মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। অনেকের আয়ে পথ বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জীবন-জীবিকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় শ্রমজীবী মানুষ। এভাবে চলতে থাকলে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়বে এসব মানুষের। বিশেষ করে চায়ের দোকানদার, সাইকেল-ভ্যান-রিকশা সারাইয়ের দোকানদার, ইজিবাইকচালক ও দিনমজুররা সবচেয়ে বেশি শিকার এর।
আর তাই কর্মহীন এই দুর্যোগ সময়ে পরিবারের পেটের যন্ত্রণা দমাতে অসহায় তারা জড়িয়ে পড়ছে ডাকাতির মত অপরাধকর্মে। লকডাউনে কাজ না থাকায় ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়ছে বেশ কয়েকটি চক্র। লকডাউনের সুযোগে স্বল্প সময়ে অধিক লাভের আশায় তৎপর হয়ে উঠেছে কর্মহীন অনেকে।
রাজধানীতে ডাকাতিতে জড়িত তিনটি চক্র রয়েছে। দুটি চক্রকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধরলেও আর একটি চক্রের সন্ধান কাজ করছে তারা। মিরপুর বেড়িবাঁধে একটি ডাকাতির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এসব তথ্য পায় পুলিশ।
শনিবার (১০ জুলাই) বিকালে মিরপুর উপ-পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এ জেড এম তৈমুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ৬ জুলাই রাতে শাহআলী থানাধীন চিড়িয়াখানা লেকের দক্ষিণে এইচ ব্লক এর সামনে মুরগি বোঝাই একটি পিক-আপ ভ্যান আটকে মুরগি বোঝাই পিক-আপ নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরবর্তীতে বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে ৯ জুলাই কেরানীগঞ্জ কলাতিয়া বাজার এলাকা থেকে তা উদ্ধার করা হয়। এসময় ডাকাতিতে জড়িত হৃদয়, সোহেল রানা এবং রায়হানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডাকাতির ঘটনার ব্যবহৃত একটি পিক-আপ জব্দ করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি পিক-আপ, একটি মোবাইল ফোন নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। পিক-আপ এর মালিক ও চালক রায়হান এরই মধ্যে এ ঘটনার দায় স্বীকার করেছে।
তৈমুর রহমান আরও বলেন, লকডাউনকে কেন্দ্র করে অনেকে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। যেকোনও ধরনের অপতৎপরতা প্রতিরোধে পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে। লকডাউন কেন্দ্রিক নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
রাতে বেড়িবাঁধ এলাকাটি অপরাধপ্রবণ হয়ে পড়ে এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের কর্মকর্তা বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। লকডাউনকে কেন্দ্র করে রাতেও আমাদের চেকপোস্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা স্বাভাবিক একটা ব্যাপার যে, কর্মসংস্থানের অভাবে মানুষ তার সঠিক চেতনাবুদ্ধি লোপ পাবে। অভাবের তাড়নায় জড়িয়ে পড়বে বিভিন্ন অপরাধে। কিন্তু সেই অপরাধ দমানোর কৌশল কেবল আইন ও শাস্তি দ্বারা সমাধানের পথ খুঁজলে হবে না, এর পাশাপাশি অসহায় কর্মহীন মানুষের পাশেও দাঁড়াতে হবে। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধমূলক সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নতুবা একদিকে যেমন এই অপরাধ কমবে না অন্যদিকে আরও অসহায় পরিস্থিতির মধ্যে পড়বে অসহায়রা।
তারা বলেন, সরকার ও প্রশাসনের উচিত কর্মহীন মানুষগুলোর বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা নিশ্চিত করা। সরকারের তরফ থেকে যেসব বরাদ্দ আসে তার সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা। কিন্তু সরকার কেবল ব্রিফিংয়ে সাহায্য সহযোগিতার আহ্বান এবং বরাদ্দ ঘোষণা করেই নিজেদের দায়মুক্ত করে গুটিয়ে পড়েন। প্রশাসন মাঠে থাকেন কেবল অসহায় মানুষদের বিরুদ্ধে জরিমানা করার জন্য। তাদের গাছের গোড়া কেটে পানি দেওয়ার নীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। অসহায় মানুষের সহযোগিতা নিশ্চিত করে অপরাধ প্রবণতা রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। নতুবা রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা আর অপরাধ প্রবণতার বৃদ্ধি বৈ সুষ্ঠু কোনো সমাধান আসবে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯০৩
আপনার মতামত জানানঃ