শক্তিশালী একটি সৌরঝড় পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে। স্পেসওয়েদারের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, প্রতি ঘণ্টায় ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন কিলোমিটার গতিতে এই ঝড় ধেয়ে আসছে। আজ সোমবার (১২ জুলাই) পৃথিবীর ওপর এই ঝড় আছড়ে পড়তে পাবে।
এই ঝড়ের উৎপত্তি সূর্যের বায়ুমণ্ডল থেকে। উত্তর এবং দক্ষিণ মেরু থেকে এই ঝড়ের ফলে দুর্দান্ত দৃশ্য দেখা যাবে। গত বেশ কয়েক মাস ধরেই সূর্যের মধ্যে অস্থিরতা নজর করা গেছে।
নাসার দাবি, এই দ্রুত গতির ঝড়ের ফলে স্যাটেলাইট সিগনাল বিঘ্নিত হতে পারে। যার জেরে জিপিএস এবং মোবাইল সিগনালে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
ইন্ডিয়া টিভির প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সোমবার এই সৌরঝড় পৃথিবীতে আছড়ে পড়তে পারে। আর সেই ঝড়ের কারণে সমস্যা তৈরি হতে পারে উপগ্রহ যোগাযোগ ব্যবস্থায়। বিপুল অংশে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে বিদ্যুৎ যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, এর ফলে থমকে যেতে পারে প্রযুক্তির সাহায্যে চলা অনেক কিছুই।
স্পেস ওয়েদার ডট কমের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সূর্যের ভিতরে একটি ছিদ্র তৈরি হয়েছে। সেই ছিদ্র পথেই সৌরঝড় বেরিয়ে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে। পৃথিবীতে এই ঝড় এসে পড়লে উপগ্রহ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। রেডিও সিগন্যাল বিচ্ছিন্ন হতে পারে। পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের উপর এর প্রভাব পড়তে পারে অনেকটাই। নাসা জানিয়েছে, এই সৌরঝ়ড়ের গতি ১৬ লক্ষ কিলোমিটারের থেকেও বাড়তে পারে।
আরও বলা হয়েছে, এর ফলে সমস্যা হতে পারে জিপিএস সিগন্যালিং ব্যবস্থায়। বিচ্ছিন্ন হতে পারে মোবাইল ফোন, টিভি। কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে নেমে আসতে পারে আঁধার। যদিও, বড় কিছু হওয়ার সম্ভাবনা তেমন নেই, কারণ পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্র পৃথিবীকে রক্ষা করবে।
এর আগে মে মাসেই বিজ্ঞানীরা দাবি করেন, ঘুম থেকে জেগে উঠেছে সূর্য। সেই সময় কয়েক লাখ টন প্রচণ্ড গরম গ্যাস সূর্য থেকে ছড়িয়ে পড়ে। সৌর ঝড়ের সময় সূর্য থেকে ছড়িয়ে পড়া গরম গ্যাসে ইলেকট্রিক চার্জ যুক্ত গ্যাস রয়েছে যেখান থেকে সৃষ্টি হয় চৌম্বকীয় তরঙ্গ।
বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, এর জেরে বিশ্বের বেতার, জিপিএসের উপর প্রভাব পড়তে পারে। কিন্তু এর ফলে সরাসরি পৃথিবীতে কোনো প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা কম বলেই জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
২০২০ সালে সূর্য এর ১১ বছরের নতুন সাইকেল শুরু করে। এই সাইকেল ২০২৫ সালে চরম পর্যায়ে পৌঁছবে। পৃথিবীতে শেষ সৌরঝড় আঘাত হেনেছিল ১৭ বছর আগে। তবে সেই সময়ের তুলনায় বর্তমানে প্রযুক্তির উপর আমাদের নির্ভরশীলতা বেড়েছে কয়েক গুণ। তবে এই সৌরঝড় বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তিকে ব্যাহত করতে পারে বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের।
এর আগে ১৯৮৯ সালে সৌরঝড়ের কারণে পৃথিবীর একটি অংশ বিপদের মুখে পড়েছিল। কানাডায় সেই সময়ে সৌরঝড়ের কারণে প্রায় ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।
এর আগে ১৯৮৯ সালে সৌরঝড়ের কারণে পৃথিবীর একটি অংশ বিপদের মুখে পড়েছিল। কানাডায় সেই সময়ে সৌরঝড়ের কারণে প্রায় ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।
পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে বিশাল গ্রহাণু
মহাবিপদে রয়েছে পৃথিবী। কারণ, এর দিকে ধেয়ে আসছে ৮ কোটি টনেরও বেশি ওজনের মহাদৈত্যাকার গ্রহাণু। ভয়ংকর গতিবেগের ১৬৪০ ফুট চওড়া গ্রহাণু থেকে রেহাই পেতে আমেরিকা, ইউরোপের কয়েকটি দেশের মতো মরিয়া হয়ে উঠেছে চীনও। সম্প্রতি এ খবর জানিয়েছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
গবেষকদের চোখ ‘বেনু’ নামের একটি গ্রহাণুতে। ৮ কোটি টনের গ্রহাণুটি আগামী ১৫০ বছরে পৃথিবীর কক্ষপথের ৭৫ লাখ কিলোমিটারের মধ্যে আসবে। শুনতে খুব একটা উদ্বেগজনক মনে না হলেও শঙ্কামুক্ত হতে পারছেন না গবেষকেরা। কারণ, বেনু যে পাথরে তৈরি, তা পৃথিবীতে আঘাত হানলে বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে।
বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, হিরোশিমায় পড়া ৮০ হাজার পরমাণু বোমা একসঙ্গে পড়লে যে শক্তির জন্ম হতো, ওই শক্তি নিয়েই গ্রহাণুটি আছড়ে পড়তে পারে পৃথিবীতে। আর তাতে মারা যাবে পৃথিবীর লাখ লাখ লোক।
চীনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা চায়না ন্যাশনাল স্পেস সায়েন্স সেন্টারের বিজ্ঞানীরা ওই ধেয়ে আসা গ্রহাণুটির অভিমুখ পৃথিবী থেকে অন্য দিকে ঘোরানোর পরিকল্পনা করছেন। এজন্য তারা মহাকাশে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটাতে চাইছেন খুব শক্তিশালী ২৩টি সর্বাধুনিক লং মার্চ-৫ রকেট পাঠিয়ে। যেগুলো পালাক্রমে ছুটে যাবে গ্রহাণুটির দিকে। গ্রহাণুর গায়ে গিয়ে ঘটাবে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। আর তাতেই এর গতিপথ ঘুরে যেতে পারে বলে মনে করছেন চীনের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা।
এই গ্রহাণুটি এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের মতো লম্বা। যদি এটি কখনো পৃথিবীর সঙ্গে ধাক্কা লাগে তবে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে।
ধারণা করা হয় পৃথিবীতে আঘাত হানার সময় বেনু ১২ হাজার মেগাটন গতিতে আঘাত করবে। যা হিরোশিমায় আঘাত হানা বোমার থেকে ৮০ হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী। তুলনা করার জন্য লাইভ সাইন্স একটি প্রতিবেদনে বলেছিলো মহাকাশ শিলার আঘাতেই পৃথিবী থেকে ডাইনোসর নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
চীনের জাতীয় মহাকাশ বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞরা ২৩ মার্চ থেকে গণনা করছেন, ৯৯২ টন ওজনের ৫টি রকেট প্রতিনিয়ত পাথরটিকে চাপ দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে প্রায় ৬ হাজার মাইল দূরে সরিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। তাদের এই গণনার বিস্তারিত আইকারাস জার্নালে প্রকাশিত হয়।
বেইজিংয়ের জাতীয় মহাকাশ বিজ্ঞান কেন্দ্রের প্রকৌশলী ও গবেষক মিংতাও তার গবেষণাপত্রে লিখেছেন, ‘গ্রহাণুর প্রভাব পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীকুলের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছ।’ এছাড়াও তিনি আরও বলেন, এই হুমকি থেকে রক্ষা পেতে গ্রহাণুটি সরিয়ে ফেলতে হবে।
পৃথিবীকে রক্ষা করতে ব্রুস উইলিসের নির্মিত সিনেমা ‘আর্মেজেডন’ এর মতো পরিকল্পনা গ্রহণ করতে চায় চীনের বিজ্ঞানীরা। পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করে পাথরটিকে ধ্বংস করতে চায় তারা। এটি পাথরটিকে আঘাত করে ছোট ছোট আকারে ভেঙে ফেলবে। যাতে করে পৃথিবীর সঙ্গে সংঘর্ষ এড়ানো যেতে পারে বা পৃথিবীতে আঘাত হানলেও ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪১৯
আপনার মতামত জানানঃ