করোনার সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় ভারতের সীমান্তবর্তী সাত জেলা লকডাউনের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটি। লকডাউনের সুপারিশকৃত সীমান্তবর্তী সাত জেলা হলো- নওগাঁ, নাটোর, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও খুলনা।
রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্যবিষয়ক কমিটি সূত্র জানিয়েছে, গতকাল শনিবার এক বৈঠকে বিশেষজ্ঞ কমিটি সীমান্তের জেলায় লকডাউনের সুপারিশ করেছে। এসব জেলায় সংক্রমণ বেশি। এ ছাড়া নোয়াখালী ও কক্সবাজারের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে কমিটি। বিশেষজ্ঞ কমিটি এ সুপারিশ আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানাবে। মন্ত্রণালয়ে আজ বিকেলে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে সাত জেলার লকডাউনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
উল্লেখ্য, করোনার সংক্রমণ বাড়ায় গত ২৪শে মে রাত থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় এক সপ্তাহের লকডাউন দেয়া হয়েছে।
সীমান্তে করোনা পরিস্থিতি
২৪ মে সাত দিনের জন্য দেশের উত্তর-পশ্চিমের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে লকডাউন ঘোষণা করে স্থানীয় প্রশাসন। ঈদের পর থেকেই জেলায় সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে যায়। একপর্যায়ে দেখা যায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ৫৯ শতাংশ। অর্থাৎ দুজনের নমুনা পরীক্ষা করলে একজন করোনায় আক্রান্ত বলে শনাক্ত হতে থাকে।
সর্বশেষ শুক্রবারের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে অবশ্য পরিস্থিতির সামন্য উন্নতি দেখা গেছে। ওই দিন ১১৩টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয় ৩৯ জনের। অর্থাৎ শনাক্তের হার ছিল ৩৫ শতাংশ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশপাশের জেলাগুলোতেও শনাক্তের হার বেশি হতে দেখা গেছে। একই দিনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁ জেলার শনাক্তের হার ছিল যথাক্রমে ৪৬, ৪১ ও ৫০ শতাংশ।
নওগাঁর সিভিল সার্জন এ বি এম আবু হানিফ গণমাধ্যমকে বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঘেঁষা নওগাঁর উপজেলাগুলোতে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। এটা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তারা নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
প্রায় দেড় মাস আগে প্রতিবেশী দেশ ভারতে সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে যাওয়ার খবর আসে। জানা যায়, ভারতের মানুষ রূপান্তরিত নতুন ধরনের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। বলা হতে থাকে, ভারতীয় এই ধরনের দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতাও বেশি। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের রয়েছে দীর্ঘ সীমান্ত। প্রতিদিন স্থল ও বিমানবন্দর দিয়ে দুই দেশের মানুষ যাতায়াত করত। ভারত থেকে সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশ প্রথমে ভারতের সঙ্গে বিমান চলাচল, পরে স্থলবন্দর বন্ধ করে দেয়। পরে স্থলবন্দর চালু করলেও মানুষ চলাচল সীমিত রেখেছে।
বিধিনিষেধ বাড়বে আরও এক সপ্তাহ
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় চলাচল ও মানুষের কার্যক্রমে চলমান বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হতে পারে। প্রস্তাব অনুমোদন পেলে আজ রোববার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী আজ মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধ থাকার কথা।
এত দিন দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও এক সপ্তাহ ধরে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে আন্তজেলাসহ সব ধরনের গণপরিবহন (বাস, ট্রেন ও লঞ্চ) চলছে। হোটেল ও খাবারের দোকানে আসনসংখ্যার অর্ধেক সেবাগ্রহীতাকে সেবা দেওয়া যাচ্ছে। ফলে, এখন হোটেলে ধারণক্ষমতার অর্ধেক গ্রাহক বসে খেতে পারছেন।
এর আগে বিধিনিষেধে একই জেলার মধ্যে গণপরিবহন চলতে পারত। এক জেলা থেকে আরেক জেলায় গণপরিবহন বন্ধ ছিল। এ ছাড়া যাত্রীবাহী নৌযান ও ট্রেন আগের মতো বন্ধ ছিল। তবে ঈদের আগে লকডাউনের মধ্যে দোকান ও শপিং মল খুলে দেওয়া হয়। খোলা আছে ব্যাংকও। এ ছাড়া জরুরি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত অফিসগুলোও খোলা রয়েছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার চলতি বছর প্রথমে ৫ এপ্রিল থেকে সাত দিনের জন্য গণপরিবহন চলাচলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ জারি করেছিল। পরে তা আরও দুদিন বাড়ানো হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত আরও কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হয়। পরে তা কয়েক দফা বাড়িয়ে আজ মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হয়, যা এখন আবার বাড়তে পারে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪১০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ