এবারের ঈদের ছুটি কাটাতে হবে লকডাউনের মধ্যেই। আজ নতুন করে চলমান লকডাউন আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৩ বা ১৪ মে দেশে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। লকডাউন নতুন করে প্রলম্বিত করে দূর-পাল্লার পরিবহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকছে না খেঁটে খাওয়া মানুষগুলোর। থাকছে না গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগির কোনো সুযোগ। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে রাজধানীর নিম্ন আয়ের মানুষ।
ঈদের ছুটি ৩ দিনের বেশি নয়
পবিত্র ঈদুল ফিতরের সরকারি ছুটি তিন দিন। সরকারি ও বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই এ সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য হবে। এর বাইরে কোনো প্রতিষ্ঠান নিজস্ব উদ্যোগে অতিরিক্ত ছুটি দিতে পারবে না।
আজ সোমবার(০৩ মে) মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘সরকারি বন্ধ তিন দিন। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এর অতিরিক্ত কোনো বন্ধ দেওয়া যাবে না। এর মধ্যে দুদিন শুক্র ও শনিবার পড়ছে। আরেক দিন বৃহস্পতিবার।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘গার্মেন্টস ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও তিন দিনের বাইরে আর কোনো বন্ধ বা অতিরিক্ত ছুটি দিতে পারবে না।’
চাঁদ দেখাসাপেক্ষে আগামী ১৩ বা ১৪ মে ঈদুল ফিতর হওয়ার কথা রয়েছে।
আগামী ১২ মে (বুধবার) থেকে শুরু হচ্ছে ঈদের ছুটি। রমজান মাস যদি ২৯ দিনে শেষ হয় তবে ঈদুল ফিতর হবে ১৩ মে। এক্ষেত্রে ১৩ ও ১৪ মেও (বৃহস্পতি ও শুক্রবার) ঈদের ছুটি থাকবে। তবে রমজান মাসের ৩০ দিন পূর্ণ হলে ঈদের ছুটি আরও একদিন বাড়বে, সেক্ষেত্রে ১৫ মেও (শনিবার) ছুটি থাকবে।
ঈদ আগামী ১৪ মে (শুক্রবার) হতে পারে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোনো বন্ধ দেয়া যাবে না। ঈদের ছুটি তিনদিন, এরমধ্যে দুটির পড়েছে শুক্র ও শনিবার। শিল্প-কারখানাও এই সময়ে বন্ধ দিতে পারবে না।’
সরকারি অফিস বন্ধ সেগুলোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আছে কিনা- জানতে চাইলে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘যেগুলো যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে।’
লকডাউন বাড়ল ১৬ মে পর্যন্ত
চলমান লকডাউন আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধ ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে তিনি একথা জানান।
এ সময়ে জেলার অভ্যন্তরে বাস চলাচল করার অনুমতি থাকলেও বন্ধ থাকবে আন্তঃজেলা বাস সার্ভিস। তাছাড়া, লকডাউন চলাকালে ট্রেন ও লঞ্চ সার্ভিসও বন্ধ থাকবে।
দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ঠেকাতে প্রথম দফায় গত ৫ এপ্রিল এক সপ্তাহের লকডাউন শুরু হয়। ওই বিধিনিষেধের ধারাবাহিকতা চলে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত।
এরপর দ্বিতীয় ধাপে ১৪ এপ্রিল থেকে সারাদেশে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হয়, যা চলে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে লকডাউনের মেয়াদ ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। তারপর আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে ৫ মে পর্যন্ত করা হয়।
আন্তঃজেলা গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন আগামী ৬ মে থেকে ঈদকে সামনে রেখে জনস্বার্থ বিবেচনায় শর্তসাপেক্ষে গণপরিবহন চালুর ব্যাপারে সক্রিয় চিন্তাভাবনা করছে সরকার। তিনি জানান, জেলার গাড়িগুলো জেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। কোনোভাবেই জেলার সীমানা অতিক্রম করতে পারবে না।
সিটির ক্ষেত্রেও সিটি পরিবহন সিটির বাইরে যেতে পারবে না বলেও জানান মন্ত্রী। এক্ষেত্রে ঢাকায় চলাচল করা কোনো গাড়ি জেলার সীমারেখার বাইরে যেতে পারবে না। এসময় তিনি পরিবহনগুলোকে অবশ্যই অর্ধেক আসন খালি রেখে নতুন সমন্বয় করা ভাড়ায় চলতে হবে বলেও জানান।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সোমবার সকালে ময়মনসিংহ সড়ক জোন, বিআরটিএ ও বিআরটিসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। নিজের সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় যুক্ত হয়েছিলেন।
এর আগে, দিনের শুরুতে, শুধুমাত্র মহানগরগুলোতে গণপরিবহন চলাচল পুনরায় চালু করার ব্যাপারে সুপারিশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অবশ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এবিএম খুরশীদ আন্তঃজেলা বাস চলাচল এখনই চালু না করার পরামর্শ দিয়েছেন।
করোনায় আরও ৬৫ জনের মৃত্যু
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ নিয়ে দেশে করোনায় প্রাণ হারালেন মোট ১১ হাজার ৬৪৪ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণঘাতী ভাইরাসটি ধরা পড়েছে ১ হাজার ৭৩৯ জনের শরীরে।
মৃতদের মধ্যে পুরুষ ৪২ জন ও নারী ২৩ জন। ৬৫ জনের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৪৫ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ১৫ জন ও পাঁচজন বাসায় মারা যান।
২৪ ঘণ্টায় ১৯ হাজার ৪৩১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে । নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ৮.৯৫ শতাংশ।
এ নিয়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৬৮২ জন।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ৩ হাজার ৮৩৪ জন। এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৬ লাখ ৯১ হাজার ১৬২ জন।
এর আগে ২ মে (গতকাল) দেশে করোনায় ৬৯ জন মারা যান, আর নতুন করে শনাক্ত হয় ১ হাজার ৩৫৯ জন।
কিছুদিন পর দেশে ভারতীয় স্ট্রেইন বিষয়ে জানা যাবে
দেশে করোনাভাইরাসের ভারতীয় স্ট্রেইন এসেছে কি না, তা আরও কিছুদিন পর জানা যাবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম।
সোমবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘ভারতফেরত যাদের করোনা পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে, তাদের নমুনা সংগ্রহ করে জিনোম সিকুয়েন্সিং করা হচ্ছে। জিনোম সিকুয়েন্সিং করতে কিছুটা সময় লাগে। আমরা রিপোর্ট পাওয়ামাত্র জানাব, ভারতীয় ভেরিয়েন্ট দেশে এসেছে কি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংক্রমণের হার কমেছে। এতে করে আত্মতুষ্টি বা করোনা চলে গেছে ভাবার কোনো কারণ নেই। কারণ ঈদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শপিংমলে মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে; সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। অনেকে মাস্ক খুলে রেখে ইফতার করছেন। ঘরের বাইরে খাবার গ্রহণের অভ্যাস পরিহার করতে হবে। কোনো অবস্থায় যেন মাস্ক খোলা না হয়।’
নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘লকডাউন পরিস্থিতির কারণে যারা এক জেলা থেকে অন্য জেলায় গিয়ে আটকে পড়েছেন, তাদের জন্য (ভ্যাকসিনের) সেকেন্ড ডোজ নেওয়ার বিষয়টি সহজ করা হয়েছে। যাদের ভ্যাকসিন গ্রহণ করার পর ১৩ সপ্তাহ প্রায় শেষ হয়েছে, তারা সেকেন্ড ডোজ গ্রহণ করবেন। (যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, তারা) নেগেটিভ হওয়ার চার সপ্তাহ পর টিকা নেবেন।’
‘যারা ভ্যাকসিনের ফার্স্ট ডোজের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন, এখনো পাননি, নতুন ভ্যাকসিনের চালান আসলে তারা ভ্যাকসিন পাবেন,’ জানান তিনি।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তারা যদি সেকেন্ড ডোজ টিকা না পান তাহলে কী করা হবে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেয়নি। একটি টিকা গ্রহণ করার পর অন্য কোন টিকা গ্রহণ করা যাবে কি না, নিশ্চিত করা হয়নি।’
অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন শেষ পর্যন্ত না পাওয়া গেলে কী করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করব। আমরা জানি ভ্যাকসিন নিয়ে রাজনীতি আছে, ডিপ্লোমেসি আছে; তারপরও মানবতার জয়গান হয়। শেষ পর্যন্ত টিকা পাওয়ার আস্থা রয়েছে।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯২০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ