বগুড়ার ধুনট উপজেলার পৌর যুবলীগের সাবেক সভাপতি ৯ মামলার পলাতক আসামি সোহরাব হোসেনকে (৩৭) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোহরাব হোসেনকে এর আগে একাধিক মামলায় গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছিল পুলিশ। এসব মামলায় পুলিশ তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে। জামিনে মুক্তি পেয়ে সোহরাব হোসেন দলের ছত্রচ্ছায়ায় আবারও মাদকদ্রব্য বিক্রিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন।
গত ১৯ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে সোহরাব ও তার বড় ভাই উপজেলা যুবলীগের সহসম্পাদক ফোরহাদ হোসেন (৪০) তাদের নিজ বাড়ির পাশে স্থানীয় মাদকসেবীদের কাছে ফেনসিডিল ও ইয়াবা বিক্রি করছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে ফোরহাদ হোসেনকে ৪ বোতল ফেনসিডিল ও ৩০টি ইয়াবা বড়িসহ গ্রেপ্তার করে।
সোহরাব হোসেন পৌর যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও ধুনট সদরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সোহরাব মাদকদ্রব্য পানিতে ফেলে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুই ভাই সোহরাব হোসেন ও ফোরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে। পরে ফোরহাদ হোসেনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ২০ এপ্রিল আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ঘটনার পর থেকে সোহরাব পলাতক ছিলেন। শুক্রবার সকালে বাড়িতে ফিরে আসার খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এর আগে খুন ও মাদক বিক্রির অভিযোগে কয়েক দফা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ায় সোহরাব হোসেনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। থানাহাজতে আটক সোহরাব হোসেন বলেন, পুলিশ তাকে মিথ্যা মাদক মামলায় গ্রেপ্তার করেছে। তিনি খুনসহ অন্যান্য মিথ্যা মামলায় আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। পুলিশ তার বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত না করে মামলাগুলোর অভিযোগপত্র দাখিল করেছে।
ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, সোহরাব হোসেন এলাকায় একজন চিহ্নিত মাদক কারবারি। তাকে মাদকসহ একাধিকবার গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলাসহ ৯টি মামলা রয়েছে। শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আওয়ামী লীগ যুবলীগ নেতাকর্মীদের দৌরাত্ম্য দিনদিন চাউর হয়ে উঠছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে ক্ষমতার চূড়ান্তে বসবাস করেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আগ্রহবোধ না করায় তাদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে চলেছে। ছাত্রলীগের এই আইনের উর্ধে চলে যাওয়ার পেছনে অবশ্য রাজনৈতিক নেতাদের কুৎসিত হাতের ভূমিকা রয়েছে।
তারা বলছেন, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে আওয়ামী লীগ যুবলীগ নেতারা চাঁদাবাজিসহ বহু অপকর্মই করে থাকেন, যার বিরুদ্ধে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করতেও ভয় পান। স্থানীয় পদপ্রাপ্ত প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে থানা প্রশাসনও এক প্রকার নমনীয় থাকেন। সেটা হোক ভয় অথবা কোনো বিনিময় মাধ্যমে। খুব ঠেকায় না পড়লে স্থানীয় প্রশাসন মামলা নেন না। ফলে স্থানীয় নেতারাও লিপ্ত থাকেন লাগাম ছাড়া অপরাধকর্মে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলা বা অনিয়মসহ স্থানীয় নেতাদের ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন সংশ্লিষ্টরা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৯০৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ