ইসরায়েলে করোনায় দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা শূন্যে নেমে এসেছে। দেশটিতে গত ১০ মাসে এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটল। দেশজুড়ে দ্রুত টিকাদান কর্মসূচি গ্রহণের ফলে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় এমন সফলতা দেখাল ইসরায়েল। এদিকে রক্তজমাট বাধার বিরল সমস্যার ঝুঁকি বিবেচনায় প্রায় ১১ দিন বন্ধ থাকার পর যুক্তরাষ্ট্রের ফের শুরু হচ্ছে জনসন অ্যান্ড জনসনের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা ব্যবহার। বিশেষজ্ঞ প্যানেলের পরামর্শক্রমে এর ওপর থেকে স্থগিতাদেশ তুলে নিয়েছেন মার্কিন নীতিনির্ধারকরা।
করোনায় সফল ইসরায়েল
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, গত বছরের জুনের শেষে করোনায় দৈনিক মৃত্যু সর্বশেষ শূন্যে নেমে এসেছিল ইসরায়েলে। এ বছরের জানুয়ারিতে সংক্রমণের মাত্রা সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে ইসরায়েলে। এরপর সংক্রমণের মাত্রা কমতে থাকলে এক মাস পর লকডাউন কড়াকড়ি শিথিল করা শুরু করে দেশটির সরকার। পাশাপাশি দেশজুড়ে মানুষকে করোনার টিকা দেওয়া শুরু করে।
বিশ্বের মধ্যে ইসরায়েলে টিকাদানের হার সর্বোচ্চ। গত বৃহস্পতিবার ৫০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার মাইলফলক স্পর্শ করে দেশটি। এর ফলে মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষকে টিকা দিল ইসরায়েল।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ৯০ লাখ জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশের বেশি মানুষকে করোনার টিকার দুই ডোজই দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইউলি এডেলস্টাইন গতকাল শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) বলেন, ‘ইসরায়েলি জনগণ ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য এটা অভাবনীয় সাফল্য। একসঙ্গে আমরা করোনাভাইরাস নির্মূল করছি।’গত সপ্তাহে ইসরায়েল সবচেয়ে বড় হাসপাতাল সেবা মেডিকেল সেন্টারের পরিচালক ইয়াল লেশাম বলেন, দেশ এখন শক্তিশালী রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জনের কাছাকাছি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসংখ্যার বড় অংশের মধ্যে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারলে সুরক্ষা তৈরি হয় এবং ভাইরাস সংক্রমণ বন্ধ হতে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শক্ত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য জনসংখ্যার ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া প্রয়োজন।
ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজার–বায়োএনটেকের তৈরি টিকা ব্যবহার করে ইসরায়েল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এক গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ফাইজারের টিকার দুই ডোজ নেওয়ার ফলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৯৫ দশমিক ৮ শতাংশ কমে যায়। প্রাপ্তবয়স্কদের পর এবার ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে ৮ লাখ ৩৭ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৬ হাজার ৩৪৬ জন।
টিকার ওপর স্থগিতাদেশ তুলে নিল যুক্তরাষ্ট্র
১১ দিন বন্ধ থাকার পর যুক্তরাষ্ট্রে তুলে নেওয়া হয়েছে জনসন অ্যান্ড জনসনের তৈরি কভিড টিকার ওপর স্থগিতাদেশ। ‘রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি’ বিবেচনায় বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয়েছে টিকার ব্যবহার। মার্কিন নীতি-নির্ধারকদের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে বিবিসি। ৮০ লাখ টিকা গ্রহণকারীর মধ্যে রক্ষ জমাট বাঁধার সমস্যায় পড়েছেন মাত্র ৫০ জন। এর আগে, ইউরোপের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ভ্যাকসিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। ইউরোপীয় নীতি-নির্ধারকরা চলতি মাসে অ্যাস্ট্রাজেনেকা কভিড-১৯ টিকার সঙ্গে জনসনের টিকার রক্ত জমাট সমস্যার মিল খুঁজে পান। তবে এর উপকার অনেক বেশি বলে জানিয়েছে তারা।
শুক্রবার বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) এবং খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) সিডিসির পরামর্শক প্যানেলের নির্দেশনা মেনে স্থগিতাদেশ তুলে নেয়। প্যানেলের সদস্যরা ১৮ বয়সোর্ধ্বদের জনসনের টিকা দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছিলেন।
এদিকে শুক্রবার নতুনভাবে টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে ৯ জনের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার খবর পাওয়া গেছে। এর আগে আরো ছয়জন একই সমস্যার শিকার হয়েছিলেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভুক্তভোগীরা সবাই নারী এবং তাদের বয়স ৫০ বছরের নিচে। এদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন, সাতজন এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া কিছু পুরুষের মধ্যেও রক্ত জমাট বাঁধার বিষয়টি দেখা গেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১২৪৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ