মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জরুরি ব্যবহারের জন্য দেশে অনুমোদন পেয়েছে জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা। মঙ্গলবার ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এ অনুমোদন দিয়েছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সম্প্রতি ওই ভ্যাকসিন ব্যবহারে ইমার্জেন্সি ইউজ অথোরাইজেশনের আবেদন করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর ভ্যাকসিনটির ডোসিয়ার (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পার্ট, সিএমসি পার্ট এবং রেগুলেটরি স্ট্যাটাস) মূল্যায়নপূর্বক কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সির ক্ষেত্রে ওষুধ, ইনভেস্টিগেশনাল ড্রাগ, ভ্যাকসিন এবং মেডিক্যাল ডিভাইস মূল্যায়নের নিমিত্তে গঠিত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ইমার্জেন্সি ইউজ অথোরাইজেশন প্রদান করেছে।
প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, বাংলাদেশে ভ্যাকসিনটির লোকাল এজেন্ট এমএনসি অ্যান্ড এএইচ, স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ভ্যাকসিনটি গত ১২ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকাভুক্ত হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ এবং ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সির ইমার্জেন্সি ইউজ অথোরাইজেশন দেওয়া হয়েছে।
ভ্যাকসিনটি ১৮ বছরের বেশি বয়সের ব্যক্তির জন্য ব্যবহারযোগ্য। এটি বাংলাদেশ সরকারের ডিপ্লয়মেন্ট প্ল্যান অনুযায়ী নির্ধারিত বয়সের ব্যক্তিদের মধ্যে প্রদান করা হবে। ভ্যাকসিনটি সিঙ্গেল ডোজের এবং এর সংরক্ষণ তাপমাত্রা ২-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
উল্লেখ্য, এর আগে আরো ৫টি টিকাকে করোনা চিকিৎসার জন্য জরুরী ব্যবহারের অনুমোতি দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এগুলো হলো অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার, রাশিয়ার স্পুৎনিক-ভি, চীনে সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাক এবং ফাইজার-বায়োনটেক।
এক কোটি ৭৭ হাজার ডোজ ‘কোভিশিল্ড’
দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে এক কোটি ৭৭ হাজার ৫১৪ ডোজ। পুরোটাই দেওয়া হয়েছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ফর্মুলায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন। এখন পর্যন্ত দেশে ১ কোটি ২ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন এসেছে। সেই অনুযায়ী এখন মাত্র ১ লাখ ২২ হাজার ৪৮৬ ডোজ ভ্যাকসিন অবশিষ্ট আছে। মঙ্গলবার (১৫ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো টিকাদান বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪২ লাখ ৫৭ হাজার ৪৯৯ জন। মঙ্গলবার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৯৭৩ জনকে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাঠানো তথ্য থেকে আরও জানা যায়, প্রথম ডোজ নেওয়া ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জনের মধ্যে ১৪ লাখের বেশি মানুষের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছ সংকট। এদের সবাইকে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকারই দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। কেননা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনও দুই কোম্পানির দুই ডোজের টিকা গ্রহণের কোনও সিদ্ধান্ত দেয়নি।
২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ৫০ জনের
দেশে আজ মঙ্গলবার সকাল আটটা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৩১৯ জনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, যা গত ৫৩ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। ওই ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের। আজ বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এর চেয়ে বেশি সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল গত ২৩ এপ্রিল। সেদিন ৩ হাজার ৬২৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এখন পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ৮ লাখ ৩৩ হাজার ২৯১। মোট মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ২২২ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৭১ হাজার ৭৩ জন।
ওই ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ১৫ জন করে মৃত্যু হয়েছে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে মৃত্যু হয়েছে ছয়জন করে। এ ছাড়া সিলেট ও ময়মনসিংহে তিনজন করে এবং বরিশাল ও রংপুরে একজন করে মারা গেছেন করোনায়।
এর আগের ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল আটটা থেকে সোমবার সকাল আটটা) করোনাভাইরাস সংক্রমিত ৫৪ জনের মৃত্যু হয়। আর করোনা শনাক্ত হয় ৩ হাজার ৫০ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গতকাল সোমবার সকাল আটটা থেকে আজ সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২৩ হাজার ২৬৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। এটি গতকালের তুলনায় কিছুটা কম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, তা বোঝার একটি নির্দেশক হলো রোগী শনাক্তের হার। কোনো দেশে টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়। পরে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। তারপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। গত বছরের শেষ দিকে এসে সংক্রমণ কমতে থাকে।
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ/২০৩৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ