টিকার জন্য হাহাকার তৈরি হচ্ছে মানুষের মধ্যে। আর তার মাঝে জনপ্রতিনিধিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়ার প্রস্তাবে স্তম্ভিত সাধারণ মানুষ; এমনকি বিশেষজ্ঞরাও। করোনাভাইরাসের সংক্রম বাড়ছে দেশে; বাড়ছে মৃত্যু। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে টিকার নিবন্ধন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, টিকা পেতে দেশে প্রায় ১ কোটি মানুষ নিবন্ধন করেছেন। টিকা বন্দোবস্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। গত ৭ ফেব্রুয়ারিতে দেশে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হলেও টিকার অভাবে গত ২ মের পর নিবন্ধন প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়। প্রথম ডোজ নেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় আছেন এমন মানুষের সংখ্যা ১৪ লাখের কিছু বেশি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
জনপ্রতিনিধিদের অগ্রাধিকার
এ পরিস্থিতিতে সম্প্রতি স্বাভাবিক হচ্ছে টিকার যোগান। তবে বেড়েছে চাহিদা, আগ্রহ। গ্রামে সংক্রমণ বাড়ার কারণে, সেখানকার মানুষেরাও ছুটছে টিকার জন্য। হাসপাতালে হাজার হাজার মানুষ টিকার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
স্থানীয় সরকারের এই পদক্ষেপ কতটা যৌক্তিক? সর্বোচ্চ সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েও টিকা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। সেখানে বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রশাসন-১ শাখা থেকে এ চিঠি পাঠানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে দেশব্যাপী পাঁচ স্তরের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান (সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ) তৃণমুল পর্যায়ে জনগণকে সেবা দিচ্ছে।
কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় নিয়োজিত সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের ৬৭ হাজারের বেশি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য জীবাণুনাশক স্প্রে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয় ও বিতরণ, কোভিড ১৯ শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা এবং ত্রাণ বিতরণ করে যাচ্ছেন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, এছাড়াও জনগণকে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিতে উদ্বুদ্ধ করাসহ এ কাজে সার্বিক সহায়তা দিচ্ছে। লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত অনেক জনপ্রতিনিধি এখনও করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নেননি।
সে পরিপ্রেক্ষিতে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে ভ্যাকসিন দেয়া প্রয়োজন।
নিবন্ধন ও টিকার মজুদ
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জানিয়েছে, গতকাল বুধবার (১৪ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ৯৯ লাখ ৬৮ হাজার ২৫৭ জন মানুষ ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে ১১ই জুলাই পর্যন্ত কোভিশিল্ড, সিনোফার্ম এবং ফাইজার মিলিয়ে এ পর্যন্ত এক কোটি দুইলাখ ৯৫ হাজার ৩৮২ জন মানুষ টিকা নিয়েছেন।
এর জুলাই মাসের শুরুতে কোভ্যাক্সের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে মর্ডানার ২৪ লাখ ৬৭ হাজার ২০০ ডোজ টিকা এসেছে। এর বাইরে সরকার চীনের কাছ থেকে কিনছে দেড় কোটি ডোজ, যার মধ্যে ইতিমধ্যে ২০ লাখ ডোজ টিকা এসে পৌঁছেছে।
এছাড়া উপহার হিসেবে চীনের কাছ থেকে সিনোফার্মের ১১ লাখ ডোজ টিকা এসেছে। কোভ্যাক্স থেকে ফাইজারের এক লাখ ডোজ এবং মর্ডানার ২৫ লাখ ডোজ পাওয়া গেছে। সব মিলে দেশে মোট টিকার মজুদ ৫৮ লাখ ৫৪ হাজারের চেয়ে কিছু বেশি।
এছাড়া দেশে আগে আসা টিকার মধ্যে এই মুহূর্তে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড অবশিষ্ট রয়েছে ৯০ হাজার ৭২ ডোজ। অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার কিছু টিকা অগাস্টে পাওয়ার কথা রয়েছে।
খুঁড়িয়ে চলা টিকা কার্যক্রম
দেশে শুরুতেই অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত ও ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটের প্রস্তুতকৃত কোভিশিল্ড টিকা দেওয়া হয়। তবে ভারত টিকা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে ক্রমেই এ টিকার মজুত কমে আসে। আর তাতে করে গত ২ মের পর টিকার জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়।
স্থগিতের আগে কোভিশিল্ড টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে ৫৮ লাখ ২০ হাজার ৩৩ জনকে। আর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া সম্পন্ন করেছেন ৪২ লাখ ৯৬ হাজার ৭৩ জন। বাকীরা এখনও দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় রয়েছেন।
পরে চীনের সঙ্গে টিকার জন্য নতুন করে চুক্তি এবং কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় ফাইজার-বায়োএনটেকের এবং মডার্নার টিকা আসায় আবার নিবন্ধন শুরু হয় গত ৭ জুলাই থেকে। গত ১২ জুলাই জেলা-উপজেলা পর্যায় চীনের সিনোফার্মের টিকা আর দেশের ১২ সিটি করপোরেশন এলাকায় মডার্নার টিকা দওয়ার মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচি ফের শুরু হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৭৫৩
আপনার মতামত জানানঃ