বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান দেশের নতুন দরিদ্রের যে হিসাব দিয়েছে তা মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আজ বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, নতুন দরিদ্রের এই হিসাব আমি স্বীকার করি না। যাদের কাছে তালিকা আছে ২ কোটি বা ১ কোটি বা ১০ জন, এই তথ্য তারা কোথায় পেয়েছে, আগে তা জানা দরকার।
তিনি আরও বলেন, এই কাজটি করার জন্য আমাদের ইন হাউজ প্রতিষ্ঠান আছে। যেমন- বিবিএস, বিআইডিএস। এই সব প্রতিষ্ঠান থেকে যতদিন তথ্য না পাবো, ততদিন অন্য প্রতিষ্ঠানের তথ্য গ্রহণ করতে পারি না।
এবারের বাজেটে দুর্বলতা কী ছিল এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেটে কোনো দুর্বলতা নেই। আমি কোনো পার্টিকুলার সেগমেন্ট উল্লেখ করতে চাই না। বাজেটটি যখন বাস্তবায়ন শুরু হবে তখন আমরা দেখব কারা বেনিফিশিয়ারি। উপকারভোগী কারা আমরা সেটি জানতে পারব। যাদের নিয়ে আপনাদের প্রশ্ন তাদের কাভার করার জন্যই আমরা এবারের বাজেট সাজিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এবং প্রধানমন্ত্রীও আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। সেটি হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষদের যদি আমরা আইডেন্টিফাই করতে পারি এবং অর্থনীতির মূল ধারায় নিয়ে আসতে পারি, তাহলে আগামীতে আমাদের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে। এ নীতিতে আমরা বিশ্বাস করি এবং সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমে আমাকে বলতে হবে কোন কোন জায়গায় আপনারা ব্যত্যয় দেখেছেন। পুরো তালিকা আমাকে দিতে হবে। সেগুলো দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে বিশ্বব্যাংক যে ৫ দশমিক ১ শতাংশ প্রাক্কলন করেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি অর্জিত হবে। আগামী অর্থবছরের জন্য সরকারের লক্ষ্যমাত্রা সাত দশমিক দুই শতাংশ। অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতির যে সাম্প্রতিক গতিধারা, তাতে এই অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ওপরে থাকবে বাংলাদেশ।
সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক জরিপের ফলাফল বলছে, কোভিডের আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে এই নতুন দরিদ্র শ্রেণির সংখ্যা জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়েছে, ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত যা ছিল ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ।
ওই জরিপে যারা সাধারণত দারিদ্র্যসীমার ওপরেই বসবাস করে কিন্তু যেকোনো অভিঘাতে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারে, তাদের নতুন দরিদ্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি। এ বছরের মার্চ পর্যন্ত যেখানে শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৫৯ শতাংশ, সেখানে গ্রামাঞ্চলে তা ৪৪ শতাংশ।
অন্যদিকে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার প্রভাবে দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার (আপার পোভার্টি রেট) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশ। দেশব্যাপী খানা জরিপের ভিত্তিতে এই তথ্য জানায় সংস্থাটি। বিবিএসের খানা জরিপ অনুসারে, ২০১৬ সালে দেশের গ্রামাঞ্চলের সার্বিক দারিদ্র্য ছিল ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০১৮ সালের জিইডি-সানেমের জরিপ অনুসারে যা ছিল ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ।
কিন্তু সানেমের প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার প্রভাবে ২০২০ সালে এই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ। শহরাঞ্চলে সার্বিক দারিদ্র্যের হার ২০১৬ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০১৮ সালে ছিল ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ আর করোনার সময়ে ২০২০ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৯৫৪
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ