আফগানিস্তানে তালিবানের দাপট বাড়ছে। সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে জঙ্গিদের একের পর এক হামলায় কয়েক ডজন জেলা দখল হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ নগরীগুলোতেও ঢুকে পড়তে শুরু করেছে তালিবান যোদ্ধারা। সরকারি বাহিনীর সদস্যরা আটক হয়েছে, আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছে, সামরিক সরঞ্জামও চলে গেছে জঙ্গিদের হাতে। আফগানিস্তানে তালিবানদের এই অগ্রাভিযান রুখতে এবার নারীরা হাতে তুলে নিয়েছে অস্ত্র।
আফগানিস্তানের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের জের ধরে তালিবান বেশ কিছু জেলা দখল করে নেয়ার পর তালিবানের বিরুদ্ধে গণ-প্রতিরোধ বাহিনী গঠন করা হচ্ছে। এসব বাহিনীতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আফগান নারী অংশগ্রহণ করছেন।
আফগানিস্তানের জুযজান প্রদেশের বহু নারী নিরাপত্তা বাহিনীর সমর্থনে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন বলে দেশটির গণমাধ্যমগুলো খবর দিয়েছে।
জুযজানের প্রাদেশিক সরকার এক বিবৃতি প্রকাশ করে এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছে, এসব নারী অস্ত্র হাতে নিয়ে এই বার্তা দিতে চান যে, তারা তাদের শহরগুলোতে কোনো অবস্থায় তালিবানের অনুপ্রবেশ মেনে নিতে রাজি নন।
রাজধানী কাবুলের উত্তরে অবস্থিত কুহ্দামান শহরের শত শত মানুষ এক স্থানে সমবেত হয়ে পুলিশের কাছ থেকে অস্ত্র গ্রহণ করে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি নিজেদের সমর্থন ঘোষণা করেছেন।
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে এসব সশস্ত্র সম্মেলন আয়োজনে আমানুল্লাহ গুজারসহ বেশ কয়েকজন সাবেক মুজাহিদ কমান্ডার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। ‘হেজবে ওয়াহদাত’ দলের নেতা ও প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির উপদেষ্টা মোহাম্মাদ মোহাক্কেক গণ-বাহিনী সংগঠিত করার কাজে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় বল্খ প্রদেশের রাজধানী মাজার শরিফ পৌঁছেছেন। আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় নানগারহার প্রদেশ থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, সেখানকার সাবেক মুজাহিদ নেতা হজরত আলীর নেতৃত্বে তালিবানের বিরুদ্ধে ‘গণ-বিদ্রোহ’ ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে তালিবান গতকাল (বুধবার) এক বিবৃতি প্রকাশ করে এই মর্মে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে যে, যারা এ ধরনের বাহিনী গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছেন ‘তাদেরকে ক্ষমা করা হবে না।’ তালেবানের বিবৃতির বক্তব্যের ধরন থেকে বোঝা যায় তারা ‘ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পর’ এসব উদ্যোক্তাকে শাস্তি দেয়ার কথা বুঝিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার ঘোষণা দেয়ার পর দেশজুড়ে তালিবান যোদ্ধারা আক্রমণ বাড়িয়েছে। তালিবানের এমন আক্রমণে আফগানিস্তানে জাতিসংঘের বিশেষ দূত দেবরাহ লিওনস সতর্ক করে বলেছে, ইতোমধ্যে আফগানিস্তানের ৩৭০টি জেলার মধ্যে তালিবান ৫০ অধিক জেলা দখল করে নিয়েছে। তালিবানের এই অগ্রগতি নিকট ভবিষ্যতে অনেক দেশের জন্য হুমকিস্বরুপ।
তবে আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তাকৌশল বিষয়ক উপমন্ত্রীসহ সরকারি কর্মকর্তারা-তালিবানের এই সামরিক অগ্রযাত্রা ক্ষণস্থায়ী বলে মন্তব্য করছেন। তাদের দাবি, আফগান বাহিনী দ্রুত তালিবান যোদ্ধাদের হটিয়ে দেবে।
আফগান স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী নকিবুল্লাহ ফায়েক তালিবানের অগ্রগতিতে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এক মাসের মধ্যে তালিবান এত শক্তি কোথা থেকে পেল! তারা কিভাবে এত অল্প সময়ে মাজার-ই শরিফ, ফারিয়াব এবং তাকহারে অগ্রসর হলো? এটাকে প্রোপাগাণ্ডা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা সাময়িক, তালিবান নিজেরাই বিশ্বাস করে না যে, তারা এসব এলাকায় পৌঁছাতে পেরেছে।
এভাবে তালিবানের একের পর এক অঞ্চল দখলে নেওয়া আফগানিস্তানের নাগরিকদের জন্য ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। দেশটিতে এখন যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক অঙ্গন মিলিয়ে যে ক’জন সেনা রয়েছে তাদের বেশিরভাগই রাজধানী কাবুলে এবং বাগরাম বিমানঘাঁটিতে অবস্থান করছে। তারা এখন মূলত নিজ নিজ দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছে।
আর এ পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানে আবার থাবা বসাচ্ছে তালিবান। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বাহিনীর সহায়তায় আফগান নিরাপত্তা বাহিনী তালিবানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তাদের সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এখন আফগান বাহিনী সে সহায়তা পাচ্ছে না।
গত কয়েক সপ্তাহে আফগান বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর আকাশ সহায়তা অনেক কমে গেছে। চুক্তির শর্তের কারণে এবং যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানগুলো এখন আফগানিস্তানের বাইরের বিমানঘাঁটিতে অবস্থান করায় এমনটা হচ্ছে। আফগানিস্তানের বিমান বাহিনী এই শূন্যতা পূরণ করতে পারছে না।
আগামী শুক্রবার আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির হোয়াইট হাউজে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা। যেখানে দুই নেতা আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার নিয়ে কথা বলবেন।
এদিকে, তালিবান সহিংসতার মুখে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের গতি কমিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী।
পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহারের সময়সীমা এখনও ১১ সেপ্টেম্বরে নির্ধারিত আছে। তবে তা পরিবর্তন হতে পারে। এরই মধ্যে আফগানিস্তান থেকে অর্ধেক সেনা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এদিকে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের পর দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোয়গু।
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাবিষয়ক নবম মস্কো সম্মেলন শুরুর প্রথম দিন স্থানীয় সময় বুধবার তিনি এ সতর্কবার্তা দেন বলে জিও নিউজের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
সম্মেলনে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, আফগানিস্তানের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির প্রতিবেশী দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ভূমিকা পালন করা উচিত।
আফগানিস্তানের গোষ্ঠীগুলোকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে মূল উদ্যোগ প্রতিবেশী দেশ, বিশেষ করে পাকিস্তান ও ইরানের নেয়া উচিত বলে মনে করেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী শোয়গু।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫১৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ