কঠোর শর্তসাপেক্ষে আন্তর্জাতিক ৩৮টি দেশে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। আজ (১ মে) থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সমূহ চালুর জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। এদিকে ঈদ সামনে রেখে গণপরিবহন চালুর ব্যাপারে সরকার চিন্তা করছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর অনুমতি
পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত শনিবার (১ মে) থেকে বিশেষ শর্তসাপেক্ষে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। আজ (১ মে) থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সমূহ চালুর জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। তবে প্রজ্ঞাপনে ৩৮টি দেশের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে এসব দেশ হতে আগত যাত্রীদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১ মে থেকে বর্তমানে অতি ঝুকি ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচিত দেশসমূহ ব্যতীত বিশেষ শর্তসাপেক্ষে আন্তর্জাতিক কমার্শিয়াল ফ্লাইটগুলো পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, বর্তমানে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার বিবেচনায় ৩৮টি দেশে গমনাগমনের ওপর বিশেষ শর্ত আরোপ করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পক্ষ হতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো চালুর জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে এয়ার বাবল ফ্লাইটগুলো স্থগিত রাখা হয়েছে এবং অতি ঝুঁকিপুর্ণ দেশসমূহের সঙ্গে সাময়িক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এবং ঝুকিপূর্ণ দেশগুলো হতে আগত যাত্রীদের ১৪ দিনের ‘প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন’ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, তালিকা বহির্ভূত দেশগুলো থেকে আগত যাত্রীদের পিসিআর নেগেটিভ সনদ আনা সাপেক্ষে ১৪ দিন ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ কঠোরভাবে পালনের জন্য বলা হয়েছে। ব্যতিক্রম হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশ (কাতার, বাহরাইন ও কুয়েত) ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে চলমান তিন দিনের প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করবেন।
পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বাকি ১১ দিন হোম কোয়ারেন্টাইন অথবা আইসোলেশন থাকার জন্য বিবেচিত হবেন।
যে ৩৮ দেশে পুনরায় ফ্লাইট চালুর অনুমতি দেয়া হয়েছে সেগুলোকে ‘এ’ ও ‘বি’ দুটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। ‘গ্রুপ-এ’তে থাকা বাংলাদেশের নাগরিকরা কেবলমাত্র দূতাবাসের বিশেষ অনুমতি নিয়ে দেশে ফিরতে পারবেন। গ্রুপ ‘বি’- এর দেশগুলো থেকে আগত যাত্রীরা দেশে ফিরে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন সম্পন্ন করতে হবে।
‘গ্রুপ-এ’তে রয়েছে ১২টি দেশ। এগুলো হচ্ছে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, সাইপ্রাস, জর্জিয়া, ভারত, ইরান, মঙ্গোলিয়া, ওমান, সাউথ আফ্রিকা এবং তিউনিসিয়া।
‘গ্রুপ-বি’তে রয়েছে ২৬টি দেশ। এগুলো হচ্ছে- অস্ট্রিয়া, আজারবাইজান, বাহরাইন, বেলজিয়াম, চিলি, ক্রোয়েশিয়া, এস্তোনিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হাঙ্গেরি, ইরাক, কুয়েত, ইতালি, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, নেদারল্যান্ড, প্যারাগুয়ে, পেরু, কাতার, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক ও উরুগুয়ে।
এই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আটকে পরা অভিবাসী যাত্রীরা নিজ নিজ গন্তব্য বা কর্মস্থলে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন— উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্যবিধি ও অন্যান্য শর্তগুলো কঠোরভাবে বাস্তবায়ন ও নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করা হয়।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশে চলমান সরকারি বিধিনিষেধের সঙ্গে সমন্বয় করে আন্তর্জাতিক রুটের নিয়মিত ফ্লাইট ৫ মে পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) বেবিচক এই সিদ্ধান্ত নেয়।
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ৪ দেশের ওপর সিঙ্গাপুরের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা
করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশসহ চার দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সিঙ্গাপুর। শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) সিঙ্গাপুরের করোনাভাইরাস বিষয়ক মাল্টি-মন্ত্রণালয় টাস্ক ফোর্স এ তথ্য জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার নাগরিকসহ যারা এই দেশগুলোতে গত দুই সপ্তাহের মধ্যে অবস্থান করেছেন, তাদেরকে সিঙ্গাপুরে প্রবেশ বা দেশটির ভেতর দিয়ে যাতায়াতের অনুমতি দেওয়া হবে না।
শুক্রবার সিঙ্গাপুরের শিক্ষামন্ত্রী লরেন্স ওং এক ঘোষণায় জানান, শনিবার স্থানীয় সময় ১১টা ৫৯ মিনিট থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। যারা ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দেশটিতে প্রবেশের আগাম অনুমোদন পেয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম কার্যকর হবে।
ওই ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে সিঙ্গাপুরের করোনাভাইরাস বিষয়ক মাল্টি-মন্ত্রণালয় টাস্কফোর্সের সহ-সভাপতি ওয়াং আরও জানান, সিঙ্গাপুরের নাগরিকদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় (এমওএইচ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সম্প্রতি বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ওয়াং বলেন, ‘আমরা সর্বশেষ কিছু সীমান্ত ব্যবস্থা ঘোষণা করেছিলাম, দুর্ভাগ্যক্রমে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি সংক্রমণটি ভারত ছাড়িয়ে আশেপাশের দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে।’
এর আগে, ভারতের ওপর একইরকমের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে সিঙ্গাপুর। বলা হয়েছিল, ভারতের নাগরিকসহ গত দুই সপ্তাহের মধ্যে যারা ভারতে অবস্থান করেছেন, তাদেরকে সিঙ্গাপুরে প্রবেশ বা দেশটির ভেতর দিয়ে যাতায়াতের অনুমতি দেওয়া হবে না।
ঈদের আগে গণপরিবহন চালুর কথা ভাবছে সরকার
চলমান লকডাউনের শেষে গণপরিবহন চালুর চিন্তাভাবনা করছে সরকার। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, লকডাউনের পর জনস্বার্থের কথা বিবেচনায় রেখে সরকার ঈদ সামনে রেখে গণপরিবহন চালুর ব্যাপারে চিন্তা করছে।
আজ শনিবার সকালে বরিশাল সড়ক জোন, বিআরটিসি ও বিআরটিএর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা জানান। তিনি তার সরকারি বাসভবন থেকে সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন। তিনি লকডাউন শিথিল হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে।
ওবায়দুল কাদের জানান, জনস্বার্থ বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শর্তসাপেক্ষে সরকার গণপরিবহন চালুর চিন্তাভাবনা করছে। গণপরিবহনে অর্ধেক আসন খালি রেখে যে ভাড়া নির্ধারণ ছিল সেই ভাড়ার অতিরিক্ত নিলে শাস্তির আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে সরকার ৫ থেকে ১১ এপ্রিল একগুচ্ছ বিধিনিষেধের আওতায় লকডাউন দেয়। এরপর এর মেয়াদ ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
পরে বিধিনিষেধ আরো কঠোর করে ১৪ এপ্রিল থেকে জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়, যা সর্বাত্মক লকডাউন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এই লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে ২৮ এপ্রিল করা হয়। এ সময় গণপরিবহনও বন্ধ রয়েছে।
পরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় চলমান বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। আগামী ৫ মে পর্যন্ত এ বিধিনিষেধ বহাল থাকবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৫১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ