আফগানিস্তান থেকে সব সেনা প্রত্যাহার করছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পদক্ষেপে আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হোয়াইট হাউসে যাচ্ছেন আফগান প্রেসিডেন্ট গনি।
আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি ও দেশটির শান্তিপ্রক্রিয়ার প্রধান আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ আগামী শুক্রবার হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার শুরু হওয়ার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি আফগান বাহিনীর সঙ্গে তালিবানের সংঘর্ষ অনেক বেড়ে গেছে। বৈঠকে তালিবান নিয়ন্ত্রণের উপায় নিয়েই বাইডেনের সঙ্গে কথা বলবেন গনি। বার্তা সংস্থা এএফপি ও আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
সামনা-সামনি অনুষ্ঠিতব্য এই বৈঠকে বাইডেনও গনি আবদুল্লাহকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করবেন যে যুক্তরাষ্ট্র আফগান জনগণের জন্য কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে। এছাড়া দেশটি সশস্ত্র গোষ্ঠীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠবেনা বলেও নিশ্চিয়তা দেবেন বাইডেন। রোববার হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রেসিডেন্ট গনি ও ড. আবদুল্লাহর সফরে সেনাসদস্য প্রত্যাহারের প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তানের টেকসই অংশীদারিত্ব নিয়ে বৈঠকে আলোকপাত করা হবে।’
সফর সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট গনির কার্যালয় থেকে এখন পর্যন্ত কোনও বক্তব্য দেয়া হয়নি। তবে একজন জ্যেষ্ঠ আফগান কর্মকর্তা বলেছেন, সেনা প্রত্যাহারের পরও যেন যুক্তরাষ্ট্র আফগান বাহিনীকে সহযোগিতা দেয়া অব্যাহত রাখে তা নিশ্চিত করতে চাইবেন আশরাফ গনি।
তালিবান ও আফগান সরকারের মধ্যকার শান্তি আলোচনার মধ্যেই বাইডেনের সঙ্গে আফগান প্রেসিডেন্টের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কাতারে অনুষ্ঠিত ওই শান্তি আলোচনা তেমন কোনও আলোর মুখ দেখেনি।
কর্মকর্তারা ওই স্থবির আলোচনার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, তালিবান এখন পর্যন্ত কোনও লিখিত শান্তি প্রস্তাব জমা দেয়নি যা মূল আলোচনার সূচনাকারী পয়েন্ট হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
গত এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে বাইডেন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন, চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বরের আগেই আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হবে। এ লক্ষ্যে ১ মে থেকে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা হয়। সেই হামলার জের ধরে আফগানিস্তানে সামরিক অভিযানে যায় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের দীর্ঘতম এ যুদ্ধের ২০ বছর পূর্তির আগেই আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। বাইডেনের ঘোষণা অনুযায়ী ইতিমধ্যে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরুও হয়ে গেছে।
বাইডেন যখন ঘোষণা দেন, তখন আফগানিস্তানে প্রায় আড়াই হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান করছিলেন। তাদের সবাইকে প্রত্যাহার করা হলে আফগানিস্তানে নিরাপত্তাঝুঁকি সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। অনেক বিশ্লেষক আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর তালিবান জঙ্গিরা দেশটির ক্ষমতা দখল করে নিতে পারে।
আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তালিবানের প্রায় প্রতিদিনই লড়াই-সংঘাত অব্যাহত আছে। আফগানিস্তানের অন্তত ৪০টি জেলা দখলে নেওয়ার দাবি করেছে তালিবান।
অবশ্য আফগান প্রেসিডেন্ট গনি আগে দাবি করেছিলেন, দেশটির সরকারি বাহিনী জঙ্গিদের কোণঠাসা করে রাখতে সক্ষম। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তালিবানের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে দেশটির সরকারি বাহিনী।
তালিবানের বক্তব্য
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে আশরাফ গনি ও আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর সফরকে ‘নিস্ফল’ বলে উল্লেখ করেছে তালিবান।
তালিবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, ‘তারা (গনি ও আবদুল্লাহ) তাদের ক্ষমতা ধরে রাখা ও ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন।’ তিনি বলেন, ‘এতে আফগানিস্তানের কোনও উপকার হবে না।’
এদিকে ১১ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ও ন্যাটো সেনারা চলে যাওয়ার পর কাবুলের পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে সেটি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বিমানবন্দর ও বিদেশি দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এরইমধ্যে অস্ট্রেলিয়া কাবুলে তাদের দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে। অন্যদিকে কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে তুরস্ক। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রেরও সায় আছে বলে জানা গেছে। তবে এক বিবৃতিতে তালিবান তুরস্কের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে।
তারা বলেছে, মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানে সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখার ‘কোনও আশা’ রাখা উচিত নয়। দূতাবাস ও বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আফগানদেরই দায়িত্ব।
তালিবানের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের প্রতি ইঞ্চি ভূখণ্ড, এর বিমানবন্দর, বিদেশি দূতাবাস এবং কূটনৈতিক অফিসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আফগানদের দায়িত্ব। ফলে আমাদের দেশে সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখার আশা কারও পোষণ করা উচিত নয়। যদি কেউ এ জাতীয় ভুল করে থাকে তবে আফগান জনগণ এবং ইসলামি আমিরাত তাদের দখলদার হিসেবে বিবেচনা করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।’
আফগানিস্তানে ইসলামি শাসনব্যবস্থার রূপরেখা দিল তালিবান
আফগানিস্তানে প্রকৃত ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে নিজেদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে তালিবান।
রোববার এক বিবৃতিতে কাতারে তালিবানের রাজনৈতিক অফিসের প্রধান মোল্লা আবদুল ঘানি বারদার আফগান শান্তি আলোচনার ব্যাপারে নিজেদের অঙ্গীকারের কথা জানান।
একই সঙ্গে ভবিষ্যৎ সরকারের রূপরেখা পেশ করে তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় বিধানের আলোকে নারীদের তাদের প্রাপ্য অধিকার দেওয়া হবে।
তালিবানের এ মুখপাত্র বলেন, আমরা এটি অনুধাবন করছি যে, বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের পর প্রতিষ্ঠিত হতে যাওয়া সিস্টেমটির ধরন সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং আফগানদেরও প্রশ্ন রয়েছে। কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত সিরিজ বৈঠকে এসব ব্যাপারে তালিবান খুব স্পষ্টভাবে তার অবস্থান তুলে ধরেছে।
মোল্লা আবদুল ঘানি বারদার বলেন, আফগানিস্তান সংক্রান্ত যাবতীয় ইস্যুর সর্বোত্তম সমাধান হলো— একটি ‘প্রকৃত ইসলামি ব্যবস্থা’। আলোচনায় আমাদের অংশগ্রহণ এবং সেখানে আমাদের পক্ষে যে সমর্থন এসেছে, সেটি স্পষ্টতই এ ইঙ্গিত দেয় যে, আমরা পারস্পরিক বোঝাপড়ায় বিশ্বাসী।
রয়টার্স জানিয়েছে, কাতারে আফগান সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তালেবানের আলোচনা বেশ ধীরগতিতে অগ্রসর হচ্ছে। অন্যদিকে ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের আগে দেশজুড়ে সহিংসতা বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতেই তালেবানের তরফ থেকে এ বিবৃতি এলো।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬০৮
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ