করোনা সংক্রমণ রোধে চীন সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া সিনোফার্মের ১১ লাখ ডোজ টিকা প্রদান কার্যক্রম আজ শনিবার (১৯ জুন) রাজধানীসহ সারা দেশে শুরু হচ্ছে। এরই মধ্যে দেশের নির্ধারিত হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে এ টিকা। তবে কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া ফাইজারের টিকা প্রয়োগের কথা থাকলেও তা এখনই শুরু হচ্ছে না বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়।
সরকারের সম্প্রসারিত টিকাদান কার্মসূচি (ইপিআই) সূত্রে জানা যায়, ঢাকা জেলায় চারটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাধ্যমে দেয়া হবে সিনোফার্মের টিকা। এ চার হাসপাতাল হচ্ছে ঢাকা মেডিক্যাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এসব হাসপাতালে একটি করে টিকা কেন্দ্র হবে এবং প্রতিটি কেন্দ্রে দুটি করে বুথ থাকবে। তাছাড়া ঢাকা জেলা বাদে প্রতি জেলায় একটি করে কেন্দ্র হবে এবং প্রতিটি কেন্দ্রে দুটি করে বুথ থাকবে। তবে বুথ চালু করতে হবে টিকাগ্রহীতার সংখ্যার ওপর নির্ভর করে।
ইতিমধ্যে নিবন্ধন করা ব্যক্তিরা সিনোফার্মের টিকা পাবেন। এ পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৭২ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৯ জন। তাদের মধ্যে ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন। এই টিকার দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় আছেন প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। তাদের দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে সিনোফার্ম বা ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে কি না, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দেশে টিকাদান কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাতৃ, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচির আওতায়।
কারা পাচ্ছেন টিকা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাদের নির্দেশনায় ১০ ধরনের মানুষকে চীনের টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়েছে। অধিদপ্তর বলেছে, বাংলাদেশে বসবাসরত সব চীনা নাগরিক এই টিকা পাবেন।
নির্ধারিত টিকাকেন্দ্রে ইতিমধ্যে নিবন্ধন করা ব্যক্তিরা, যারা এখনো কোনো টিকা পাননি, তারা চীনের টিকা পাবেন। টিকা না পাওয়া সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ সদস্যদের এই টিকা দেওয়া হবে। জনশক্তি উন্নয়ন ব্যুরো কর্তৃক অনুমোদিত বিদেশগামী বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীরা এই তালিকায় আছেন।
এই টিকার অগ্রাধিকারের তালিকায় আছেন সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থী এবং সরকারি নার্সিং ও মেডিকেল কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের এই টিকা দেওয়া হবে।
জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই টিকা পাবেন। প্রকল্পের তালিকায় আছে পদ্মা সেতু প্রকল্প, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, এক্সপ্রেস হাইওয়ে প্রকল্প, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প ও রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প। এ ছাড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং কোভিড-১৯ মৃতদেহ সৎকারে জড়িত ব্যক্তিরা সিনোফার্মের এই টিকা পাবেন।
টিকার আওতায় ৩ শতাংশ মানুষ
জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, গণরোগ প্রতিরোধব্যবস্থা বা হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করতে হলে জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনার প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত যে পরিমাণ টিকা পেয়েছে, তাতে ৩ শতাংশ মানুষকে দুই ডোজ করে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কেনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পেয়েছে ৭০ লাখ। একই টিকা উপহার হিসেবে পেয়েছে ৩৩ লাখ। দুই ডোজ করে এই টিকা ৫১ লাখ মানুষকে দেওয়া সম্ভব। তবে বাস্তবে পূর্ণ দ্বিতীয় ডোজ পাচ্ছেন ৪৩ লাখ মানুষ।
অন্যদিকে, চীনের সিনোফার্মের টিকা বাংলাদেশ পেয়েছে ১১ লাখ। এই টিকা দুই ডোজ করে সাড়ে ৫ লাখ মানুষকে দেওয়া যাবে। পাশাপাশি করোনার টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে বাংলাদেশ ফাইজারের টিকা পেয়েছে ১ লাখ। এই টিকার দুই ডোজ করে ৫০ হাজার মানুষকে দেওয়া সম্ভব হবে। সিনোফার্ম ও ফাইজারের টিকা দুই ডোজ করে ৬ লাখ মানুষকে দেওয়া যাবে।
সব মিলিয়ে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্ম ও ফাইজারের টিকার দুই ডোজ করে পাচ্ছেন মোট ৪৯ লাখ মানুষ। তারা দেশের জনসংখ্যার মাত্র ৩ শতাংশ।
এদিকে পরিকল্পনা থাকলেও আজ থেকে ফাইজারের টিকা প্রয়োগ শুরু হচ্ছে না বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন করোনা টিকা কার্যক্রম ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ডা. শাসমুল হক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী ফাইজারের টিকা সংরক্ষণ ও পরিবহনের জটিলতার কারণে রাজধানীর বাইরে প্রয়োগ করা হবে না। রাজধানীর চারটি কেন্দ্রে এ টিকা প্রয়োগের জন্য প্রস্তুতি চলছে। এগুলো হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ফাইজারের টিকা প্রয়োগের আগে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হবে। পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিবেচনা করা হবে। চলতি সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হবে। এরপর এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করে পরে গণপরিসরে প্রয়োগ করা হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ/১৩২৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ