করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সরকার গণপরিবহনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা দিয়েছে। তবে সরকারি ও বেসরকারি অফিস-আদালত, কলকারখানা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ না করে বা গণপরিবহনের সংখ্যা না বাড়িয়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। বুধবার (৩১ মার্চ) প্রথম দিনেই চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অফিসমুখী যাত্রীরা। বাস না পেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন অনেকে।
করোনা সংক্রমণ রোধে গত সোমবার (২৯ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১৮ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে বলা হয়, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের অধিক যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। পরে মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগ যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত বুধবার থেকে কার্যকরের কথা জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
পুরান ঢাকা, মিরপুর, উত্তরা, সাভার, গাজীপুর রুটের বাসসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, গণপরিবহনে অর্ধেকের বেশি যাত্রী তোলা হচ্ছে। অনেক বাসেই যাত্রীরা পাশাপাশি বসছেন। অনেক বাসে আবার অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার পর অতিরিক্ত আরও পাঁচ থেকে সাতজন যাত্রী তোলা হচ্ছে। কিন্তু অতিরিক্ত ৬০ শতাংশ ভাড়া ঠিকই নেওয়া হচ্ছে। অনেক বাসে আবার ৬০ শতাংশ নয়, দ্বিগুন ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
সকাল সাড়ে নয়টার দিকে পুরান ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাসস্ট্যান্ড থেকে মিরপুর রুটের তানজিল পরিবহনের বাসে উঠেছিলেন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবী ফয়সাল রহমান। ফার্মগেটে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুরান ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাসস্ট্যান্ড থেকে মিরপুর, উত্তরা, সাভার, গাজীপুর রুটের বাসগুলোতে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক যাত্রী দেখা গেছে। অনেক বাসে আসনে যাত্রীদের পাশাপাশি বসে থাকতে দেখা গেছে।
এসব বাসের মধ্যে কয়েকটি বাসে যাত্রীরা প্রতিবাদ জানান। প্রতিবাদের মুখে অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার পর বাসের দরজা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন চালকের সহকারীরা।
অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার কারণে যাত্রীরা কিছুটা বিড়ম্বনায়ও পড়েন। বাস পেতে যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। বাস না পেয়ে অনেকে রিকশায়ও ওঠেন। তবে সে জন্যও দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হয়েছে। শ্যামলী শিশুমেলা থেকে ফার্মগেটে কর্মস্থলে আসছিলেন রাসেল আহমেদ। তিনি বলেন, বাস না পেয়ে রিকশায় অতিরিক্ত ২০ টাকা ভাড়া দিয়ে তাঁকে আসতে হয়েছে।
রেজাউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, যাত্রাবাড়ী থেকে কোনো বাসের দরজা খুলছিল না। প্রতিটি বাসের আসন ভর্তি। গতবার করোনায় সব বন্ধ ছিল। পরে বাস চালু হলে পাবলিক বাসে দুই সিটে একজন করে গেছে। কোনো সমস্যা হয়নি। এবার সবকিছু খোলা রেখে এই নিয়ম প্রতিদিন দুর্ভোগ বাড়াবে। তিনি আরও বলেন, সকালে যাত্রাবাড়ীতে শত শত মানুষ অপেক্ষা করেছে বাসের জন্য। তার জিজ্ঞাসা, এসব মানুষ কীভাবে অফিসে যাবে? ক্ষোভের সঙ্গে রেজাউর রহমান বলেন, ‘বাসমালিকেরা তো ঠিকই টাকা পাচ্ছেন। সমস্যা আমার মতো সাধারণ মানুষদের।’
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও বিশ্ব রোড, রামপুরার বিভিন্ন বাসস্টপ ও মোড়ে ছিল অপেক্ষমাণ যাত্রীদের ভিড়। বেশির ভাগ বাসের আসন পূর্ণ ছিল। বাসগুলোয় আসন পূর্ণ হয়ে গেলে চালকের সহকারীরা গেট লাগিয়ে দিচ্ছিলেন। তবে বাসভাড়া নিচ্ছিল ৬০ শতাংশ বেশি।
এদিকে বাস না পেয়ে অনেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশায় করে অফিসে যেতে বাধ্য হন। এ সময় মানুষের চাহিদার চাপে বেড়ে যায় এসব বাহনের ভাড়াও। কিছু না পেয়ে অনেককে হেঁটে গন্তব্যের দিকে যেতে দেখা যায়।
নীলাচল পরিবহনের হেলপার সাগর বলেন, আমরা সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়েছি। তবে লোকাল কিছু যাত্রী নিলে সেক্ষেত্রে এই হিসাব রাখা যায় না, তখন একটু বেশিই ভাড়া নিচ্ছি। তবে আমার ওয়েবিলের হিসাব অনুযায়ী যারা যাচ্ছে তাদের কাছ থেকে ৬০ শতাংশ ভাড়াই বাড়তি নিচ্ছি, বেশি নিচ্ছি না। নইলে আমার জরিমানা হবে।
যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছেন, সবকিছু খোলা রেখে বাসে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। এমনিতেই অফিসে যাওয়ার সময় ও অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময় রাজধানীতে পরিবহন সংকট দেখা দেয়, এর উপর অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করলে সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করবে। কারণ গণপরিবহন তো বাড়েনি।
যাত্রীদের এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুরান ঢাকার বিভিন্ন রুটের বাসের সুপারভাইজাররা বলেছেন, বাসমালিকদের পক্ষ থেকে চালক-সহকারীদের জন্য মাস্ক ও যাত্রীদের জন্য হ্যান্ডস্যানিটাইজার সরবরাহ করা হয়েছে। অর্ধেক যাত্রী ও নির্ধারিত ভাড়াও নেওয়ার নির্দেশনা আছে।
দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে ২০২০ সালের ২১ মার্চ থেকে সবধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয় সরকার। দুই মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর গেলো বছরের ১ জুন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্ত সাপেক্ষে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। তখন ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়।
দীর্ঘদিন চলার পর করোনা সংক্রমণ একটু কমে এলে গত সেপ্টেম্বর মাসে শতভাগ আসনে যাত্রী নিয়ে চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। তখন থেকে মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) পর্যন্ত শতভাগ আসনেই যাত্রী নিয়ে চলছিলো গণপরিবহন।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭৩০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ