সরকারের প্রতিশ্রুত বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালের জন্য জমি দিতে অসম্মতি জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। যদিও সরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় জমি বরাদ্দ না দিলেও, একই জমিতে বেসরকারি হাসপাতালের জন্য জমি বরাদ্দ দিয়েছে তারা। ঘটনাটি ঘটেছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। সাধারণ জনগণের যেহেতু বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার সামর্থ্য নেই, তাই তাদের ভোগান্তি বেড়েই চলবে।
চট্টগ্রামে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে চিকিৎসাব্যবস্থার। গত ষাটের দশকের মাঝামাঝি নির্মিত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলায় আর বড় ও আধুনিক কোনো সরকারি হাসপাতাল নেই। এই একটি হাসপাতালের ওপর নির্ভর করতে হয় দেশের জনসংখ্যার বৃহৎ একটি অংশকে। তাই ধারণক্ষমতার কয়েকশ’ গুণ বেশি রোগীকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দিতে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। সক্ষমতার বেশি রোগীকে বছরের পর বছর চিকিৎসাসেবা দিতে দিতে বর্তমানে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার মানও নিম্নমুখী।
২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে একটি করে বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল গড়ে তোলার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল আওয়ামী লীগের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী ওয়াদার অংশ হিসেবে ২০১৭ সালে দেশের প্রত্যেকটি বিভাগীয় শহরে সরকারি উদ্যোগে বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়।
২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এক মতবিনিময় সভায় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম নগরে এ শিশু হাসপাতাল গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। চট্টগ্রামে এই হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ২ একর জায়গার সন্ধান করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তখন ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ পায়। এই প্রকল্পের স্থান খোঁজার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী চমেক হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জালাল উদ্দিনকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
তিনি নগরের সরকারি সিটি কলেজের সামনে রেলওয়ের খালি জায়গায় শিশু হাসপাতাল নির্মাণের জন্য সাড়ে তিন একর জায়গা চিহ্নিত করে গত বছরের ২৫ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠান। কিন্তু ওই জায়গা নিয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের আপত্তির কারণে প্রস্তাবটি আটকে যায়। এর আগে শিশু হাসপাতাল প্রকল্পের জন্য নগরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তিনটি জায়গা চিহ্নিত করেছিল। এগুলো ছিল, আগ্রাবাদ আমেরিকান হাসপাতালের সীমানায়, সিনেমা প্যালেসের দক্ষিণ পাশে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সীমানা ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গোঁয়াছি বাগান এলাকায়।
কিন্তু সেসব জায়গা বেদখল হয়ে থাকার কারণে সেখানে হাসপাতাল নির্মাণের আগ্রহ দেখায়নি প্রকল্পের স্থান নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। শেষ পর্যন্ত জায়গা না পাওয়ায় শিশু হাসপাতাল প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখছে না। তবে সরকারি শিশু হাসপাতালের জন্য মাত্র দুই একর জায়গা পাওয়া না গেলেও এখন একটি বেসরকারি হাসপাতালকে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ৬ একর জায়গা বন্দোবস্ত করে রেখেছে।
জানা গেছে, ৫০০ শয্যার একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ গড়ে তোলা হবে সিআরবি এলাকায় বাংলাদেশ রেলওয়ের জমিতে। সিআরবি এলাকায় বিদ্যমান রেলওয়ে বক্ষব্যাধি হাসপাতাল সংলগ্ন ৬ একর জমি জুড়ে এই হাসপাতাল ও কলেজ গড়ে তোলা হবে। পিপিপি অর্থাৎ পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় ৪৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। তবে সরকারি জমিতে হলেও এই হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা হবে সম্পূর্ণ বেসরকারি মালিকানায়।
যেহেতু বেসরকারি মালিকানায় পরিচালিত হবে সেহেতু এ হাসপাতালের চিকিৎসাব্যয় আর সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকছে না অন্য দশটি বেসরকারি হাসপাতালের মতোই। ইতিমধ্যে সিআরবি এলাকায় কর্তৃপক্ষ একটি সাইনবোর্ডও টাঙ্গিয়ে দিয়েছে।
প্রকল্পটি অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকেও নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। এর আগে ডিপিপি প্রস্তুত ও চূড়ান্তের পর গত বছরের শুরুর দিকে প্রকল্পটি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পায়। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি এ প্রস্তাবে সরকার নীতিগত অনুমোদনও দেয়।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/২১৫০
আপনার মতামত জানানঃ