই। তার আবিষ্কৃত জীবাশ্মের স্পঞ্জটিও তেমন কিছু হতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।
টার্নারের আবিষ্কৃত জীবাশ্মের পরিচয় বের করতে আরও অনেক গবেষণা দরকার। তাই এ ধরনের প্রাচীন টিউব নিয়ে আরও কাজ করার পরিকল্পনা করছেন তিনি।
তিনি বলেন, উদার মন নিয়ে সমসাময়িক পাথরে এ ধরনের আরও উপাদান খুঁজে বের করতে হবে। জীবাণুর মতো সহজ গঠনের ক্ষুদ্র প্রাণীতেই সীমিত না থেকে আরও জটিল জীবদেহ নিয়ে গবেষণা করতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৫৩
আপনার মতামত জানানঃ