মহামারি করোনায় বিপর্যস্ত গোটা দেশ। একদিকে করোনার ছুবলে মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, অন্যদিকে সারাদেশে লকডাউনের কারণে মানুষের জীবন জীবিকায় নেমে এসেছে জটিলতা। এমন সময়েও আওয়ামী লীগ নেতাদের দৌরাত্মা কমেনি। কমেনি তাদের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সহিংসতা। থানা পুলিশের সামনেই নিজেদের দাপট দেখাচ্ছে। এমনকি এলোপাথাড়ি মারধর করে খুন করার ঘটনাও ঘটাচ্ছে। এমনি এক ঘটনা ঘটেছে চুয়াডাঙ্গায়।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম থানার সামনেই ইস্রাফিল মোল্লা (৮০) নামে এক বৃদ্ধকে পিটিয়ে মেরেছেন। আজ শুক্রবার(১৬ এপ্রিল) দুপুরে দামুড়হুদা মডেল থানায় এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে জেলাজুড়ে সব মহলেই তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
এ ঘটনায় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ। আটক শহিদুল ইসলাম দামুড়হুদা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, দামুড়হুদা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি দামুড়হুদা বাজারপাড়ার আশর আলীর ছেলে।
নিহত বৃদ্ধ ইসরাফিল হোসেন মণ্ডল উপজেলার পীরপুরকুল্লা গ্রামের মৃত জোনাব আলী মণ্ডলের ছেলে।
নিহত ইসরাফিল হোসেন মণ্ডলের ভাতিজা আল আমিন গণমাধ্যমকে জানান, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ মীমাংসার উদ্দেশে শুক্রবার দামুড়হুদা মডেল থানায় গিয়েছিলেন আমার চাচা বৃদ্ধ ইসরাফিল হোসেন (৮০) গং ও নজু মোল্লা গং। এ সময় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম থানায় উপস্থিত হন এবং নজু গংয়ের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু শেষমেশ বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় বেলা দেড়টার দিকে থানা থেকে বের হয়ে যান ইসরাফিল গং।
এতে ক্ষুব্ধ হন ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম। তিনি থানার বারান্দাতেই আমার চাচা বৃদ্ধ ইসরাফিল হোসেন মণ্ডলকে গালমন্দ করেন এবং ঘুষি মেরে আহত করেন। বৃদ্ধ ইসরাফিল হোসেন এ সময় ভাইস চেয়ারম্যানের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি তোমার বাপের বয়সী মানুষ, আমাকে তুমি মারছ কেন?’
এরপর বৃদ্ধ ইসরাফিল হোসেন মণ্ডল থানা থেকে বেরিয়ে যান। তিনি থানার গেটের বাইরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় ফের আক্রমণ করেন ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম। এ সময় তিনি বৃদ্ধ ইসরাফিল হোসেনকে কিল-ঘুষি মেরে ও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এতে বৃদ্ধ ইসরাফিল হোসেন গুরুতর আহত হন এবং মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
পরে তাকে উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত ডা. তানভির মো. আসিফ মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ বৃদ্ধ ইসরাফিল হোসেন মণ্ডলের লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল খালেক জানান, জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করা হলে শুক্রবার দুপুরে দু পক্ষ নিয়ে সালিস বৈঠকে বসা হয়। শান্তিপূর্ণভাবে সালিস শেষ হলে তারা থানার বাইরে বেরিয়ে পড়ে। থানার বাইরে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সামনে ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের সাথে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে বজলুর রশিদ পক্ষের লোকজন। এসময় শহিদুল ইসলাম ওই পক্ষের ইস্রাফিলকে ধাক্কা ও ঘুষি মারলে সে মাটিতে পড়ে যায়। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামকে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল খালেক বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনা বিষয়ে লোকজনকে সচেতন করার জন্য সরকার লকডাউনসহ বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করলেও দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে এবিষয়ে তেমন কোনো ভাবান্তর নেই। তারা তাদের দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এখনো নানারকমের সহিংসতা অব্যাহত রেখেছে। করোনায় মানুষ মারা যাচ্ছে, আওয়ামী সরকারের নেতাদের হাতেও মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের মানুষের নিকট এক ভয়ানক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
তারা বলেন, সরকারও এবিষয়ে কম যান না। তারাও তাদের রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য করোনা মহামারিকে ব্যবহার করছে। হেফাজতে ইসলামকে শায়েস্তা করার জন্য দেশে লকডাউনের আয়োজন করে রেখেছে, যাতে তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা সহজেই বাস্তবায়ন করতে পারে। দেশের মানুষ, করোনা মহামারি এসব নিয়ে তেমন একটা ভাবিত নন তারা। পৃথিবীর এমন বিপর্যয়ও ক্ষমতাসীন দল তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে, এরচে ভয়ানক কিছু হতে পারে না।
তারা মনে করেন, দেশে করোনার মতোই গলা টিপে ধরে আছে ক্ষমতাসীন দল ও তাদের নেতাকর্মীরা। নিজেদের কথার একটু বাইরে কেউ গেলেই খুন করার মত ঘটনা ঘটাচ্ছে। তাও থানা পুলিশের সামনেই। দেশ ও দেশের মানুষেরা করোনা ও আওয়ামী লীগের কারণে এক ভয়াবহ সময় পার করছে বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১২৬
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ