কুষ্টিয়া চিনিকলের গুদাম থেকে ৫৩ টন চিনি গায়েব হয়ে গেছে। ওই চিনির আনুমানিক বাজার মূল্য ৩২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। এ ঘটনায় চিনিকলের স্টোরকিপার ফরিদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাড়াই বন্ধ কুষ্টিয়া চিনিকলের ষ্টোরে রক্ষিত চিনির পরিমাণ নির্ণয় ও পর্যবেক্ষনকালে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ৫২ মেট্রিক টন চিনি ঘাটতি পান। বিষয়টি তাৎক্ষনিক ভাবে মিলের এমডিকে অবগত করা হলে তিনি ষ্টোর কিপার ফরিদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এছাড়া চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের কর্তৃপক্ষকে চিঠি মারফত বিষয়টি অবহিত করা হয়।
এদিকে প্রকৃত ঘটনার কারণ উদঘাটনে চিনিকলের মহা-ব্যবস্থাপক (কারখানা) কল্যাণ কুমারকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা নির্দেশ দেয়া হয়।
নিরাপত্তা বলয় ভেদ ও সুরক্ষিত গোডাউনে রক্ষিত এত বিপুল পরিমাণ চিনি কিভাবে গায়েব হলো তা নিয়ে চিনিকলের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। বিপুল পরিমাণ চিনি চুরির সাথে মিলের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর একাংশ জড়িত বলে ধারনা করা হচ্ছে। তবে এ ঘটনায় এ পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি। মিল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জিএম প্রশাসন হাবিবুর রহমান বলেন, এই বিষয়টি জানার পরে আমরা তাৎক্ষনিকভাবে ব্যবস্থা নিয়েছি এবং তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। পাশাপাশি সদর দপ্তরেও জানিয়েছি। পরবর্তীতে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি এবং সদর দপ্তর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এরআগে দুর্নীতির দায়ে ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর কুষ্টিয়া চিনিকলের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মুর্শেদ (এমডি) চিনিকলের সিবিএ সভাপতি ফারুক হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমানকে একযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। গত ১৯ বছরে কুষ্টিয়া চিনিকলটিতে লোকসান হয়েছে ৪২০ কোটি টাকা। ফলে শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দৌরাত্ন, চরম দুর্নীতি,ব্যবস্থাপনা ত্রুটি ও ক্রমাগত লোকসানে ২০২০-২১ অর্থ বছর মিলে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
এদিকে ঐতিহ্যবাহী এ মিলটি বন্ধ থাকায় প্রায় এক হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কর্ম হারিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
কুষ্টিয়া জেলা শহর থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দূরে জগতিতে ১৯৬১ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয় চিনিকলের। কাজ শেষ হয় ১৯৬৫ সালে। আর ১৯৬৫-৬৬ মৌসুম থেকে এটি চিনি উৎপাদন শুরু করে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠানটিকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করে।
এই বৃহদায়তন ভারী শিল্প-কমপ্লেক্সটি চিনি কারখানা, বাণিজ্যিক খামার ও জৈব সার কারখানা এবং অফিস ও আবাসন ভাবনের সমন্বয়ে গঠিত। এখানে চিনি মজুদ করে রাখার জন্য দুটি গুদাম রয়েছে; যার প্রতিটিতে সাড়ে ছয় হাজার টন চিনি রাখা যায়। মিলের দৈনিক আখ মাড়াই ক্ষমতা এক হাজার ৫২৪ টন এবং উৎপাদন ক্ষমতা ১৫ হাজার টন। মিলকে ঘিরে মেডিকেল সেন্টার, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, ব্যাংক ও রেলস্টেশন প্রতিষ্ঠা হয়। হাজার হাজার মানুষের কর্মযজ্ঞে এক সময় মুখর থাকত মিল এলাকা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭৩৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ