কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আগামী বাজেটেও থাকবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বুধবার ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘কালো টাকা সাদা করার বিদ্যমান সুযোগটি আমরা অব্যাহত (কন্টিনিউ) রাখব। যতদিন দেশের অর্থনীতিতে অপ্রদর্শিত অর্থ থাকবে, ততদিন এ সুযোগ দেয়া হবে।’
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আজকে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ১৫তম অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য দুটি এবং জরুরি প্রয়োজনে টেবিলে একটি প্রস্তাবসহ মোট তিনটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে তিনটি প্রস্তাবেরই নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
করোনা রোগীর জন্য ৪০টি অক্সিজেন জেনারেটর সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ে দুর্নীতির প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যখাত অত্যন্ত জরুরি বিষয়, তাদের দায়িত্ব ছিলো এসব চাহিদার বিষয়ে যথাযথ সময় ব্যবস্থা নেওয়া, কিন্তু তখন সেটি করা হয়নি। করোনা পৃথিবীতে সবার জন্যই প্রথম, তাই সবাই যে সব কাজ সম্পর্কে অবগত থাকবে তাও না। যদি বার বার একই রকম মিসটেক হয় তাহলে আমরা এগুলো ইকোনমিক অ্যাফেয়ারস থেকে বাদ যাবে। তবে এখন যেগুলো আসছে সেগুলো সবই নতুন।
তিনি বলেন, কোভিড সারাবিশ্বে তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে। এরমাঝে কাজের পরিধি বাড়ছে। আমাদের এখন এগুলো চিন্তা না করে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে হবে। এই বিবেচনায় আমরা আজকে এটি অনুমোদন দিয়েছি। আমি একমত আরও আগে যথাযথভাবে যদি আমরা এগুলো করতে পারতাম তাহলে হয়তো আমাদের সাশ্রয় হতো। তারপরও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সবাইকে বলেছি সাশ্রয়ী হতে হবে।
অর্থনৈতিক ও ক্রয়বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, দেশের ভেতরে অনেকের কাছে প্রচুর অপ্রদর্শিত টাকা আছে। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
এসব অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দিলে একদিকে বিপুল পরিমাণ টাকা দেশের অর্থনীতির মূল ধারায় আসবে, পাশাপাশি দেশ থেকে টাকা পাচার কমবে।
এনবিআরের সবশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে জমি, ফ্ল্যাট, শেয়ারবাজারসহ যেসব খাতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে, তাতে ৯ হাজার ৯৩৪ জন এ সুযোগ নিয়েছে। এর বিপরীতে ১২ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে। সরকার কর পেয়েছে ১ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলেছেন, ৯০ শতাংশ টাকা সাদা হয়েছে জমি-ফ্ল্যাট, ব্যাংকে গচ্ছিত আমানত ও নগদ টাকায় ঘোষণা দিয়ে। মন্দা শেয়ারবাজার চাঙা করতে শেয়ার কিনে এক বছরে ‘লকইন’ রাখার শর্তে টাকা বৈধ করার সুযোগ দিলেও তেমন সাড়া মেলেনি। মাত্র ৩১১ জন সরকারের দেয়া এ সুযোগ নেয়। চলতি করবর্ষে এনবিআরে জমা দেয়া বার্ষিক আয়কর রিটার্নে কালো টাকা সাদা করার ঘোষণা দেন সুবিধাভোগী করদাতারা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার ফলে একদিকে সৎ করদাতাদের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে। অন্যদিকে অসৎ করদাতাদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে। এটা ন্যায়বিচারের পরিপন্থি। এ সুযোগ না দিয়ে বরং কালো টাকার উৎসসমূহ বন্ধ করতে হবে।’
সব সরকারের আমলেই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়। ১৯৭৫ সালে প্রথমবারের মতো এ সুযোগ দেয়া হয়।
এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত ১৭ থেকে ১৮ বার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু কালো টাকার মালিকরা তেমন সাড়া দেয়নি। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাড়া মিলেছে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে। ওই সময় ৩২ হাজার ৫৫৮ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই সুযোগ নিয়েছিল। আর সাদা হয়েছিল ৯ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। এর বিপরীতে সরকার কর পায় ৯১১ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭৫৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ