ঈদ শেষে ঢাকায় ফেরা মানুষের ঢল এখনও আগের মতোই আছে। ফেরিঘাটগুলোতে চাপ না থাকলেও মহাসড়কে ঢাকামুখি যানবাহনের ভিড় লেগেই আছে। গত সাত দিনে রাজধানীতে প্রবেশ করা মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যাই প্রায় ৬২ লাখ। এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের করোনা আক্রান্তদের আটজনের দেহে ভারতীয় ধরনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে স্বাস্থ্যবিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে।
ঢাকায় ফিরেছে ৬২ লাখ মানুষ
ঈদের আগে করোনা মহামারীর নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেও ঘরমুখো হয় রাজধানীর মানুষজন। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বিকল্প পরিবহনে গ্রামে বহু মানুষ যায়। ঈদের ছুটি শেষে শুরু হয় তাদের ঢাকায় ফেরার ব্যস্ততা। গত শনিবার (১৫ মে) থেকে গতকাল শুক্রবার (২১ মে) পর্যন্ত ঢাকায় ফিরে ৬১ লাখ ৯৪ হাজার ৬৪৩ জন মোবাইল ফোন ব্যাবহারকারী।
শনিবার (২২ মে) ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এ তথ্য জানিয়েছেন। ঢাকা ছেড়ে যাওয়া ও ফেরত আসা মানুষের মোবাইল অপারেটরের তথ্যভাণ্ডার এবং কলপ্রবণতা বিশ্লেষণ করে তিনি এ তথ্য জানান।
মোস্তাফা জব্বার জানান, গত ১৫ মে ৪ লাখ ১২ হাজার ৭৬৩ জন, ১৬ মে ৬ লাখ ৬৪ হাজার ৩১৩ জন, ১৭ মে ১২ লাখ ৫ হাজার ৮৭৮ জন, ১৮ মে ১১ লাখ ২৭ হাজার ৬৪৪ জন, ১৯ মে ১০ লাখ ৬৫ হাজার ২৮৫ জন, ২০ মে ৮ লাখ ৬৯ হাজার ৯৪৩ জন এবং ২১ মে ৮ লাখ ৪৮ হাজার ৮১৭ জন মোবাইল সিম ব্যবহারকারী ঢাকায় প্রবেশ করেছেন। এ নিয়ে ৭ দিনে ঢাকায় প্রবেশ করেছেন ৬১ লাখ ৯৪ হাজার ৬৪৩ জন।
মোস্তাফা জব্বারের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত চারদিনে ধারাবাহিকভাবে সবচেয়ে বেশি মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করেছেন। এর আগে গত ৪ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ১২ দিনে এক কোটির বেশি মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। যেসব মোবাইল সিম হিসাবে ধরা হয়েছে সেগুলোর সবই চালু।
গত সাতদিনে ঢাকায় আসা মানুষের মধ্যে গ্রামীণফোনের ২৯ লাখ ৩৫ হাজার ৯৯৯ জন, রবির ১১ লাখ ৫০ হাজার ৩৪৬, বাংলালিংকের ১৭ লাখ ৯৪ হাজার ৯৮৭ জন ও টেলিটকের ৩ লাখ ১৩ হাজার ৩১১ জন গ্রাহক রয়েছেন।
এ বিষয়ে শুরুতে মোস্তাফা জব্বার গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, আমাদের দেশে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে কেউ সিম কার্ড কিনতে পারেন না। এই হিসাবটা শুধুমাত্র সিম ব্যবহারকারীদের নিয়ে করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, একজন ১৫টি পর্যন্ত সিম কিনতে পারেন। তৃতীয়ত, অনেকেই একাধিক সিম মোবাইলে ব্যবহার করেন। সুতরাং, এক্ষেত্রে ব্যক্তি হিসাব করলে চলবে না। ১৮ বছরের নিচে অনেকেই ঢাকার বাইরে গেছে। যাদের নামে কোনো সিম নেই। তাদের হিসাবটাও কিন্তু আসেনি। এসব হিসাব মিলিয়েই মোট পরিসংখ্যান বের করতে হবে।
আটজনের দেহে করোনার ভারতীয় ধরন
চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা শনাক্তের হার বাড়ছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত ফলাফলে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার প্রায় ৬৭ শতাংশেরও বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগজুড়ে কেবল তিনজনের প্রাণ নিয়েছে করোনা। এর মধ্যে দুজনই চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা। অন্যজন বগুড়ায় মারা গেছেন।
এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) উপপরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, শুক্রবার পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ১৩৮ জন করোনার রোগী। এর মধ্যে ৮৮ জনই চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন আরও ১৪ জন। এদের নয়জনই চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা।
তিনি আরও জানান, তবে শঙ্কার বিষয় হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জের করোনা আক্রান্তদের আটজনের দেহে ভারতীয় ধরনের উপস্থিতি। তাদের শারীরিক পরিস্থিতির ওপর বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। তাছাড়া আইসিডিডিআরবিতে তাদের করোনার নমুনা বিশ্লেষণ হচ্ছে। ফল পেলে বোঝা যাবে এই নতুন ধরনের করোনা কতটা বিধ্বংসী।
উপপরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, দেশে করোনার ভারতীয় ধরনের উপস্থিতি খুবই শঙ্কার। এই করোনা ছড়িয়ে পড়লে পুরো রাজশাহী অঞ্চলের করোনা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫৯ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আমীর হোসেন মোল্লা বলেন, ‘চাষাবাদসহ বিভিন্ন কাজে এ দেশের মানুষের সীমান্তবর্তী ভারতীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ বা আত্মীয়তা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করি, তারা যেন বাংলাদেশে না আসে। আমরা সাধারণত চোরাচালান রোধেই চেষ্টা করি। এখন করোনার বিষয়েও গুরুত্ব দিচ্ছি।’
সীমান্তের অধিবাসীদের করোনা ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরিতে কাজ চলছে বলে জানান বিজিবি কর্মকর্তা আমীর হোসেন।
রাজশাহীতে বিজিবি-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সাব্বির আহমেদ জানান, সীমান্তে টহল বাড়ানো হয়েছে। যেসব এলাকায় কাঁটাতার নেই সেখান দিয়ে কেউ যেন সীমান্ত অতিক্রম করতে না পারে সেটি কঠোরভাবে দেখা হচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০১৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ