ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর চিঠি দিয়েছে নিউইয়োর্ক ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সাংবাদিক সুরক্ষা কমিটি সিপিজে। একইসাথে চিঠিতে লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যুবরণ ও কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের নির্যাতন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল সোমবার (২২ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১টায় ইমেইলের মাধ্যমে এ চিঠি পাঠানো হয়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের আহ্বান জানিয়ে লিখেছেন, আমরা আপনাকে এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যা লেখক সাংবাদিকদের কারাবন্দী করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং তাদের মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত, তা বাতিল করার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাই।
চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস, একটি স্বাধীন বেসরকারী সংস্থা, যা বিশ্বজুড়ে চ্যাম্পিয়নরা প্রেস মুক্তির দাবি জানায়, লেখক মোশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যুদণ্ড এবং কারাগারে কার্টুনিস্ট কবির কিশোরের অত্যাচার স্বাধীনভাবে তদন্তের জন্য আপনার নির্দেশের আহ্বান জানাচ্ছি।
চিঠিতে লেখক মুশতাক আহমেদ ও আহমেদ কিশোরের নির্যাতন বিষয়ে বলা হয়েছে, লেখক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার মুশতাক আহমেদ ২৫ শে ফেব্রুয়ারী ২০২১ সালে কারাগারে বন্দী অবস্থায় মারা গিয়েছিলেন। তাকে প্রাথমিকভাবে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন -৩ কর্মকর্তারা ৪ মে, ২০২০ সালে আটক করেছিলেন এবং মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ আগে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাকে অভিযুক্ত করা হয়নি। এদিকে ২০২০ সালের ২ শে মে আহমেদ কবির কিশোরকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন -৩ দ্বারা আটক করা হয়েছিল।
আইনে বলা আছে যে, মুশতাক আহমেদ ও কিশোরের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন ৬০ দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে। কিন্তু ২৪৫ দিন পার হয়ে গেলেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি। তারা কারাগারে ১০ মাস সময়কাল বন্দী ছিলেন এবং তারা উভয়ই ছয়বার জামিন চেয়েও তা পাননি।
কারাগারে বন্দী থাকার সময় তাদের অমানবিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল। কিশোর বিভিন্ন অসুস্থতাজনিত সমস্যায় ভুগলেও তার যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। যার ফলে তিনি হাইকোর্টে অভিযোগও করেছেন। এই অভিযোগগুলি তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত করা উচিত এবং দোষীদের দায়ী করা উচিত।
কিশোরের বিরুদ্ধে আনীত সমস্ত অভিযোগ বাতিলের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, আমরা কিশোরের সাম্প্রতিক জামিনে মুক্তিকে স্বাগত জানালেও কর্তৃপক্ষকে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বাতিল করার আহ্বান জানাই।
বাংলাদেশের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নির্বিচারে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে চিঠিতে অভিযোগ করা হয়। মুশতাক আহমেদ প্রায়শই ফেসবুকে রাজনৈতিক মন্তব্য লিখতেন এবং মহামারী করোনা ভাইরাস নিয়ে সরকারের পরিচালনার সমালোচনা করেছিলেন। আর কিশোর একজন রাজনৈতিক কার্টুনিস্ট যিনি এমন কার্টুন আঁকেন যা সরকারের মহামারী পরিচালনার সমালোচনা করেছিল। উভয়কেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় অভিযুক্ত করা হয়েছিল।
চিঠিতে বলা হয়, সমালোচনা, মন্তব্য এবং কার্টুন অপরাধমূলক কাজ নয়। তাদের কারাগারে নেওয়া উচিত হয়নি এবং তাদের অবশ্যই আটকে রেখে মৃত্যুর দিকে পরিচালিত করা উচিত হয়নি।
চিঠিতে বলা হয়, ২০২০ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় অন্তত ছয়জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে সিপিজের কাছে তথ্য রয়েছে। প্রেসের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার এই কণ্ঠরোধ বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে কলঙ্কিত করেছে, সরকারের সমালোচনা সম্ভবত এতটা হওয়া উচিতও নয়।
লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু ও কিশোরের নির্যাতনের তদন্ত দাবি করে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে, আপনার সরকারকে মুশতাক আহমেদ ও কিশোরের নির্যাতনের যথাযথ তদন্ত করতে এবং মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী কিনা তা নির্ধারণসহ তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের আহ্বান জানিয়ে পরিশেষে বলা হয়, আমরা মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষার জন্য এবং আমাদের সহকর্মী মুশতাক আহমেদের মতো অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আপনাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করার আহ্বান জানাচ্ছি।
এসডব্লিউ/কেএইচ/১৫৩১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ