তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি কূটনৈতিভাবে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে তুরস্ককে কোণঠাসা করার চেষ্টা করে, তাহলে ওয়াশিংটন অত্যন্ত ভালো এক বন্ধুকে হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে।
বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাতের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে এরদোয়ান এমন মন্তব্য করেন। ১৪ জুন ব্রাসেলসে সামরিক জোট ন্যাটোর সম্মেলনের কোনো এক ফাঁকে বাইডেন ও এরদোয়ান বৈঠক করবেন। এটি হবে এ দুই নেতার মধ্যে প্রথম বৈঠক।
অবশ্য গত জানুয়ারিতে জো বাইডেন ৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আঙ্কারার সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কের বেশ অবনতি হয়েছে। ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম থেকেই তুরস্কের ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং খারাপ মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে’ সরব ছিলেন ডেমোক্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্ট।
মঙ্গলবারের সাক্ষাৎকারে আঙ্কারা-ওয়াশিংটনের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, ‘তুরস্ককে যারাই কোনঠাসা করতে চাইবে, তারা সবাই মূল্যবান একটি বন্ধু হারাবে।’
গত জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত তুর্কি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় পাননি জো বাইডেন। এমনকি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে প্রথমবারের মতো ফোন করতেও বাইডেন সময় নেন তিন মাস।
আবার তিন মাসের মাথায় এরদোয়ানকে প্রথম ফোন করলেও এর দিন দু’য়েকের মাথায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অটোম্যান সাম্রাজ্যের চালানো আর্মেনিয়ায় অভিযানকে গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেওয়ার মতো বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেন বাইডেন। তুরস্ক এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে এবং দেশ দু’টির মধ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়।
২০১৬ সাল থেকে ওয়াশিংটন ও আঙ্কারার মধ্যে সম্পর্কে উত্তেজনা সৃষ্টির আরও কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। এর মধ্যে সিরিয়ায় কুর্দি যোদ্ধাদের প্রতি মার্কিন সমর্থনও উল্লেখ করেছেন তিনি। কুর্দি যোদ্ধাদেরকে তুরস্ক সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি প্রকৃতপক্ষে আমাদের মিত্র দেশই হয়ে থাকে, তাহলে তাদের কি সন্ত্রাসীদের পক্ষে থাকা উচিত না কি আমাদের পক্ষে? দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা অব্যাহত ভাবে সন্ত্রাসীদের পক্ষেই কাজ করছে।’
এদিকে দীর্ঘদিনের বিবাদ মিটিয়ে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। মঙ্গলবার (১ জুন) তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম টিআরটি হাবেরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের এমন মনোভাবের কথা জানান তিনি।
এরদোগান বলেছেন, মিশর ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায় তুরস্ক। এখানে কেউ হারবে না। বরং নিজ নিজ জায়গা থেকে সবারই জয় হবে।
বছরের পর বছর ধরে মিশর ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ২০১২ সালের ৩০ জুন মিশরের ইতিহাসের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা মোহাম্মদ মুরসি।
এর এক বছরের মাথায় ২০১৩ সালের ৩ জুলাই সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মুরসিকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন সেনাপ্রধান জেনারেল সিসি। প্রতিবাদে মুরসি সমর্থকরা রাস্তায় নামলে ব্রাদারহুডের প্রায় হাজার খানেক নেতাকর্মীকে হত্যা করে সরকারি বাহিনী। অভ্যুত্থানে সমর্থন দেয় ইসরায়েল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো।
সরকারিভাবে বিবৃতি দিয়ে মুরসি সমর্থকদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে জেনারেল সিসির প্রতি সমর্থন জানায় সৌদি আরব। অন্য দিকে মোহাম্মদ মুরসির পক্ষে জোরাল ভূমিকা নেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয় মিশরের জান্তা সরকার। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুরস্কের সঙ্গে মিশরের সম্পর্ক ছিন্ন হয়।
২০১৭ সালের ৫ জুন কথিত সন্ত্রাসবাদে সমর্থনের অভিযোগ এনে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিশর। পরে ওই অবরোধ প্রত্যাহারে ১৩ দফা দাবি তুলে ধরে সৌদি জোট। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল আল-জাজিরা টেলিভিশন বন্ধ করে দেওয়া, কাতার থেকে তুরস্কের সামরিক ঘাঁটি প্রত্যাহার এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা।
যদিও সৌদি জোটের দাবি প্রত্যাখ্যান করে উল্টো তুরস্কের দিকে আরও বেশি ঝুঁকে পড়ে কাতার। তুরস্কও কাতারের সমর্থনে এগিয়ে আসে। বলা চলে, তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান একাই সৌদি আরবের কাতার বিরোধী অবরোধ ব্যর্থ করে দেন। এ ঘটনা তুরস্কের প্রতি রিয়াদের ক্ষোভের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগির নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর দুই দেশের সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি ঘটে। মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বর্বরোচিত ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য এমবিএস নামে পরিচিত সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে দায়ী করা হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৮১৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ