ডেলটা ধরনের বিরুদ্ধে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত ও সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি করোনার টিকা কোভিশিল্ডের একটি ডোজ ৬১ শতাংশ সুরক্ষা দিতে সক্ষম। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত কোভিড ওয়ার্কিং গ্রুপ-এর প্রধান নির্বাহী ডা. এনকে অরোরা সম্প্রতি এই তথ্য জানিয়েছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে বুধবার এন কে অরোরা বলেন, করোনার ডেলটা ধরনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টিকার কার্যকারিতা নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছে ভেলরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ। এই গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতীয় এই ধরনটির বিরুদ্ধে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত ও পুনের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ায় উৎপাদিত করোনার টিকা কোভিশিল্ডের একটি ডোজ ৬১ শতাংশ সুরক্ষা দিতে পারছে। আর যারা এই টিকার দুটো ডোজ নিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে সুরক্ষার হার আরও বেশি, ৬৫ শতাংশ।
শুধু তাই নয়, টিকার দুটো ডোজ নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবধান যত বেশি হবে সুরক্ষার হারও তত বাড়বে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। এই বিষয়টি নিয়ে মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাজ্যে ট্রায়াল চালানো হয়েছে। এর ফলাফল জানাতে গিয়ে এন কে অরোরা বলেন, কোভিশিল্ডের দুটো ডোজের মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান চার সপ্তাহ হলে সেই টিকা করোনার ডেলটা ধরনের বিরুদ্ধে ৫৭ শতাংশ সুরক্ষা দিতে পারে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। এই ব্যবধান আট সপ্তাহ হলে সুরক্ষার হার বেড়ে দাঁড়ায় ৬০ শতাংশে।
এভাবে মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান যত বাড়ে, টিকার কার্যকারিতাও বৃদ্ধি পায়। গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিশিল্ডের দুটো ডোজের মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান ১২ সপ্তাহ হলে সেই টিকা করোনার ডেলটা ধরনের বিরুদ্ধে ৬৩ শতাংশ সুরক্ষা দিতে পারে। আর সময়ের ব্যবধান ১২ থেকে ৪৪ সপ্তাহ হলে সুরক্ষার হার আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭৫ শতাংশে, জানিয়েছেন এন কে অরোরা।
এমন এক সময় তিনি এই তথ্য জানালেন যখন ভারতজুড়ে করোনার টিকা নেওয়ার মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে। বিষয়টি নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত অবস্থান নিয়েছেন এনটিএজিআইয়ের বিশেষজ্ঞরা। এন কে অরোরাসহ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ দুই ডোজের মধ্যবর্তী এই ব্যবধান বাড়িয়ে চার মাস করার পক্ষে। তাদের মতে, এতে সুরক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা এখনকার তুলনায় বাড়বে।
তবে গ্রুপের আরও তিন সদস্য বলেছেন, দুই ডোজের মধ্যবর্তী ব্যবধান বাড়িয়ে তারা তিন মাস করার বিষয়ে সহমত পোষণ করেছিলেন। চার মাস নয়। এ বিষয়ে সরকার পরিচালিত ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি’র সাবেক পরিচালক এম ডি গুপ্ত বলেন, ‘আমরা সময়ের ব্যবধান তিন মাস করার বিষয়ে সহমত পোষণ করেছিলাম। কেননা চার মাস করাটা ঠিক হতে পারে, না-ও হতে পারে। আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।’
বিশ্বে বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত-মৃত্যু
বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঊর্ধ্বহার মঙ্গলবারের পর বুধবারেও লক্ষ্য করা গেছে। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়াসহ কয়েকটি দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় নতুন আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে।
বুধবার বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৪ জন এবং মারা গেছেন ৯ হাজার ১০৯ জন। আগের দিন মঙ্গলবার নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৬৫ জন এবং এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন ৮ হাজার ৬৮১ জন।
বুধবার করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে ব্রাজিলে। দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম এই দেশটিতে এই দিন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৫ হাজার ৮৬১ জন এবং মারা গেছেন ২ হাজার ৬৭৩ জন।
এই তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে বুধবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬৭ হাজার ২৯৪ জন এবং মারা গেছেন ১ হাজার ৪১১ জন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম সার্স-কোভ-২ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। পরে সাধারণভাবে এই ভাইরাসটি পরিচিতি পায় নতুন বা নভেল করোনাভাইরাস নামে। করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটিও ঘটেছে উহানেই। চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তখন জানানো হয়েছিল, ‘অপরিচিত ধরনের নিউমোনিয়ায়’ আক্রান্ত হয়ে ওই ব্যক্তি মারা গেছেন।
এরপর খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাসের উপস্থিতি দেখা যাওয়ায় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বিশ্বজুড়ে জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। কিন্তু এতেও কাজ না হওয়ায় অবশেষে ওই বছর ১১ মার্চ করোনাকে মহামারি ঘোষণা ডব্লিউএইচও।
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ/১৩৫৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ