ফাইজার-বায়োএনটেকের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের পূর্ণাঙ্গ ডোজ নেওয়া মানুষের দেহে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে পাঁচগুণ কম মাত্রায় অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এই তুলনা করা হয়েছে করোনার মূল ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়ার অ্যান্টিবডির সঙ্গে। আন্তর্জাতিক চিকিৎসাবিষয়ক জার্নাল দ্য ল্যানসেট-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এ খবর জানিয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, যারা একটি ডোজ টিকা নিয়েছেন, তাদের মধ্যে কম অ্যান্টিবডি তৈরি হয় এবং দুটি ডোজের মধ্যে ব্যবধান বেশি হলে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে।
ফাইজারের এক ডোজ টিকা নেওয়ার পর করোনাভাইরাসের মূল ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ৭৯ শতাংশ মানুষের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হতো। কিন্তু বি.১.১.৭ বা আলফা ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে ৩২ শতাংশ এবং বি.১.৩৫১ বা বিটা ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে তা ২৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
ইউসিএলএইচ সংক্রামক রোগের পরামর্শদাতা এবং লিগ্যাসি গবেষণার সিনিয়র ক্লিনিক্যাল রিসার্চ ফেলো ইমা ওয়াল বলেন, ‘আমাদের ফলাফল সুপারিশ করে যে, দ্রুত সময়ে দ্বিতীয় ডোজ দিতে এবং এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে।’
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে কোভিশিল্ডের দুটি ডোজের মধ্যে ব্যবধান ছয়-আট সপ্তাহ থেকে বাড়িয়ে ১২-১৬ সপ্তাহ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের জনস্বাস্থ্য ইংল্যান্ড (পিএইচই) বলেছে, যুক্তরাজ্যের আলফা ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের ‘হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি’ বাড়তে পারে।
ল্যানসেট জানিয়েছে, ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন মূল কোভিড স্ট্রেইনের তুলনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে পাঁচগুণ কম অ্যান্টিবডি তৈরি করে।
যুক্তরাজ্যের ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের গবেষকদের নেতৃত্বে একটি দল প্রথম ডোজ নেওয়ার তিন মাস পর যারা দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন এমন ২৫০ জন সুস্থ মানুষের রক্তের অ্যান্টিবডি বিশ্লেষণ করেছেন। গবেষকরা পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ‘অ্যান্টিবডি নিষ্ক্রিয় করে’ কোষগুলোতে ভাইরাসের প্রবেশ আটকাতে অ্যান্টিবডির সামর্থ্য পরীক্ষা করেছেন।
গবেষণা দলে থাকা ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন হসপিটালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এমা ওয়াল বলেন, এই ভ্যারিয়েন্ট আমাদের আশেপাশে আসতে হয়ত কিছুদিন সময় লাগবে। ফলে আমাদের কর্মতৎপর ও সজাগ থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের গবেষণা মহামারির পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিকল্পনা করা হয়েছে যাতে করে ঝুঁকি ও সুরক্ষায় বদলের প্রমাণ দ্রুত হাজির করা যায়।
গবেষকরা বলছেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যত বেশি সম্ভব মানুষকে ভ্যাকসিন সুরক্ষার আওতায় আনা। যাতে করে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া থেকে বেশিরভাগ মানুষকে ঠেকানো যায়। আর এটির জন্য সবচেয়ে ভালেঅ উপায় হলো দ্রুত দ্বিতীয় ডোজ এবং যাদের দেহে নতুন এসব ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হয়নি তাদের বুস্টার ডোজ দেওয়া
করোনায় মৃত্যু আরও ১০ হাজার
মহামারী করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের তাণ্ডবে গোটাবিশ্ব এখন তটস্থ। টিকা কার্যক্রম চললেও থেমে নেই মৃত্যুর মিছিল। যে মিছিলে গত ২৪ ঘণ্টায় শামিল হয়েছে আরও ১০ হাজার ২৩৭ জন। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩ হাজার ৩৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে ভারতে। এই সময়ে বিশ্বে শনাক্ত হয়েছে আরও ৪ লাখ ১৬ হাজার ৭৭৩ জন।
করোনা আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যানবিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, এ নিয়ে বিশ্বে এ পর্যন্ত করোনা রোগীর মোট সংখ্যা ১৭ কোটি ৩৩ লাখ ১১ হাজার ৮০১। যাদের মধ্যে মারা গেছে ৩৭ লাখ ২৭ হাজার ১৭৭ জন। এ পর্যন্ত ভাইরাসটির সংক্রমণ থেকে ১৫ কোটি ৬২ লাখ ৮৩ হাজার ৬০৩ জন সুস্থ হলেও সক্রিয় রোগীর সংখ্যা এখনও ১ কোটি ৩৩ লাখ ১ হাজার ২১ জন।
বিশ্বে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় সবার ওপরে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে ১৬ হাজার ৯২৫ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৫২০ জনের। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ কোটি ৪১ লাখ ৯২ হাজার ২৩। যার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬ লাখ ১২ হাজার ২৪০ জনের। চিকিৎসাধীন ৫৫ লাখ ২৪ হাজার ৭৮৮ জন।
এর পরের স্থানেই অবস্থান করা এশিয়ার জনবহুল দেশ ভারতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। গত ২৪ ঘণ্টায়ও প্রাণহানি ঘটেছে ৩ হাজার ৩৮২ জনের। এ সময়ে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে আরও ১ লাখ ২১ হাজার ৪৭৬ জন। যাতে এ পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৮৬ লাখ ৯৩ হাজার ৮৩৫ জনে। আর মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ১০১ জনের। চিকিৎসাধীন ১৫ লাখ ৬২ হাজার ৬০৪ জন।
তালিকার তৃতীয় স্থানে থাকা ল্যাটিন আমেরিকার ফুটবলপ্রিয় দেশ ব্রাজিলে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ১৮৪ জনের এবং শনাক্ত হয়েছে ৩৮ হাজার ৪৮২ জন। যা নিয়ে দেশটিতে এখন মোট মৃতের সংখ্যা ৪ লাখ ৭০ হাজার ৯৬৮ আর মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৬৮ লাখ ৪১ হাজার ৯৫৪। চিকিৎসাধীন ১১ লাখ ৩১ হাজার ২৯৪ জন।
তালিকায় এরপরের স্থানে থাকা ফ্রান্স, তুরস্ক, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও ইতালিতে সংক্রমণের সংখ্যা ৪০ থেকে ৬০ লাখের মধ্যে থাকলেও তুরস্ক বাদে অপর দেশগুলোতে মৃত্যু লাখ ছাড়িয়েছে। ৩২ নম্বরে উঠে আসা বাংলাদেশেও মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১২ হাজার ৭শ।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩২৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ