করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে দেশের সাত জেলায় কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে আগামী ৩০ জুন (বুধবার) রাত ১২টা পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। সোমবার বিকালে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান। এদিকে রাজধানীর তিনটি কেন্দ্রে ফাইজার-বায়োএনটেকের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকা শুরু হয়েছে।
৭ জেলায় লকডাউন
যেসব জেলায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে সেগুলো হলো মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ। এসব জেলায় গণপরিবহন বন্ধ থাকবে।
সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রকোপ ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ার এবং ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার এই সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম যখন এই সিদ্ধান্তের কথা জানাচ্ছিলেন, তখন তিনি ‘ব্লক’ শব্দটি উল্লেখ করেন। যদিও এই মুহূর্তে বাংলাদেশে সরকারি ভাষায় একটি ‘বিধিনিষেধ’ চালু আছে, যেটার কার্যকারিতা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন আছে। পরে এক সরকারি প্রজ্ঞাপন দিয়ে এটাকে ‘করোনাভাইরাসজনিত রোগের বিস্তার রোধকল্পে সার্বিক কার্যাবলি/চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ’ বলে অভিহিত করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞা মঙ্গলবার ভোর থেকে শুরু হয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
এ সময়ে শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা যেমন- কৃষি উপকরণ, খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহণ, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ,পানি, গ্যাস/জ্বালানি,ফায়ার সার্ভিস বন্দরসমূহের কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, গণমাধ্যম, বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ ,তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এবং পণ্যবাহী ট্রাক/লরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
তিনি আরো বলেন, ‘যদি কোনো লোকাল অথরিটি মনে করে তাদের লকডাউন করা দরকার সেটা তারা করতে পারে। সেই অথরিটি তাদের দেয়া হয়েছে।’তবে ঢাকা জেলা নিয়ে অতি শিগগিরই কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না বলে তিনি জানান।
ঢাকায় দেওয়া শুরু ফাইজারের টিকা
রাজধানীর তিনটি কেন্দ্রে আজ সোমবার সকাল থেকে ফাইজারের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। এ ছাড়াও শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকা দেওয়া হচ্ছে।
চীনে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা চলমান টিকা কার্যক্রমে অগ্রাধিকার পাবেন। এ ছাড়া তিন কেন্দ্রে প্রাথমিকভাবে কিছু মানুষকে ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে। এই টিকা গ্রহীতাদের সাত থেকে ১০ দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এই সময়ে বড় কোনো সমস্যা দেখা না দিলে এই টিকা দেওয়ার পরিমাণ বাড়ানো হবে।
ফাইজারের এক লাখের কিছু বেশি টিকা বাংলাদেশ পেয়েছে করোনার টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে। এই টিকা অতি শীতল তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। দেশে শুধু ঢাকা শহরেই এই টিকা দেওয়া হবে।
দেশে এখন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া চলছে। গতকাল শনিবার থেকে চীনের সিনোফার্মের টিকার প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। ফাইজারের টিকা দেওয়া শুরুর পরে এক সঙ্গে তিন ধরনের টিকা দেওয়া চলছে।
১৮ বছরের ওপরের সবাইকে পর্যায়ক্রমে করোনাভাইরাসের টিকার আওতায় নিয়ে আসার উদ্দেশ্য সামনে রেখে সরকার গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে গণ টিকাদান কর্মসূচি শুরু করে। কিন্তু, টিকার স্বল্পতার কারণে গত ২৬ এপ্রিল সরকার প্রথম ডোজ টিকাদান বন্ধের ঘোষণা দেয়। এর সপ্তাহখানেক পর একই কারণে সারাদেশের সবগুলো কেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়াও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ভারতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সেরাম ইনস্টিটিউট অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সরবরাহে ব্যর্থ হলে বালাদেশের টিকাদান কর্মসূচিতে প্রভাব পড়ে। চুক্তি অনুযায়ী, সেরাম থেকে ছয় মাসের মধ্যে বাংলাদেশের তিন কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার কথা ছিল। জানুয়ারিতে সেরাম প্রথম দফায় ৫০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করে। যার মধ্যে ওই মাসে মাত্র ২০ লাখ ডোজের একটি চালান ঢাকায় পৌঁছায়। এরপর সেরাম থেকে বাংলাদেশে আর কোনো চালান আসেনি।
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ/১৭৫৪
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ