করোনাভাইরাসের প্রকোপ ও মৃত্যু উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এদিকে বাংলাদেশের করোনাভাইরাস শনাক্তের ক্ষেত্রে ৮১ ভাগই দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট বলে যে দাবি করা হয়েছিল সরকারের একটি গবেষণা সংস্থা তার সাথে দ্বিমত প্রকাশ করছে।
বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এম এম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের মধ্যে ৮১ ভাগই দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে যে তথ্য দেয়া হয়েছিল সেটি ছিল অসম্পূর্ণ। গত ৭ এপ্রিল আইসিডিডিআর,বি তার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক খবরে জানিয়েছে, তারা ডিসেম্বর মাস থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং আইইডিসিআরের সাথে মিলে করোনাভাইরাসের বিভিন্ন ভ্যারিয়ান্টের ওপর নজরদারি শুরু করে।
দুই সপ্তাহ আগে আইসিডিডিআর,বি বলছে, দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব বাংলাদেশে ভাইরাসের প্রসারের ক্ষেত্রে নাটকীয় পরিবর্তন আনে। মার্চের চতুর্থ সপ্তাহেই দেখা যায়, দেশে শনাক্ত করোনাভাইরাসের ধরনগুলোর মধ্যে এখন ৮১ ভাগই দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট।
আইইডিসিআর’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলমগীর বলেন, তখন ১১০টি নমুনা সিকোয়েন্স করে বলা হয়েছিল ৮১ ভাগ দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট। কিন্তু পরে সবমিলিয়ে ৫৫০টির বেশি সিকোয়েন্স করা হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট প্রভাব বিস্তার করেছে, যেটি ২০ থেকে ৩০ ভাগ। তবে এ বিষয়ে আইসিডিডিআর,বির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ড. আলমগীর বলেন, আইইডিসিআর, চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন এবং আইসিডিডিআর,বি- পরস্পরের সাথে তথ্য আদান প্রদান করে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইউকে ভ্যারিয়েন্ট অধিক সংক্রমণশীল। বিশেষজ্ঞরা একটি বিষয়ে একমত হয়েছেন যে দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবের কারণেই বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ দ্রুত হয়েছে।
করোনাভাইরাসের সিকোয়েন্সিং এবং ভ্যারিয়েন্ট নির্ণয়ের ক্ষেত্রে যে প্রতিষ্ঠানটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে সেটি হচ্ছে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন।
চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. সমীর কুমার সাহা বলেন, এক দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টের প্রভাব বেশি হওয়া এবং অন্য দিকে স্বাস্থ্য বিধি না মানার প্রবণতা কারণেই বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। যেকোনো ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং টিকা দেয়া গুরুত্বপূর্ণ।
ড. আলমগীর বলেন, টিকা যদি আপনাকে শতকরা ১০ ভাগও প্রোটেকশন দেয় তাও টিকা নেয়া জরুরি।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এপ্রিল মাসের শুরু থেকে বাংলাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে গেল কেন?
গবেষকরা বলছেন, সংক্রমণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টের প্রভাব বেশি থাকার কারণেই বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে কি-না এ ব্যাপারে সরাসরি কোনো উত্তর নেই গবেষকদের কাছে।
ভ্যাকসিন স্বল্পতায় বাংলাদেশ
শিগগিরই ভ্যাকসিন স্বল্পতায় পড়তে যাচ্ছে দেশ। প্রথম ডোজ যারা নিয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করার উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বস্তির বিষয় হলো এটি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের হাতে সময় আছে এক মাসেরও বেশি।
সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদনে বিনিয়োগ করে ভ্যাকসিনপ্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশে। ৩ কোটি টিকা পাওয়ার কথা থাকলেও মিলেছে এক কোটি। এর মধ্যে প্রায় ৭৫ লাখ ব্যবহার হয়ে গেছে। বড়জোর সপ্তাহ দুয়েক, এরপর আর ভ্যাকসিন থাকবে না হাতে। অথচ কোভিডে এ পর্যন্ত সবচেয়ে মর্মান্তিক মাস পার করছে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় দ্বিতীয় প্রজন্মের গবেষণা পর্যায়ে থাকা ভ্যাকসিন ট্রায়ালের তাগিদ দিলেন ঔষধ বিশেষজ্ঞ ড. সাইদুর রহমান।
প্রথম ডোজ নেয়া সবার দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিতে যে পরিমাণ ভ্যাকসিন প্রয়োজন, অন্তত সেটুকু আগে নিশ্চিত করার তাগিদ দিলেন এই বিশেষজ্ঞ। এছাড়া চীন ও রাশিয়া থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের সরকারি তৎপরতা দ্রুত যেন আলোর মুখ দেখে সেই প্রত্যাশা ড. সাইদুর রহমানের।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা মোজাহেরুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ভারত ছাড়াও রাশিয়া বা চীন থেকে সরকার এখন যে টিকা আনার চেষ্টা করছে, তা আরও আগেই করা উচিত ছিল। আমাদের যখন চীন টিকা দিতে চেয়েছিল, তখন তাদের সঙ্গে চুক্তি করতে পারতাম, গবেষণায়ও অংশ নিতে পারতাম। তিনি বলেন, সব পথ খোলা রাখা উচিত ছিল। সেটা কাজে লাগালে আজকে যে সমস্যাটা দেখা দিয়েছে, তা এড়ানো যেত। জনগণ আশ্বস্ত থাকত। মোজাহেরুল হক আরও বলেন, দেশের সাড়ে ১২ কোটি মানুষের জন্য টিকা লাগবে ২৫ কোটি ডোজ। সরকারকে টিকা নিশ্চিত করতে যত রকমের উপায় আছে, তা খুঁজে নিতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১২৩৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ