চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে নিহত ৫ জনের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে এস আলম গ্রুপকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি কেন গঠন করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
পাশাপাশি ওই ঘটনায় পুলিশ ও জেলা প্রশাসকের তদন্ত প্রতিবেদন, আহতদের চিকিৎসার সর্বশেষ তথ্য দেয়াসহ শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিধানের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আজ মঙ্গলবার(৪ মে) দুটি রিটের ভার্চুয়াল শুনানি নিয়ে আদালত এই নির্দেশ দেন।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবি সমিতিসহ (বেলা) পাঁচটি সংগঠনের আলাদা দুটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
নিহতদের পরিবারকে ওই টাকা পরিশোধ করতে এস আলম গ্রুপকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও অ্যাডভোকেট সৈয়দা নাসরিন। এস আলম গ্রুপের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আরশাদুল রউফ। আর রাষ্ট্র পক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, বাঁশখালিতে পুলিশের গুলিতে নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে আপাতত পাঁচ লাখ টাকা করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ওই ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
এস আলম গ্রুপের আইনজীবী মো. আরশাদুল রউফ শুনানিতে বলেন, নিহতদের পরিবারকে ইতোমধ্যে ৩ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। তখন আদলতের জ্যেষ্ঠ বিচারক এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, ৩ লাখ টাকা করে দিয়েছেন, আরও ২ লাখ টাকা করে দেন। গত ২২ এপ্রিল মানবাধিকার সংগঠন চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ৫ নিহতের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে।
হাইকোর্টের আদেশে ওই ঘটনায় পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদন ৪৫ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী ও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও চিকিৎসার খরচের বিষয়ে এস আলম গ্রুপ কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সে বিষয়ে ৪৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ওখানকার শ্রমিক ও এলাকবাসীকে যাতে কোনো ধরনের হয়রানি না করা হয়, তা নিশ্চিত করতেও নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি প্রত্যেক নিহত শ্রমিকের পরিবারকে তিন কোটি ও আহত শ্রমিকদের দুই কোটি টাকা করে যৌথভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, এ বিষয়েও রুল হয়েছে।
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারায় নির্মাণাধীন কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের তালিকা তৈরিসহ প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে বিচারিক অনুসন্ধান কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) গত মাসে একটি রিট করে। অন্যদিকে একই ঘটনায় ২৮ এপ্রিল অপর রিটটি করে পাঁচ সংগঠন। সংগঠনগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), নিজেরা করি, সেফটি অ্যান্ড রাইটস ও অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)।
গত ১৭ এপ্রিল সকালে বাঁশখালীর গন্ডামারায় সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে পাঁচজন নিহত হন। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুজন মারা যান। আহত হন ৩ পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন। ৫ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ, পবিত্র রমজান মাসে কর্মঘণ্টা ১০ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৮ ঘণ্টা, শুক্রবার ৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৪ ঘণ্টা করাসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ করেন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজের শ্রমিকেরা। বিক্ষোভের একপর্যায়ে শ্রমিকদের ওপর পুলিশ গুলি ছুড়তে থাকে।
বাঁশখালী সদর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে এস আলম গ্রুপের মালিকানায় এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট নামে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। চীনা প্রতিষ্ঠান সেফকো থ্রি পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এখানে অর্থায়ন করেছে। এখানে প্রায় ছয় হাজার শ্রমিক কাজ করেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬১৬
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ