মেহেরপুরের গাংনী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও দখলবাজি নিয়ে সংবাদ করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় সাংবাদিক আল আমিন হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার(২২ মে) ভোরে গাংনী পৌর শহরের বাঁশবাড়িয়া গ্রামে তার নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আল আমিন হোসেন বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মৃত আব্বাস আলীর ছেলে এবং ঢাকা থেকে প্রকাশিত বিজনেস বাংলাদেশ পত্রিকার মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন।
থানা সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১১ মে স্থানীয় দৈনিক মেহেরপুর প্রতিদিন পত্রিকায় গাংনীর সাবেক এমপি ‘মকবুলের কাণ্ড: ২৬ বছর দখলে রেখেছে পরের বাড়ি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে মকবুল হোসেনের ভাগ্নে সবুজ হোসেন বাদী হয়ে গাংনী থানায় মেহেরপুর প্রতিদিনের প্রকাশক এ এস এম ইমন, সম্পাদক ইয়াদুল মোমিন ও যুগ্ন সম্পাদক আল আমিনের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় নিম্ন আদালত থেকে জামিন পান অভিযুক্তরা।
সম্প্রতি পুলিশ মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে আদালত পরিবর্তন হয়। ওই আদালতে জামিন না নেওয়ায় আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। তবে এখনো পর্যন্ত সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন সেই বাড়ি মালিকের কাছে ছেড়ে দেননি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গাংনী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুমন বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আদালতের পরোয়ানা থাকায় সাংবাদিক আল আমিন হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গাংনী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বজলুর রহমান বলেন, আদালতের পরোয়ানা অনুযায়ী তাকে গ্রেপ্তার করে মেহেরপুর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘দেশের সংবিধানে বাকস্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ডিজিটাল অ্যাক্টসহ যেসব আইন হয়েছে, সেগুলো রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে যে বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্র অর্জন করেছি, তার সঙ্গে সুস্পষ্টভাবে বিপরীতমুখী ও সাংঘর্ষিক। এগুলো স্বাধীন সাংবাদিকতার পথকে সংকুচিত করেছে।’
তারা বলেন, সারা বিশ্ব দেখছে, এই দেশটি সাংবাদিক নিপীড়নকারী দেশ এবং গণমাধ্যমের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করে এমন একটি দেশ। সাংবাদিকদের স্বাধীনতা চাই, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চাই। সাংবাদিকতার স্বাধীনতা রাষ্ট্রের জন্য, সরকারের জন্য এবং সুশাসনের জন্য দরকার।’
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সরকারের সমালোচনা করলেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হচ্ছে। এই আইনে মামলা ও গ্রেপ্তারের যেসব ঘটনা ঘটছে, পরিষ্কারভাবে তা গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার জন্য মারাত্মক হুমকি।
তারা বলেন, বাংলাদেশে হত্যার আসামির দণ্ড মওকুফ হয় অথবা দ্রুত জামিন হয়, ঋণখেলাপি ও আর্থিক খাত থেকে লুটপাটকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে, হাজার-কোটি টাকা বিদেশে পাচারকারী সহজেই দেশ ছাড়তে পারে, কিন্তু ফেসবুকে সরকারবিরোধী কিংবা ক্ষমতাসীন সরকারের লোকজনের বিরুদ্ধে কিছু লেখা যেন তার চাইতে বড় অপরাধ!
তারা বলেন, যে নিরাপত্তা আইন তৈরি করা হয়েছে, সে আইন নিয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, এ আইন কার জন্য করা হয়েছে? আইন তো তৈরি করা হয় সাধারণ জনগণের জন্য। এই আইন আসলে কার নিরাপত্তা দিচ্ছে? এ আইনে যারা বাদী হয়েছেন, তাদের অধিকাংশ এমপি, মন্ত্রী ও প্রশাসনের লোকজন। আর যারা আইনের শিকার হয়েছেন তারা সাংবাদিক, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট। আমাদের সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের সাহস গড়ে তোলেন একজন লেখক, সাহিত্য, অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক। তারা যেন মুক্তভাবে কথা বলতে পারে সেজন্য তাদের সমর্থন করুন। আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো একটি নিপীড়নমূলক আইন গণতন্ত্রের দেশে থাকতে পারে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৫১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ