সোভিয়েত বাহিনী প্রত্যাবাসন শেষে আফগানিস্তানে তালিবানরা ক্ষমতায় এসেছিল। আল-কায়েদা আফগানিস্তানে সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপন করেছিল। এবার আবার মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী প্রত্যাবাসন শেষে আফগানিস্থানে আবারও সন্ত্রাস দেখা দিতে পারে। তালিবান, আল-কায়েদা বা দায়েশ নামে নতুন কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আগমন ঘটতে পারে। প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণির পতন ঘটিয়ে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে তালিবানরা। মনগড়া শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠিত করে দেশকে ৯০ এর মতো উগ্রপন্থার প্রজনন ভূমিতে পরিণত করতে পারে। ইতিমধ্যেই তালিবানরা আফগানিস্তানের এক তৃতীয়াংশ দখল নিয়েছে।
‘এমন অনেক জেলা তালিবান দখল করেছে যেগুলোর কৌশলগত গুরুত্ব তেমন হয়ত নেই কিন্তু এসবের প্রোপাগান্ডা মূল্য অনেক। আগামি মৌসুমের যুদ্ধের কেন্দ্রে থাকবে শহরগুলো দখলের লড়াই’, বলেন তামিম আসে, সাবেক আফগান উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী যিনি এখন কাবুলে গবেষণা সংস্থা ইন্সটিটিউট অব ওয়ার অ্যান্ড পিস স্টাডিজের প্রধান।
সেনা প্রত্যাহারের পর দূতাবাস নিয়ে এখন উদ্বেগ আফগানিস্তান জুড়ে। ১৯৮৯ দালের পুনরাবৃত্তি নাকি নিজেদের পিঠ বাঁচানোর বাইরে একবার আফগানিস্তান নিয়ে ভাববে বিদেশী দূতাবাসগুলো, এটাই আলোচনা মূল বিষয় হয়ে উঠছে।
কী ঘটেছিল ১৯৮৯ সালে?
১৯৮৯ সালে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আফগানিস্তান ডেস্কের দায়িত্বে ছিলেন আফগানিস্তানে সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্টিভেন ইভান্স বিগত দুই দশকের যুদ্ধের পর সম্প্রতি সময়ে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের ঘটনায় ‘৮৯ সালের স্মৃতিচারণা করেন।
ওই বছরেরই জানুয়ারিতে, কাবুল যখন তীব্র শীতে কাতর, এমনই একদিন সাদা একটি কাগজে ‘ফাইনাল ওয়ার্নিং (চূড়ান্ত সতর্কতা)’ শিরোনামে তাকে যখন একটি নোট পাঠানো হয়। কাবুলে তৎকালীন ব্রিটিশ চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স তার সেই নোটে লিখেছিলেন, “আপনাকে আমার পরামর্শ দেয়া জরুরি যে এখন স্বাভাবিক ফ্লাইট চালু রয়েছে এবং কোনো দেরী না করে আপনি কাবুল ছেড়ে চলে যান।”
ব্রিটেনও একদিন কাবুলে দূতাবাস বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে ইভান্স বলেন, “ব্রিটিশ মন্ত্রীরা মনে করলেন এ ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই, যদিও আমাদের দূতাবাসের অনেক কর্মী সেসময় তাদের কাজ চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।”
তার ঠিক দশ দিন পর ১৯৮৯ সালের ৩০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স তার দূতাবাসে এক ভাব-গম্ভীর অনুষ্ঠানে আমেরিকান পতাকা নামিয়ে ফেলেন। তার এই সিদ্ধান্ত যে রাজনৈতিক ছিল, তা নিয়ে দ্বিধা নেই। এর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সোভিয়েত সৈন্যদের শেষ দলটি আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন। ঠিক সে সময় পশ্চিমা কূটনীতিকরা যেভাবে একে একে দূতাবাস বন্ধ করে চলে যাচ্ছিলেন, তাতে শঙ্কিত হয়ে পড়ছিলেন কাবুলে মস্কো সমর্থিত আফগান সরকার।
ব্রিটেনও একদিন কাবুলে দূতাবাস বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে ইভান্স বলেন, “ব্রিটিশ মন্ত্রীরা মনে করলেন এ ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই, যদিও আমাদের দূতাবাসের অনেক কর্মী সেসময় তাদের কাজ চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।”
তবে দূতাবাস বন্ধ করলেও যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল উত্তেজনা কমলে তারা কাবুলে ফিরে আসবে। কিন্তু ২০০১ সালে তালিবানকে উৎখাতের আগ পর্যন্ত কাবুলে তাদের দূতাবাস বন্ধ ছিল।
আবারও কি বন্ধ হবে দূতাবাস?
সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে আবারও। প্রায় ২০ বছর পর নেটো সৈন্যরা যখন আফগানিস্তান থেকে চলে যাচ্ছে, আবারো কাবুলে অনেক কূটনীতিকের মধ্যে চিন্তা ঢুকেছে তাদের কি এখন চলে যাওয়া উচিৎ নাকি থাকা উচিৎ।
যদিও এ নিয়ে ইভান্স বলেন “নিরাপত্তা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি না হলে দূতাবাস বন্ধ করে দিয়ে তখনকার মত কোন সংকেত আমরা কোনোভাবেই দিতে চাই না।”
কাবুলে বিস্ফোরক নিরোধী দেয়াল এবং কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা অনেক দূতাবাস এবং ত্রাণ সংস্থার অফিসগুলোর ভেতরে থেকেও ইভান্সের সুর শোনা যাচ্ছে। তবে ধারণার চেয়েও আগেভাগে মার্কিন সৈন্যদের প্রত্যাহার এবং একের পর এক অঞ্চল তালিবানের দখলে চলে যাওয়ার ঘটনায় সেই সংকল্পে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। এমনিতেই নিরাপত্তা এবং কোভিড পরিস্থিতির কারণে সাম্প্রতিক সময়ে ধীরে ধীরে কাবুলে দূতাবাসগুলোতে কর্মীর সংখ্যা কমেছে। কিন্তু এখনকার অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে অনেকেই ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছেন যাতে বিপদ বাড়লে দ্রুত চলে যাওয়া যায়।
এ সপ্তাহে কাবুল থেকে বেলজিয়াম দূতাবাসের অবশিষ্ট কূটনীতিকরাও চলে গেছেন। অস্ট্রেলিয়া মে মাসে তাদের দূতাবাসে বন্ধ করে দিয়েছে। ফরাসি দূতাবাস প্রায় খালি। ব্রিটেন এবং অন্যরা ক্রমাগত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে।
য়ুরোপীয় একটি দূতাবাসের একজন কূটনীতিক এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রতিটি দেশের রাজধানীতে সরকারগুলো এখন কাবুলের নিরাপত্তা নিয়েই সবচেয়ে বেশি চিন্তিত। গত কয়েকমাস কাবুলে আমরা সবাই নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলছি কারণ আমরা আফগানিস্তানে প্রচুর বিনিয়োগ করেছি এবং আমরা এখানে থাকতে চাই।
এদিকে, এ সপ্তাহে কাবুল থেকে বেলজিয়াম দূতাবাসের অবশিষ্ট কূটনীতিকরাও চলে গেছেন। অস্ট্রেলিয়া মে মাসে তাদের দূতাবাসে বন্ধ করে দিয়েছে। ফরাসি দূতাবাস প্রায় খালি। ব্রিটেন এবং অন্যরা ক্রমাগত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে।
আশাহত হচ্ছেন আগফানরা
তবে বিদেশীদের চেয়ে আরো বেশি উদ্বিগ্ন সেসব আফগান নাগরিক যারা দূতাবাসগুলোতে কাজ করেন এবং বিদেশী সৈন্যদের দোভাষী হিসাবে যারা কাজ করেছেন। তারা গভীর উদ্বেগের সাথে বিদেশী দূতাবাসগুলোর গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন। ঐ সব আফগান মনে করছেন বিদেশীদের সিদ্ধান্তের সাথে তাদের নিজেদের পরিণতি জড়িত।
কোনো জাতিকে যদি বার বার বলা হয় তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই, ব্যর্থতাই তাদের নিয়তি তাহলে বিদেশীদের বিকল্প হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠার সাহস তারা কোথায় পাবে?
এ প্রসঙ্গে, সাবেক আফগান উপমন্ত্রী এবং বর্তমানে কাবুলে একটি যোগাযোগ সংস্থার নির্বাহী মোকাদ্দেছা ইউরিশ বলেন, কোনো জাতিকে যদি বার বার বলা হয় তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই, ব্যর্থতাই তাদের নিয়তি তাহলে বিদেশীদের বিকল্প হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠার সাহস তারা কোথায় পাবে?
মে মাসে অস্ট্রেলিয়া কাবুলে তাদের দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে অনেক অফগান ক্ষুব্ধ হয়েছিল। ব্রিটিশ দূতাবাস এক টুইট করে অফগানিস্তান থেকে সমস্ত ব্রিটিশ নাগরিকদের যত দ্রুত সম্ভব চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মিজ ইউরিশ বলেন, এই প্রত্যাহারের ভেতর দিয়ে বাকি বিশ্ব যেন পূর্বাভাস দিচ্ছে যে আমাদের সামনে ভয়ঙ্কর সময়, আবার একটি গৃহযুদ্ধ। সামনে লড়াই তীব্র হওয়া নিয়ে সমস্ত আফগানের মধ্যে আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে আছে সবাই
তবে সবার নজর যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। ব্রিটেন বরাবরের মত যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত-গতিবিধি খেয়াল করছে। শুধু ব্রিটেন নয়, কাবুলে বহু বিদেশী দূতাবাসই অপেক্ষা করছে যুক্তরাষ্ট্র কী করে, সেটা দেখার জন্য।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে কাবুলে তাদের দূতাবাসের নিরাপত্তায় কয়েকশ সৈন্য তারা রেখে দেবে, যদিও এর পেছনে অনেক ঝুঁকি রয়েছে। এ সপ্তাহে তালিবানের একজন মুখপাত্র বলেছেন, যে কোনো বিদেশী সৈন্যকে ‘দখলদার বাহিনী’ হিসাবে বিবেচনা করা হবে। তালিবান বলছে কিছু সৈন্য রেখে যাওয়ার এই সিদ্ধান্ত সৈন্য প্রত্যাহার চুক্তির বরখেলাপ।
তালিবানের মুখপাত্র সুহেল শাহিন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘মীমাংসা আলোচনার সময় সবকিছু নিয়েই কথা হয়েছে, এবং শেষ পর্যন্ত আমেরিকানরা রাজি হয় যে তারা তাদের সব সৈন্য, পরামর্শক, প্রশিক্ষক প্রত্যাহার করবে।’
দূতাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায় তালিবানরা
তবে তালিবান তাদের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা এবং বৈধতা নিয়ে আগ্রহী। ফলে তারাও বিদেশী দূতাবাসগুলোর দিকে নজর রাখছে। গত মাসে, আফগানিস্তানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিশেষ দূত টমাস নিকলাসেন দোহায় তালিবান নেতাদের কাছে নিরাপত্তার ইস্যু তুললে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তালিবান এক বিবৃতি জারি করে বলে যে কাবুলে সমস্ত কূটনৈতিক মিশন এবং ত্রাণ সংস্থার অফিসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
দোহায় কেতাদুরস্ত কজন তালিবান কর্মকর্তার কথা কি তালিবানের ফিল্ড কমান্ডাররা শুনবে? তালিবান চায় বিদেশী কূটনীতিকরা যেন কাবুলে থেকে যান কিন্তু তারা যেন কাবুলের সরকারকে সমর্থন না দেয়।
তবে তালিবানের ঐ আশ্বাসে সবাই ভরসা পাচ্ছেন না। পশ্চিমা একজন কূটনীতিকের ভাষায়, দোহায় কেতাদুরস্ত কজন তালিবান কর্মকর্তার কথা কি তালিবানের ফিল্ড কমান্ডাররা শুনবে? তালিবান চায় বিদেশী কূটনীতিকরা যেন কাবুলে থেকে যান কিন্তু তারা যেন কাবুলের সরকারকে সমর্থন না দেয়।
নিরাপত্তার ট্রাম কার্ড কাবুল বিমানবন্দর
কাবুলে গ্রিন জোন নামে পরিচিত কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনির বাইরে যেসব দূতাবাস রয়েছে তারা এখন ঐ বেষ্টনির মধ্যে চলে আসার পরিকল্পনা করছে। বেষ্টনির মধ্যে একাধিক বেষ্টনি তৈরির পরিকল্পনা করছে অনেক দূতাবাস।
তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে কাবুল বিমানবন্দরের ভবিষ্যৎ। সম্ভাব্য বিপদের মুখে আফগানিস্তান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য এই বিমানবন্দর অপরিহার্য। শুধু বিদেশীদের জন্যই নয়, আফগানদের জন্যও এটি সত্য।
তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে কাবুল বিমানবন্দরের ভবিষ্যৎ। সম্ভাব্য বিপদের মুখে আফগানিস্তান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য এই বিমানবন্দর অপরিহার্য। শুধু বিদেশীদের জন্যই নয়, আফগানদের জন্যও এটি সত্য।
বর্তমানে তুরস্ক এবং আমেরিকান সৈন্যরা হামিদ কারজাই বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে। আশা করা হচ্ছে, বিদেশী সৈন্য প্রত্যাহারের পরও আফগান সরকারের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আওতায় তুরস্ক এই বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থেকে যাবে।
এখনই পিঠ দেখাচ্ছে না দূতাবাসগুলো
তবে রাজনৈতিক, নিরাপত্তা এবং আইনি নানা ঝামেলায় তুরস্কের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের এ নিয়ে কোনো চূড়ান্ত বোঝাপড়া এখনও হয়নি। এছাড়াও, তালিবান এ ধরনের ব্যবস্থার সরাসরি বিরোধিতা করছে।
এখনও পর্যন্ত অধিকাংশ বিদেশী দূতাবাস ইঙ্গিত দিচ্ছে তারা কাবুল ছেড়ে যাচ্ছেনা। আমেরিকার পরিকল্পনা নিয়ে সম্প্রতি মিডিয়াতে কিছু কানাঘুষোর পর, কাবুলে মার্কিন দূতাবাসের টুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এক বার্তায় বলা হয়েছে, ‘কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস খোলা এবং খোলাই থাকবে।’
পশ্চিমা একটি দেশের একজন কূটনীতিক বলেন, কাবুলে দূতাবাসগুলো খোলা থাকবে। কিন্তু আমরা একটি স্পর্শকাতর অবস্থা পার করছি এবং প্রতিদিন পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি।
তবে শুধু কাবুল নয়, সারা আফগানিস্তানের যেভাবে নিরাপত্তা পরিস্থিতি দ্রুত বদলাচ্ছে সেদিকে সবারই এখন উদ্বিগ্ন নজর, আফগান এবং বিদেশী সবারই।
পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে এখনও কাবুলে সিংহভাগ বিদেশী কূটনীতিক নিজেদের শান্ত রাখার চেষ্টা করছেন। যতটা সম্ভব স্বাভাবিকভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১০১৫
আপনার মতামত জানানঃ