ঝালকাঠির নলছিটিতে সাংবাদিক খলিলুর রহমান মৃধার (৪৮) বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন নলছিটি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম টিটু। নলছিটি থানায় সোমবার রাতে এ মামলা দায়ের করেন। সোমবার রাতেই পৌর এলাকার গৌরিপাশা গ্রামের বাড়ি থেকে সাংবাদিক খলিলুর রহমান মৃধাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
খলিলুর রহমান মৃধা দৈনিক জনতা ও আঞ্চলিক দৈনিক সময়ের বার্তার নলছিটি প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। তিনি উপজেলার গৌরীপাশা এলাকায় মো. মোশারফ মৃধার ছেলে।
ফেসবুকে খলিলুর রহমানের লেখায় নলছিটি পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলরবৃন্দ ও উপসহকারী প্রকৌশলীর সম্মানহানি হয়েছে বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে৷
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ৯ মে ১১টা ৩৩ মিনিট থেকে সাংবাদিক খলিলুর রহমান তার ফেসবুক আইডি থেকে নলছিটি পৌরসভার মেয়র আ. ওয়াহেদ খান, উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আবু সায়েমের ছবি ও কাউন্সিলর শহিদুল ইসলামের নাম উল্লেখ করে একাধিক মানহানিকর, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর লেখা পোস্ট করেন। এছাড়া পৌর কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে মানহানি ও জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, খলিলুর রহমান মৃধা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের তার নিজ আইডিতে নলছিটি পৌরসভার টেন্ডার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। বিষয়টি নিয়ে নলছিটি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম টিটু বাদী হয়ে নলছিটি থানায় সোমবার রাতে একটি মামলা দায়ের করেন। রাতেই নলছিটি থানা পুলিশ খলিলুর রহমান মৃধাকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে।
নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলি আহম্মেদ বলেন, ‘সাংবাদিক খলিলুর রহমান নলছিটি পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলরগণ ও উপসহকারী প্রকৌশলীকে জড়িয়ে ফেসবুকে মানহানিকর, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর একাধিক লেখা পোস্ট করেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে পৌর কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম মামলা করলে সোমবার রাতে শহরের সবুজবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার সকালে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
খলিলুর রহমানের পরিবার জানায়, গত পৌর নির্বাচনে শহিদুল ইসলাম টিটুর সঙ্গে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন খলিলুর রহমান মৃধা। টিটু বিজয়ী হওয়ার পর থেকেই খলিলের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। এরই জের ধরে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করা হয়।
এদিকে সাংবাদিক ও সুজন সভাপতি খলিলুর রহমান মৃধার নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন জেলার সাংবাদিকরা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সরকারের সমালোচনা করলেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হচ্ছে। এই আইনে মামলা ও গ্রেপ্তারের যেসব ঘটনা ঘটছে, পরিষ্কারভাবে তা গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার জন্য মারাত্মক হুমকি।
তারা বলেন, বাংলাদেশে হত্যার আসামির দণ্ড মওকুফ হয় অথবা দ্রুত জামিন হয়, ঋণখেলাপি ও আর্থিক খাত থেকে লুটপাটকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে, হাজার-কোটি টাকা বিদেশে পাচারকারী সহজেই দেশ ছাড়তে পারে, কিন্তু ফেসবুকে সরকারবিরোধী কিংবা ক্ষমতাসীন সরকারের লোকজনের বিরুদ্ধে কিছু লেখা যেন তার চাইতে বড় অপরাধ!
তারা বলেন, সাংবাদিক সমাজের যারা প্রতিনিধি তারা শুরু থেকেই যে আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন সেটা এখন বিবেচনায় নেওয়ার সময় আছে। তা না হলে যেটা হবে এখানে মতপ্রকাশ বলে কিছু থাকবে না। অমর্ত্য সেন বলেছিলেন, একটা দেশে যদি স্বাধীন গণমাধ্যম থাকে তাহলে ওই দেশে দুর্ভিক্ষ হয় না। গণমাধ্যম স্বাধীন থাকলে তখন সে সত্যি খবরটা পৌঁছে দেয়। আর গণমাধ্যমে টুটি চেপে ধরলে রাষ্ট্র যারা চালাচ্ছেন তারাও সঠিক খবরটা জানতে পারেন না।
তারা বলেন, যে নিরাপত্তা আইন তৈরি করা হয়েছে, সে আইন নিয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, এ আইন কার জন্য করা হয়েছে? আইন তো তৈরি করা হয় সাধারণ জনগণের জন্য। এই আইন আসলে কার নিরাপত্তা দিচ্ছে? এ আইনে যারা বাদী হয়েছেন, তাদের অধিকাংশ এমপি, মন্ত্রী ও প্রশাসনের লোকজন। আর যারা আইনের শিকার হয়েছেন তারা সাংবাদিক, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট। আমাদের সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের সাহস গড়ে তোলেন একজন লেখক, সাহিত্য, অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক। তারা যেন মুক্তভাবে কথা বলতে পারে সেজন্য তাদের সমর্থন করুন। আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো একটি নিপীড়নমূলক আইন গণতন্ত্রের দেশে থাকতে পারে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫২১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ