কঠোর লকডাউন চলছে গত ১ জুলাই থেকে। লকডাউনের আগে ত্রাণ পায়নি হতদরিদ্র এবং দিন এনে দিন খাওয়া মানুষেরা। এদিকে তারা যখন জীবিকার জন্য বের হচ্ছে তখন তাদের কারাগারে পাঠানো বা জরিমানা করা হচ্ছে।
এমন চিত্র সরকারের অক্ষমতা প্রকাশ করে। খাদ্য নিশ্চিত না করে খাদ্য উপার্জনের পথ বন্ধ করে দেয়ার মত বর্বরতম আচরণ আরও অনেক ক্ষেত্রেই ঘটছে। তবে এটা বর্বরতার চূড়ান্ত ফলাফল।
এমন অপরাধ, যা মূলত অপরাধ না— তার শাস্তি মওকুফের বিষয়ে চিন্তাভাবনা
চলমান লকডাউনে জীবন ও জীবিকার তাগিদে এবং জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া সহস্রাধিক হতদরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষকে কারাগারে পাঠানো এবং জরিমানা আরোপের অভিযোগ তুলে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।
পাশাপাশি এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থিক সামর্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তাদের ওপর আরোপিত জরিমানা মওকুফ, বাতিল এবং তাদের আইনি সহায়তা দিয়ে দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া ডিএমপি অর্ডিন্যান্সের অপপ্রয়োগ যেন না হয় সে বিষয়ে সুষ্ঠু তদারকির জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তারা।
এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও ব্লাস্টের মুখ্য আইন উপদেষ্টা বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, ‘সরকারি বিধিনিষেধ সবাইকে মেনে চলতে হবে, তবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আটকে না রেখে তারা যেন দ্রুত সহায়তা পান সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।’
সংস্থাটির অনারারি নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন বলেন, ‘লকডাউনের বিধিনিষেধ এমনভাবে প্রয়োগ করা উচিত না যাতে সুরক্ষার নামে জনগণের হয়রানি হয়। পাশাপাশি গ্রেপ্তারের পরে কেন জেল-জরিমানা হবে সেটা নিয়ে জরুরি পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।’
ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিম বলেন, ‘জরিমানা কোনো সমাধান নয়।’
সংস্থাটির গবেষণা বিশেষজ্ঞ তাকবীর হুদা বলেন, ‘দরিদ্র ব্যক্তিদের জরিমানা না দিয়ে বা গ্রেপ্তার না করে তাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছে দিলে তারা নিশ্চই বিধিনিষেধ মেনে চলতে পারবেন।’
যেসব ধারায় শাস্তি প্রয়োগ করা হয়েছে
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ব্লাস্ট বলছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, চলমান লকডাউনে এ পর্যন্ত সহস্রাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যাদের অধিকাংশই তরুণ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের ডিএমপি অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৬ এর ৬৯, ৭৭, ৭৮ এবং ১০০ ধারার অধীনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। এই ব্যক্তিদের বেশিরভাগই সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষ, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এদের অধিকাংশেরই তাদের ওপর আরোপিত জরিমানা/মুচলেকার অর্থ এবং আইনজীবীর ফি পরিশোধ করার ন্যূনতম সামর্থ্যটুকুও নেই।
সংবিধানের ১৫(ক) নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে নাগরিকদের অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণসমূহের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করবে রাষ্ট্র এবং সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩১ অনুযায়ী আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার এবং অনুচ্ছেদ ৩২ এ আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হতে কোনো ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না বলা হয়েছে।
লকডাউনে জরুরি প্রয়োজনে বা জীবন ও জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া অসহায় মানুষদের আটক করে তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা কঠিন হচ্ছে, ফলে তারা আরও স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা, জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলে মাস্ক পরিধানের প্রয়োজনীয়তা, করোনা মোকাবিলায় সরকার প্রদত্ত বিধিনিষেধ অমান্য করলে অমান্যকারীর বিরুদ্ধে কী কী আইনি পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে— এই বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার অনুরোধও জানিয়েছে ব্লাস্ট।
এসডব্লিউ/এমএন/ওজেএ/২২৩৮
আপনার মতামত জানানঃ