মাদ্রাসার শিক্ষক কর্তৃক মাদ্রাসার ছাত্র ছাত্রীদের ধর্ষণের অভিযোগ প্রায় নিয়মিত খবরে দাঁড়িয়ে গেছে। মাদ্রাসার কোমলমতি শিশুদের এহেন ধর্ষণে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে দেশ। মাদ্রাসা ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের নিয়ে মানুষের মনেও জন্মেছে নেতিবাচক মনোভাব। এসব খবরের মধ্যে ইতিমধ্যে শোনা গেলো জামালপুরের মেলান্দহে ১১ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মিছবাহুল জান্নাত মহিলা মাদ্রাসার সুপার মুখলেসুর রহমানকে রবিবার (৮ মার্চ) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
শনিবার (৭ মার্চ) বিকেল ৫ টার দিকে মেলান্দহ বাজারের কাজিরপাড়ায় ওই সুপারকে আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা। আজ তাকে জেলহাজতে পাঠান আদালত। অভিযুক্ত মুখলেছুর রহমান মাহমুদপুর ইউনিয়নের ঠেংগেপাড়া গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে।
জানা গেছে, পৌরসভার নাগেরপাড়ায় অভিযুক্ত মোখলেসুর রহমানের বাসায় ২০১৭ সালে মহিলা আবাসিক মাদ্রাসা চালু করে। গত ৪ মার্চ মধ্যরাতে মাদ্রাসার সুপার মোখলেসুর রহমান আবাসিক কক্ষ থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া ১১ বছরের শিশুকে টেনে-হেঁচড়ে তার বিছানায় নিয়ে ধর্ষণ শেষে ধর্ষিতাকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখে। মাদ্রাসাটি নির্জন স্থানে থাকায় অন্যান্য ছাত্রীদের ডাক চিৎকারে কেও এগিয়ে আসার সুযোগ পায়নি।
পরদিন ১২টার দিকে অন্যান্য ছাত্রীদের সহায়তায় ধর্ষিতাসহ অন্যান্য শিশুরা পালিয়ে গেলে ঘটনাটি জানিজানি হয়। এ ঘটনার পর থেকেই লম্পট মোখলেসুর রহমান গা-ঢাকা দেয়। ৭ মার্চ বিকেল ৫টার দিকে মেলান্দহ বাজারের কাজিরপাড়ায় তাকে জনতা ঘেরাও করে গণধোলাই দেয়। খবর পেয়ে মোখলেসুর রহামনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে। রাতেই ধর্ষিতার বাবা লাল চাঁন বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন।
অফিসার ইনচার্জ মায়নুল ইসলাম জানান, ভিকটিমকে ডাক্তারি পরিক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। আসামি মোখলেসুর রহমানকে কোর্টে চালান দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ৮ মার্চ দুপুরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন মিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কওমি মাদ্রাসা বোর্ডের গ্রহণযোগ্য একজন আলেম মাওলানা আমানুল্লাহ কাশেমীর নাম ভাঙ্গিয়ে পরিক্ষার প্রোগ্রাম ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে কোন সংশয় না থাকে। এ ব্যাপারে মাওলানা আমানুল্লাহ কাশেমী বলেন, ওখানে মাদ্রাসা আছে এটাই জানি না। মোখলেসুর রহমান নামে কোন লোককেও আমি চিনি না। কওমি মাদ্রাসা পরিচালনা বোর্ডের আঞ্চলিক পরিচালক (জামালপুর) মাওলানা আব্দুল্লাহ প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মিছবাহুল জান্নাত নামে কোন মাদ্রাসা তাদের বোর্ডের তালিকায় নেই। এর দায় অন্য কেও নিবে না। এই ঘটনার সাথে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত।
এলাকাবাসি সিরাজুল ইসলাম (৬০), আ: রশিদ (৫০) সহ একাধিক নারী-পুরুষ জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগেও এই মাদ্রাসার শিক্ষিকাকেও ধর্ষণের ঘটনায় সালিশ করেছি। বিষয়টি থানা পর্যন্ত গড়িয়েছিল। তারা আরো জানান, বসবাস অযোগ্য এমন একটি নির্জন স্থানে ঝুপড়ি ঘরে মাদ্রাসার নাম ভাঙ্গিয়ে এখানে ধর্ষণের আস্তানা তৈরি করা হয়েছে। তারা প্রতারক মোখলেসের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন। এলাকাবাসি ও আলেম সমাজের সাথে কথা বলে জানা গেছে, একই অভিযোগে প্রতারক মোখলেসকে কিছুদিন আগেও জুতার মালা পরানো হয়েছিল। নারী-কেলেংকারির ঘটনায় তার স্ত্রী দু’সন্তান নিয়ে পিত্রালয়ে চলে গিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদ্রাসায় যে হারে শিশু ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে চলেছে এবিষয়ে সমাধানের জন্য সরকারকে ভাবতে হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এহেন ঘটনা একদিকে যেমন মেনে নেওয়া যায় না অন্যদিকে লোকসমাজেও ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও ছাত্রদের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব তৈরী হচ্ছে। তারা বলেন, ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়েও যদি সন্তান নিরাপদ না থাকে তবে অভিভাবকের মনে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিষয়ে আতঙ্ক তৈরি হবে। তারা এবিষয়ে সরকারের এগিয়ে আসার আহ্বান করেন।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২১৩৭
আপনার মতামত জানানঃ