
মার্কিন কোম্পানি মডার্নার ভ্যাকসিনকে জরুরি অনুমোদনের তালিকাভুক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থার বিবৃতিতে শুক্রবার (৩০এপ্রিল) বলা হয়েছে, ‘এর উদ্দেশ্য হল গুরুত্ব অনুযায়ী ওষুধ, টিকাকে যত দ্রুত সম্ভব সহজলভ্য করা।
বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মডার্নার টিকাটিসহ এখন পর্যন্ত মোট পাঁচটি টিকা জরুরি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেল। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর জরুরি ব্যবহারের জন্য মডার্নার টিকাটির অনুমোদন দিয়েছিল। এরপর গত ৬ জানুয়ারি ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি ইউরোপজুড়ে মডার্নার টিকাটি বাজারজাতকরণ বৈধ ঘোষণা করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাদের স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভাইজরি গ্রুপ অব এক্সপার্টস অন ইমুনাইজেশন (এসএজিই) পরীক্ষা করে দেখেছে, মডার্নার টিকাটি ৯৪ দশমিক ১ শতাংশ কার্যকর।
অন্য যেসব টিকা জরুরি ব্যবহারের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি অনুমোদন পেয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ফাইজার-বায়োএনটেক, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া ও জ্যানসেনের টিকা। গত বৃহস্পতিবার মডার্না কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা ২০২২ সাল নাগাদ ৩০০ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদনের আশা করছে। এক্ষেত্রে নতুন তহবিল জোগানোর প্রতিশ্রুতি ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে তাদের উৎপাদন কারখানাগুলোয় সরবরাহ বাড়াবে।
এর আগে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মডার্নার টিকা বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর বলে এক মার্কিন গবেষণায় দেখা গেছে। নানা রোগের কারণে বয়স্ক ব্যক্তিদের করোনায় আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। তবে মডার্নার টিকাটি বয়স্ক ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
টিকাটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়ে মডার্না জানিয়েছে, এটি বেশ সহনীয়। প্রথম ডোজ প্রয়োগের পর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অবসাদ, মাংসপেশিতে ব্যথা, গিঁটে ব্যথা, মাথাব্যথা এবং ইনজেকশন যে জায়গায় প্রয়োগ করা হয়, সেখানে ব্যথা ও লালচে ভাব দেখা গেছে। টিকাটির দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগের পর এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মাত্রা কিছুটা বেড়েছে। এ ছাড়া গুরুতর কিংবা নতুন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বুধবার এ গবেষণা প্রকাশ করে মার্কিন সরকার। গবেষণায় দেখা গেছে, ৬৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী ব্যক্তিরা টিকার সব ডোজ নিলে কোভিড-১৯ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি ৯৪ শতাংশ কমে যায়। সিডিসি সূত্রে আরও জানা গেছে, এক ডোজ নেওয়ার পর সেই ঝুঁকি কমে ৬৪ শতাংশ।
মডার্নার টিকা ফাইজারের টিকা থেকে অন্তত দুটি ক্ষেত্রে সুবিধা দেবে। মডার্নার টিকা সংরক্ষণ বা সরবরাহের জন্য চরম শীতল অবস্থা বজায় রাখতে হয় না। অতি শীতল অবস্থার জন্য এর সরবরাহ ও মজুতের জন্য বিশেষ রেফ্রিজারেটরের প্রয়োজন হয় না। ফলে সহজেই যেকোনো স্থানে তা সরবরাহ করা যাবে এবং সংরক্ষণ করা যাবে নিয়মিত রেফ্রিজারেটরে। মডার্নার টিকা ব্যবহারের আগে কোনো মিশ্রণেরও প্রয়োজন হয় না।
এই টিকা উদ্ভাবনে মডার্নাকে সহযোগিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ। দেশটিতে ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর ওপর টিকার পরীক্ষা চালানো হয়েছে, যাদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত বেশি ঝুঁকিতে থাকা বয়স্ক ব্যক্তিরাও রয়েছেন।
গত বছরের মার্চে প্রথম কোম্পানি হিসেবে মানবদেহে নতুন টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসভিত্তিক জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মডার্না। এ টিকা ম্যাসেঞ্জার আরএনএ (এমআরএনএ) ভিত্তিক, যা ভাইরাসের জেনেটিক উপাদান বহন করে এবং শরীরের প্রতিরোধব্যবস্থাকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে শেখায়।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩০৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ