ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পশ্চিম খাসি পার্বত্য অঞ্চলে ১০ কোটি বছর আগের সর্ববৃহৎ ডাইনোসর গোষ্ঠী সরোপডের হাড় শনাক্ত করতে পেরেছেন গবেষকরা।
এখনও অপ্রকাশিত এই খোঁজ পেয়েছেন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার প্যালিয়ন্টোলজি বিভাগের গবেষকরা, তাদের সাম্প্রতিক একটি ফিল্ড ট্রিপে।
জিএসআই গবেষকরা বলছেন, এই প্রথম এই অঞ্চলে সম্ভবত টাইটানোসরিয়ান উৎসের সরোপডের অবশেষ পাওয়া গেল। খননকাজে যেসব জীবাশ্ম উদ্ধার হয়েছে সেগুলো ক্রিটাসিয়াস যুগের।
সরোপডের ঘাড় হতো দীর্ঘ। লেজও বিশাল হতো। তবে লেজ ও শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় ছোট হতো মাথা । চারটি পা হতো হাতির মতো তবে লম্বায় তা হাতির থেকে অনেক বড় হতো। বিশালাকৃতির জন্য এরা পৃথিবীতে বসবাসকারী সবচেয়ে বড় প্রাণীগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।
টাইটানোসরিডেরা সরোপডের একটি বিচিত্র গোষ্ঠী। সেই সময়ে টাইটানোসররা আফ্রিকা, এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং অ্যান্টার্কটিকায় বসবাস করত।
জিএসআইয়ের প্যালিয়ন্টোলজি বিভাগের সিনিয়র ভূতাত্ত্বিক অরিন্দম রায় বলেছেন, ‘মেঘালয় থেকে ডাইনোসরের হাড় পাওয়া যাওয়ার বিষয়ে ২০০১ সালে জিএসআইয়ের রিপোর্টে বলা হয়েছিল। তবে সেগুলো অসংখ্য টুকরোয় বিন্যস্ত থাকায় এবং যথাযথভাবে সংরক্ষণ না করতে পারায় এর টেকনোমিক শনাক্তকরণটি বোঝার মতো অভ্রান্ত ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই সময় চিহ্নিত হাড়গুলি ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১-এ পাওয়া গিয়েছিল যা প্রায় ১০ কোটি বছর পুরনো বলে অনুমান করা হয়। জীবাশ্মগুলো সম্ভবত লেট ক্রিটেসিয়াসের। তবে এ নিয়ে আরও পড়াশোনা চলছে। বিস্তারিত কাজও করা হচ্ছে।’
গবেষকরা জানিয়েছেন, পঁচিশের বেশি ভাঙা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হাড়ের খোঁজ পাওয়া গেছে। সেই নমুনাগুলি পুনরুদ্ধার করা হয়। এদের আকার, আকৃতি বিভিন্ন ছিল। হাড়ের নমুনার কয়েকটির মধ্যে পারস্পরিক মিলও পাওয়া যায়।
হাড়গুলোর সংরক্ষণের ত্রুটি, অসম্পূর্ণ, অতিমাত্রায় খণ্ডবিখণ্ড হওয়ায় মহাজাতি পর্যায়ে টেকনোমিক শনাক্তকরণ বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। এছাড়া উদ্ধারকৃত হাড়গুলো আংশিকভাবে সংরক্ষিত এবং প্রতিস্থাপন করা হয়েছে বলে গবেষকরা জানান।
এজন্য, সবথেকে উপযুক্ত পদ্ধতিতে সংরক্ষিত তিনটি হাড় নিয়ে গবেষণা করা হবে। সবথেকে বড় ছিল ৫৫ সেন্টিমিটার লম্বা একটি হাড়। এটি টাইটানোসরিডের হিউমারাস হাড়ের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছিল। ৪৫ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের অপূর্ণ একটি হাড়ের সঙ্গেও মিল খুঁজে পাওয়া যায় টাইটানোসরের। হাড়ের নমুনা থেকে জরায়ুর ভার্টিব্রাও পুনর্গঠন করা হয়।
মি. রয় বলেন, বর্তমান গবেষণার কাজের সময়ে এই সব হাড় উদ্ধার করা হয়েছে। নতুনভাবে উদ্ধারকৃত হাড়গুলো এবং কশেরুকা থেকে পাওয়া টাইটানোসরিফর্ম ক্লেডের টেকনোমিক বৈশিষ্ট্য অনন্য।
জানা গিয়েছে ক্রিটাসিয়াস যুগে বসবাসকারী এই ধরণের ডাইনোসরগুলি বিশাল আকৃতির জন্য বেশিদিন পৃথিবীর বুকে স্থায়ী হয়নি। তবে তাদের একটি প্রজাতি যে ভারতে বাস করতো তার প্রমাণ এই নিয়ে পাঁচবার মিলল।
এর আগে গুজরাট, মধ্য প্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং তামিলনাড়ুতেও বিশাল ওই ডায়নোসরের হাড়ের খোঁজ মিলেছিল। এই নিয়ে ভারতের পঞ্চম রাজ্যে খোঁজ মিলল সওরোপোডের।
সরোপড ডাইনোসর
প্রথম সরোপডোফর্মদের প্রোসরোপড বলা হয়। প্রায় ২২ কোটি ৭০ লক্ষ থেকে ১৮ কোটি বছরের পুরোনো পাথরের স্তরে এদের জীবাশ্ম পাওয়া যায়। এরা দ্বিপদ ও চতুষ্পদ দু’রকমেরই হতো। তবে শাকাহারী হতো।
এই প্রাণীগুলোই পরবর্তীকালে বিশালদেহী শাকাহারী সরোপডে বিবর্তিত হয়, যাদের কেউ কেউ অন্তত ২৬ মিটার (৮৫ ফুট) পর্যন্ত দীর্ঘ হতো। এই ক্লেডের অন্যতম শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য হল এদের সামনের পা ও পিছনের পায়ের দৈর্ঘ্যের অনুপাত ০.৬ এর বেশি, অর্থাৎ অধিকাংশ সরোপডের পশ্চাৎপদ অগ্রপদের চেয়ে বেশি লম্বা হতো।
উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম হিসেবে ব্র্যাকিওসরাসের নাম করা যেতে পারে। এদের লম্বা অগ্রপদ থেকে অনুমান করা হয় তারা আধুনিক জিরাফের মতো বড় গাছের উঁচু ডালপালা খাওয়ার জন্য অভিযোজিত হয়েছিল।
সরোপডদের জীবাশ্মের সন্ধান পাওয়া গেছে ডাইনোসরদের উৎপত্তির সময় থেকে তাদের রাজত্বের একদম শেষভাগে ক্রিটেশিয়াস-প্যালিওজিন অবলুপ্তি ঘটনা পর্যন্ত সুদীর্ঘ সময়কাল জুড়ে। তা প্রায় ২২.৭ থেকে ৬.৬ কোটি বছর। বেশির ভাগ নিদর্শনই জুরাসিক যুগের।
জানা যায়, ৬·৬ কোটি বছর আগে ক্রিটেশিয়াস যুগের শেষভাগে সংঘটিত ক্রিটেশিয়াস-প্যালিওজিন অবলুপ্তি ঘটনা অধিকাংশ ডাইনোসরের বিলুপ্তি ঘটায়। কেবল যে শাখাটি থেকে ইতোমধ্যেই প্রথম পাখিদের বিবর্তন হয়েছিল তারা আজ পর্যন্ত টিকে আছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২০৪৫
আপনার মতামত জানানঃ