দেশজুড়ে চলছে কঠোর লকডাউন। কয়েকদিন পরই ঈদ। বন্ধ দূরপাল্লার গণপরিবহন। ঈদকে সামনে রেখে সরকারের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। কেউ প্রাইভেটকার, ভাড়া করা গাড়ি, পিকআপ ভ্যানে। কেউ বা মোটরসাইকেলে অথবা অটোরিকশায়, যে যেভাবে পারছে ছুটছে নিজ গন্তব্যে। এতে সড়ক পথ ও ফেরিঘাটে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে। কোথাও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই।
গত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ এলাকা দিয়ে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন তারা। দূরপাল্লার বাস না থাকলেও এসব টার্মিনাল পয়েন্ট থেকে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে নানা যানবাহনে করে বাড়ি ফিরছেন নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ। টার্মিনালের সামনে পৌঁছলেই দূরপাল্লার বাসের বিকল্প হিসেবে খোঁজ মিলছে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, নছিমন, মাহেন্দ্র, হিউম্যান হলার, সিএনজি অটোরিকশা ও বিভিন্ন রুটে চলাচলরত বাসের খোঁজ পেয়ে যাচ্ছেন।
এসব বাহনে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই ঠাসাঠাসি করে বসে বাড়ি ফিরছেন তারা। এ দিকে পদ্মা নদীর পাটুরিয়া ও শিমুলিয়া এলাকায় ঘরমুখো মানুষের তীব্র স্রোত শুরু হয়েছে। যানবাহন তোলার আগেই ফেরি পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে মানুষে। অনেক সময় মানুষের ভিড়ে ফেরিতে যানবাহন তুলতেও অসুবিধায় পড়ছে কর্তৃপক্ষ। যাত্রীরা বলছেন, করোনার বিস্তার ঠেকাতে দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখা হয়েছে। অথচ মানুষ ঠিকই বিকল্প উপায়ে বাড়ি ফিরছে। আর এই বিকল্প পদ্ধতি কতটা স্বাস্থ্যসম্মত সেটা ভাবার বিষয়।
গতকাল শুক্রবার গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ঘরমুখো মানুষের সাথে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, ট্রাক, পিকআপ ভ্যান এমনকি উবার-পাঠাও-এ চলাচলরত মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেলে করে তারা পাটুরিয়া ঘাটে যাচ্ছেন। সেখান থেকে লোকাল বাসে করে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে যাচ্ছেন। টার্মিনালে থাকা বিভিন্ন বাস শ্রমিক যাত্রীদের সাথে কথা বলে মোটা অঙ্কের কমিশন নিয়ে প্রাইভেট গাড়ি ঠিক করে দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আগে যেখানে ৫০০ টাকা খুলনা চলে যাওয়া যেতো সেখানে পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছতে প্রকারভেদে নেয়া হচ্ছে জনপ্রতি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা করে। বাকি পথে আরো খরচ রয়েছে।
আল আমিন নামে এক যাত্রী বলেন, প্রতিটি যানবাহনে ঠাসাঠাসি করেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাদের। তিনি বলেন, যাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে তারা ঢাকায় থেকে যাচ্ছেন। কিন্তু নানা কারণে যারা ঢাকায় থাকতে পারছেন না তারা বাধ্য হয়ে গ্রামে যাচ্ছেন। দূরপাল্লার বাস না চলায় গাবতলি আমিন বাজার ব্রিজ পার হয়ে নছিমনে ঠাসাঠাসি করে বসে সাভার যাচ্ছেন। সেখান থেকে জেলা ভিত্তিক চালিত বাসে করে পাটুরিয়া যাবেন। এরপর ফেরিতে পদ্মা পার হয়ে আবার জেলা ভিত্তিক চালিত বাসে করে গন্তব্যে যাবেন।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আজ শনিবার থেকে দিনের বেলায় শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথ ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি। তবে সন্ধ্যার পর থেকে সীমিত পরিসরে কয়েকটি ফেরি চলবে। রাতে চলা ফেরিগুলোয় শুধু জরুরি প্রয়োজনে আসা যানবাহন, অ্যাম্বুলেন্স ও পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার করবে। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সাফায়াত আহম্মেদ।
জানতে চাইলে সাফায়াত আহম্মেদ বলেন, ‘ঈদ ঘিরে দিনের বেলায় ফেরিতে ঘরমুখী যাত্রীর খুব চাপ থাকে। আপতত কাল (শনিবার) সকাল থেকে ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। শুক্রবার রাতেই সব কয়টি ফেরি নোঙর করা হবে। মন্ত্রণালয় থেকে এমন সিদ্ধান্তই আমাদের জানানো হয়েছে। তবে রাতে কতটি ফেরি ছাড়া হবে বা অন্য বিষয়গুলো এখনো নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।’
বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাট কর্তৃপক্ষ জানায়, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে সাধারণত ১৬টি ফেরি যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে পারপার হয়। চলমান করোনাভাইরাসের লকডাউনে গত ১৪ এপ্রিল থেকে সীমিত করা হয় ফেরি চলাচল। লকডাউনের শুরুতে দিনের বেলায় দু–তিনটি ফেরি ছাড়া হলেও শুক্রবার থেকে যাত্রী ও জরুরি প্রয়োজনে আসা যানবাহনের চাপ বেশি থাকা প্রায় সব কয়টি ফেরি চলাচল করে এ নৌপথে। এসব ফেরিতে জরুরি প্রয়োজনে আসা যাত্রী, অ্যাম্বুলেন্স, পণ্যবাহী ট্রাক, কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপারের কথা থাকলেও সাধারণ যাত্রীদরেই বেশি পারাপার হতে দেখা যায়। এ কারণে বিআইডব্লিউটিসির পক্ষ থেকে আজ সকাল থেকে দিনের বেলায় ফেরি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রেখেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১২৫৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ